আমি নবাব নাজিম ফেরাদুন জার নাতির নাতনি। অনল আবেদিনের লেখা ‘সুবে বাংলার রাজধানী সংস্কারে খরচ ১৫ কোটি’ শীর্ষক খবর প্রকাশিত হয় গত ১৭ মে। অতি দুঃখের সঙ্গে ওই খবরের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ওই খবরে মির জাফরের বাস ভবনকে তিনি ‘নিমকহারাম দেউড়ি’ বলে সম্বোধন করেছেন। দুঃখটা আরও বেশি এই কারণে, যে ৯০-এর দশকে রেজা আলি খানের সুরে সুর মিলিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। মির জাফর বিশ্বাসঘাতক কিনা সেটি বির্তকের বিষয়। নিমকহারাম কথার অর্থ কারও অজানা নয়। সেই অর্থে দিল্লির সম্রাটের এই নিয়োগ কর্তা বাংলার জনগণের ও বাংলার প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। সিরাজের কিছু অবাঞ্ছিত কার্যকলাপ ও অত্যাচারে যখন বাংলার জনগণ অতিষ্ঠ তখনই লর্ড ক্লাইভের সঙ্গে রানি ভবানী, জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভ, উমি চাঁদ চুক্তি করেন। সেই চুক্তির শেষ নাটকীয় চরিত্র মির জাফর। তবে শুধু মির জাফরের বাড়িই কেন নিমকহারাম দেউড়ি! তিনি যদি সত্যিই নিমকহারাম ও বিশ্বাসঘাতক ছিলেন তবে কেন তাঁকে এক বছরের মধ্যে পদচ্যুত হতে হল? কেনই বা লর্ড ক্লাইভের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করতে হল তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র মিরণকে? ১৭৫৭ সালের পূর্বেই ইংরেজ সারা ভারতে তাঁদের ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। মির জাফরকে হাতের পুতুল করা ছাড়াও ইংরেজরা বাংলা জয় করতে পারত। হয়তো আরও কিছু সময় লাগত। তা ছাড়া তখন জাতীয়তাবাদী ভাবধারার ও সার্বভৌমিকতাবাদের সর্বপ্রচলন ছিল না। আঞ্চলিক শক্তিগুলি নিজ নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তৎপর ছিল। মির জাফরও বাংলায় শান্তি ফেরানোর আশায় ইংরেজদের সঙ্গে সায় দিয়েছিলেন। ক্লাইভ নিজের জীবনীগ্রন্থে লিখেছেন উনি যখন মুর্শিদাবাদে পাঁচশো সৈন্য নিয়ে প্রবেশ করেছিলেন তখন মুর্শিদাবাদের মানুষ ফুলের মালা ও হাততালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, “জনগণের এত সমাগম ছিল যে প্রত্যেকে একটি করে ইট ছুঁড়লে আমি আমার সৈন্য সমেত চাপা পড়ে যেতাম।” কিছু সংখ্যক অবোধ ইতিহাস বিকৃতকারীদের মুখের ভাষা ইতিহাসের পাতায় স্থান পেতে পারে না। কোনও ঐতিহাসিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সামনে রেখে বিচার করা উচিৎ। নিমকহারাম বলে সম্বোধন করাটা গোটা বংশধরের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ হানা, যা ভারতীয় আইনের পরিপন্থী।
সৈয়াদা হুসনা জা, কলন্দর বাগ
|
প্রতিবেদকের উত্তর: মুশির্দাবাদ জেলার ট্যুরিজিম সংক্রান্ত সরকারি প্রকল্পের নথিপত্রেই ‘Nimak Haram Deori’ কথাটি লেখা রয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের ওই নথিটির Memo No. 8 (12)/Turism/12-13, Dated. 31/12/2012. ওই নথিতেই লেখা রয়েছে, সরকারি বরাদ্দ অনুসারে ‘নিমকহারম দেউড়ি/ মির জাফরের কবরখানার’ সৌন্দর্যায়ন ও আলোকিত করার জন্য প্রথম দফায় পাওয়া গিয়েছে ১০ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। লালবাগের বেসরকারি ‘গাইড’রা বরাবরের মতো আজও পর্যটকদের কাছে তোরণ-সহ ওই ভবনটিকে ‘নিমকহারম দেউড়ি’ নামেই তুলে ধরেন। নবাব মির জাফরের উত্তরসুরিদের আহত করার উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনে ‘নিমকহারাম দেউড়ি’ কথাটি ব্যবহার করা হয়নি, সরকারি প্রকল্পে ‘নিমকহারম দেউড়ি’ কথাটি উল্লেখ থাকায় শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। |