চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
রহস্যময়তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে প্রতিবাদী অভিব্যক্তি
ন্দলাল বসু, যামিনী রায়, গোপাল ঘোষ ও গোবর্ধন আশ এই চার জন শিল্পীর কিছু ছবি নিয়ে একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি আকৃতি আর্ট গ্যালারিতে। প্রদর্শনীটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ম্যানিফেস্টেশনস অব দ্য মিস্টিক’। বাংলা করে বলা যেতে পারে হয়তো ‘রহস্যময়তার অভিব্যক্তি’। এই প্রদর্শনীতে যে চার শিল্পীর নির্বাচিত ছবি আমরা দেখি আধুনিকতা থেকে আধুনিকতাবাদে উত্তরণের পর্বে তাঁদের প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে। সেই উত্তরণের পর্যায়ে তাঁরা বিশ্বকে বুঝতে চেয়েছেন তাঁদের নিজের মতো করে। এই চার শিল্পী তিনটি প্রজন্মের অন্তর্গত। আধুনিকতার আন্দোলনে তিনটি পর্যায়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা। আধুনিকতার এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ের দিকে নিয়ে গিয়েছেন।
নন্দলাল বসুর (১৮৮২-১৯৬৬) যে কয়েকটি ছবি দেখানো হয়েছে এখানে, তাঁর চিত্রের বিবর্তনের ধারায় একটু ব্যতিক্রমী বলা যেতে পারে সেগুলিকে। কিন্তু এর মধ্যে আমরা পাই অন্য এক প্রজ্ঞার আলো। তিনি বুঝিয়ে দেন শিল্পের নির্মাণে খুব বেশি উপকরণ, প্রকরণ না হলেও চলে। শিল্প থাকে শিল্পীর ভাবনা বা ‘কনসেপ্ট’-এর মধ্যে। তাকে যে কোনও সহজ উপকরণেও অভিব্যক্ত করা যায়। তাতেই তা হয়ে উঠতে পারে অনেক বেশি প্রজ্ঞাদীপ্ত। সেদিক থেকে বলা যায় এই রচনাগুলির মধ্যে আধুনিকতাবাদ অতিক্রম করে উত্তর-আধুনিকতার কিছু বীজও সুপ্ত ছিল। ছবিগুলি ১৯৫৪তে করা। আকারে ছোট। কোলাজধর্মী। কেবলই যেন কাগজ ছেঁড়ার খেলা। কাগজ ছিঁড়ে একটি বা দু’টি অবয়ব বের করে আনা হয়েছে। চিত্রপটে সাঁটা হয়েছে সেটিকে। তার পর দু’একটি মাত্র রেখা টেনে ছিন্নতা থেকে তাদের প্রাণে উদ্ভাসিত করা হয়েছে। এভাবেই আমরা পেয়েছি এক কীর্তনীয়ার আলেখ্য, গদা হাতে লেজ উঁচিয়ে হনুমানের প্রতিকৃতি, প্রদীপ হাতে একটি মেয়ে এ রকম সব ছবি। প্রচ্ছন্ন, পরিমিত কৌতুক এই রচনাগুলির প্রধান উপজীব্য। তারই সংবৃত প্রকাশ দুটি প্রতিমাকল্পের সমন্বয়ে গড়া একটি রচনায়। ২৮.১.৫৪ তারিখে করা এই ছবিটির তলায় শিল্পী লিখেছেন ‘আপ কো ক্যা হুয়া?’ তার নীচে লেখা ‘মধ্যপ্রদেশ মন্ত্রী ও বৃদ্ধ শিল্পী’। লেখার এই ক্যালিগ্রাফিও ছবির অঙ্গ। মিতভাষণে বাস্তবের গহনে প্রবেশ করা এই প্রজ্ঞাই ছবিগুলির প্রাণ।
শিল্পী: যামিনী রায়
যামিনী রায় (১৮৮৭-১৯৭২) স্বদেশ চেতনার আত্মপরিচয় সন্ধানকে অন্য একটি মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন। নন্দলাল পুনরুজ্জীবনবাদ থেকে সমকালীন বাস্তবতার উন্মীলনের দিকে এসেছিলেন ধীরে ধীরে। সীতার অগ্নিপরীক্ষার একটি আলেখ্য ছিল এই প্রদর্শনীতে। জাতীয় পুরাণকল্প এখানে অভিব্যক্ত হয়েছে লৌকিকের ভাষার সারল্যময় ছন্দে। সীতা আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে। এই দৃশ্য নিরীক্ষণ করছে সমবেত সাধুজন ও পুরজন। প্রচ্ছন্ন কৌতুক আছে। আছে লোকাচার। সেই কৌতুকের ভাষাতেই সামাজিক আচারকে কশাঘাত করেছেন শিল্পী। অগ্নির ভাষায় পরিস্ফুট করেছেন মানবীচেতনার রুদ্রতাকে। চিংড়ি-মুখে দুটি নীল বিড়ালের উপস্থাপনায় কৌতুকদীপ্ত যে সারল্য, তাকে ছাপিয়ে প্রচ্ছন্ন থাকে এক হিংসার অন্তঃস্রোত। এর মধ্যেই শিল্পী অভিব্যক্ত করেন এক প্রতিবাদী চেতনা, যেটা আমরা সব সময় লক্ষ করি না। রহস্যময়তার মধ্যে এই প্রতিবাদী অভিব্যক্তিতেই যামিনী রায়ের মহত্ত্ব। গোবর্ধন আশ (১৯০৭-৯৬) ও গোপাল ঘোষ (১৯১৩-১৯৮০) প্রায় সমসাময়িক শিল্পী। ‘ক্যলকাটা গ্রুপ’-এর আন্দোলনের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত ছিলেন দু’জনেই। চল্লিশের বাস্তবতা ছিল দু’জনের বিশ্বদৃষ্টিরই মূলগত ভিত্তি। তেতাল্লিশের মন্বন্তর ও চল্লিশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অগ্নিবাষ্প দু’জনের চেতনাকেই নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেখান থেকে তাঁরা দু’জন দু’দিকে গেছেন। পাশ্চাত্য আধুনিকতার নানা আঙ্গিক আত্মস্থ করেছেন দু’জনেই। দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে তাকে মিলিয়েছেন। গোবর্ধন এঁকেছেন জীবনের নানা সংঘাত ও রহস্যাবৃত সৌন্দর্যের ছবি। গোপাল ঘোষ ক্রমান্বয়ে নিসর্গকেই করে নিয়েছেন তাঁর প্রধান প্রকাশভঙ্গি। গোবর্ধন আশের ১৯৫০-এ আঁকা যে নিসর্গ, সেটি দেখলে বোঝা যায় গোপাল ঘোষের সঙ্গে তাঁর প্রকাশের পার্থক্য। অনামা একটি রৈখিক রূপারোপে বাস্তবতাকে অসামান্য ঋদ্ধতায় বিমূর্তের দিকে নিয়ে যান তিনি। গোপাল ঘোষের ১৯৫৫ ও ’৬৫ তে আঁকা দুটির পাখির রূপারোপে প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্যের উন্মীলন থাকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.