• জাভা • নৌকোডুবি হয়ে আড়াইশো লোক ডুবে গেলেও তত বড় খবর হয় না। হবেই বা কেন? এরা তো সব উদ্বাস্তু। না, উদ্বাস্তুও নয়, এদের কারও কখনওই বাস্তু নামে কিছু ছিল না। ভেসে এসেছিল কোথাও থেকে, আবার ভেসেই পালাতে চেয়েছিল, মাঝপথে ডুবে গেল। কে কোন দেশের ঠিক নেই মোটে— শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া— তবে এটুকু ঠিক যে, যে দেশে তারা যেতে চাইছিল, সে দেশ তাদের কখনওই নিতে চায় না, এটা নিশ্চিত ভাবে জানা।
ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ উপকূলে জাভা দ্বীপ থেকে জেলেনৌকো ধরে রাশি রাশি মানুষ গিয়ে ওঠে কাছেরই ক্রিসমাস দ্বীপটিতে। সে রকমই যাচ্ছিল এ বারও। হঠাৎ নৌকো ডুবে সকলে তলিয়ে গেল, বেশির ভাগই মেয়েরা, মায়েরা, বাচ্চারা। শ-দেড়েক লোককে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে।
নতুন কিছু নয়। উত্তাল সমুদ্রপথে দূরত্ব কম নয়, হামেশা দুর্ঘটনা, জলমগ্ন মৃত্যু, তবু আশা, যদি বেঁচে এক বার দ্বীপে ওঠা যায়, জীবন নিয়ে আর চিন্তা নেই। কেননা, ওই ক্রিসমাস দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার অধীন। |
অর্থাৎ ওখানকার সব উদ্বাস্তর দায়িত্বই অস্ট্রেলিয়ার সরকারের: পলায়মান জনগোষ্ঠীর ধারণা এমনই। জন্মের জমানো টাকা এজেন্টদের হাতে দিয়ে কোনও রকমে নৌকোয় একটু জায়গা করে নেওয়া। এ দিকে নতুন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড জানিয়ে দিয়েছেন, আর এক জন উদ্বাস্তুকেও নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। সোজা পাপুয়া নিউ গিনি দ্বীপে চালান করা হবে। তাঁর এই ঘোষণা এখনও কানে যায়নি চালচুলোহীন অসহায় মানুষগুলোর, তার মধ্যেই ঘটে গেল এত বড় দুর্ঘটনা।
পাপুয়া নিউগিনি অবাসযোগ্য দ্বীপ, কে না জানে? অস্ট্রেলীয় সরকারের বক্তব্য বুঝতে অসুবিধে হয় না। রাষ্ট্রপুঞ্জের রেফিউজি এজেন্সি শোনামাত্র তড়িঘড়ি কড়া সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে: আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ন্যূনতম মানবিক ব্যবস্থা কিন্তু অস্ট্রেলীয় সরকারকে নিতে হবেই, সেই দায় এড়ানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রী রাড এখনও এর কোনও উত্তর দেননি।
|
• বেজিং • অবশেষে বো জিলাই-এর বিচার আরম্ভ হতে চলেছে। এক সময়কার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা বো কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পদের উত্তরাধিকারী হিসেবেও বিবেচিত হতেন। ২০১২-য় তাঁর পতনের শুরু। পার্টির পদ থেকে অবসৃত হন তিনি। দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার বো, বলেন অনেকেই। বো-র বিচার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রমাণ করতে চান, ক্ষমতার কথা না ভেবেই দুষ্টের দমন করেন তিনি। তাই হয়তো রাজনৈতিক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি, শুধু আর্থিক অপরাধেই বো-র বিচার হবে। এতে শাস্তি লঘু হবে। অল্প কারাবাসের পরেই মেডিক্যাল প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে তাঁকে, যাতে নিজের বাড়িতেই বাকি জীবন কাটাতে পারেন, এমনই নাকি পরিকল্পনা।
|
হাবিবা সারাবি এ বার ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেলেন। হাবিবা সারাবি আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশের প্রথম মহিলা গভর্নর। কেবল তা-ই নয়। গোটা আফগানিস্তান দেশেরই প্রথম মহিলা গভনর্র তিনি। সেই বামিয়ান, যেখানে ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির ভেঙে দিয়েছিল তালিবানরা, ২০০১ সালে। সেই বামিয়ান, যাকে দেশের সবচেয়ে গরিব এবং শিক্ষাভাবে সর্বাধিক পশ্চাদ্পর প্রদেশ বলে জানা যায়। সেখানে কেমন করে ঘটল এই আশ্চর্য ঘটনা? এর অনেকটা কৃতিত্ব আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-এর প্রাপ্য। হাবিবাকে তিনিই মনোনীত করেছিলেন গভর্নর হিসেবে।
কারজাই বুঝেছিলেন, এই কন্যার মধ্যে আগুন আছে। কাবুলে বড় হয়ে ওঠা, ডাক্তারি পড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেলোশিপ নিয়ে ভারতে পড়তে আসা, স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর তালিবান শাসনাধীন আফগানিস্তান ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে আসা। যদিও স্বামী দেশে থেকে যাওয়ায় বার বার যাওয়া-আসা করতে থাকেন হাবিবা। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান দুই দেশের উদ্বাস্তু শিবিরে ডাক্তারির কাজ করেন, মেয়েদের পড়ান। ১৯৯৮ সালে পাকাপাকি দেশে ফিরে যান, এবং হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্টান্স ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন অব আফগানিস্তান-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।
বামিয়ানের গভর্নর হিসেবে পরিবেশ সচেতনতা তৈরির জন্য দারুণ লড়াই তাঁর। টাইম ম্যাগাজিন ২০০৮ সালে হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট রিপোর্ট তাঁর গুণগান করে। প্রায় সাড়ে পাঁচশো স্কোয়ার কিলোমিটার একটি পার্ক বাঁচানোর জন্য একটানা লড়েছেন, নদীর দূষণহ্রাস, সবুজ বাড়ানো, জঞ্জাল অপসারণ ইত্যাদি নিয়ে ক্রমাগত আন্দোলন করেছেন। বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে পাশে পেয়েছেন ক্রমে। এখন তিনি একা নন। এখন তিনি প্রশাসক হিসেবেই একটা বিরাট আন্দোলনের নেত্রী।
“কেন করছি এ সব? আমার দেশের মানুষের ভবিষ্যতের কথা ভেবে..”, বলেন হাবিবা। |