চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ফের পুলিশের হাতে পাকড়াও হল এক যুবক। মাঝরাস্তায় বাস থামিয়ে তাকে ধরিয়ে দিলেন নিগৃহীতা তরুণীই। সাহায্য করলেন চালক-অ্যাটেন্ড্যান্ট।
দু’দিন আগেই হাওড়ার জগাছায় বাসে শ্লীলতাহানিতে বাধা দিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন এক শিক্ষিকা। বাসেরই এক যাত্রীর ফোনে খবর পেয়ে সাঁতরাগাছিতে পুলিশ লোকটিকে ধরে ফেলে।
শনিবার মাঝরাস্তায় বাস থেকে নেমে নিজেই পুলিশ ভ্যানে অভিযোগ জানালেন কলকাতার পূর্বাচলের এক তরুণী। ছিলেন বাসের চালক ও কোচ অ্যাটেন্ড্যান্ট। সাদা পোশাকের পুলিশ বাসে উঠে অভিযুক্ত যুবককে ধরে। নাম মির্জা
আহমেদ আলি বেগ, বাড়ি হুগলির পোলবা থানার মহানাদে। সে নানা অজুহাত দিলেও পুলিশ তাতে কান দেয়নি।
তরুণী জানান, আসানসোল যাবেন বলেন সকালে ধর্মতলা থেকে দূরপাল্লার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। মাঝপথে পিছনের আসনে বসা এক যুবক তাঁর সঙ্গে অসভ্যতা করে। তিনি চিৎকার করে উঠলে
|
মির্জা আহমেদ আলি
বেগ। —নিজস্ব চিত্র |
বাসের কোচ অ্যাটেনড্যান্ট চলে আসেন। অভিযোগ শুনে তিনি লোকটিকে অন্য আসনে সরিয়ে দেন।
এর পরে চালক গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য এবং অ্যাটেন্ড্যান্ট মিন্টু নন্দীই বাসের পিছনের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আশপাশের যাত্রীদের তাঁরা বলে দেন, লোকটি যাতে নেমে যেতে না পারে, সে দিকে নজর রাখতে। সামনের দরজায় পাহারায় ছিলেন মিন্টু নিজেই। সে কারণে শক্তিগড়ে কিছু ক্ষণ বাস দাঁড়ালেও লোকটি নামতে পারেনি।
তরুণী জানান, “চালক আমায় বলেছিলেন, ‘এখানে রাস্তায় পুলিশের অনেক ভ্যান টহল দেয়। যেখানেই তেমন ভ্যান দেখব, বাস দাঁড় করাব। আপনি নেমে গিয়ে পুলিশকে ডেকে আনবেন।’ খানিক বাদেই বাস দাঁড়িয়ে যায়।” বর্ধমানের বামবটতলার কাছে দাঁড়ানো পুলিশ ভ্যানে থাকা সাদা পোশাকের সাব-ইনস্পেক্টর সৈকত মণ্ডলের কথায়, “হঠাৎই একটি বড় বাস আমাদের ভ্যান পেরিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এক মহিলা নেমে আসেন। তাঁর পিছু-পিছু চালক এবং অ্যাটেনড্যান্ট। শ্লীলতাহানির অভিযোগ শুনেই বাসে উঠে আমরা লোকটিকে ধরি।”
যুবকটি জানায়, সে পানাগড়ে নামবে। কিন্তু শ্লীলতাহানির অভিযোগ সে স্বীকার করতে চায়নি। পুলিশ তার টিকিট কেড়ে বর্ধমান থানায় নিয়ে যায়। সঙ্গে যান তরুণীও। পরে বর্ধমানের তৃতীয় বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে অবশ্য অভিযুক্ত জামিন পেয়ে যায়।
এই সব করতে করতে বেলা গড়িয়ে যাওয়ায় অভিযোগকারিণীর আর আসানসোল যাওয়া হয়নি। তিনি পুলিশকে জানান, দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে তাঁর আত্মীয়ের বাড়ি আছে। সেখানে তাঁকে পৌঁছে দিলে ভাল হয়। বর্ধমান থানার এক মহিলা কনস্টেবল তাঁকে দুর্গাপুরে পৌঁছে দেন। তরুণীর কথায়, “বাসের চালক, অ্যাটেন্ড্যান্ট সাহস না জোগালে লোকটা পার পেয়ে যেত।” নদিয়ার গয়েশপুরের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ আর উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়ার মিন্টু বলেন, “লোকটাকে শায়েস্তা না করলে বাসেরই বদনাম হয়ে যেত। তাই না!” |