বরফমোড়া গুলমার্গের ঝুলন্ত গন্ডোলার পোস্টারে অপলক তাকিয়ে অরুণাচল প্রদেশের এক ঝাঁক খুদে। ছত্তীসগঢ়ে একটি ট্রেনিংয়ে যাওয়ার ফাঁকে যারা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ট্যুরিস্ট স্পট-এ বুড়ি ছুঁয়ে গেল।
ট্রেকিং-পাগল এক প্রৌঢ় ও তাঁর বন্ধু গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীও স্টল থেকে স্টলে ঘুরছেন। নতুন কোনও স্পটের খোঁজ পেলেই ‘ব্রোশিওর’ সংগ্রহ করে তা ঝোলায় ভরে ফেলছেন। আসন্ন পুজো বা পুজো-পরবর্তী সফরের ছক কষতে হাজির আমগেরস্ত থেকে শুরু করে নতুনের টানে মশগুল ছেলে-বুড়ো সকলকেই আনন্দবাজার পত্রিকা-আয়োজিত ‘ট্যুরিস্ট স্পট’ একসঙ্গে মিলিয়ে দিল। |
“যা দিনকাল, নীললোহিতকে অবধি দিকশূন্যপুরে যেতে হলে বোধহয় আগাম প্ল্যান করেই বেরোতে হতো!”--- বলছিলেন বসিরহাটের নারায়ণ মণ্ডল। পঞ্চাশ ছুঁয়েও কম বয়সের উড়নচণ্ডী মেজাজ থেকে যিনি বেরোতে পারেননি। এখনও নিয়ম করে বছরে অন্তত দু’বার সপরিবার এবং একা বেড়ানোর নেশায় ঘরছাড়া হন। শুক্রবার, ট্যুরিস্ট স্পট-এর প্রথম দিনেই তাঁর সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোরে দেখা হয়ে গেল।
বেড়ানো মানে তো নিছক নতুন দেশ দেখা নয়! চুটিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে বন্ধুদের সে-সব না দেখালে আর কীসের বেড়ানো হল! এমনতর যাঁদের চিন্তাধারা, তাঁদের জন্য ভাল ক্যামেরার সুলুকসন্ধানও দিচ্ছে এই পর্যটন-মেলা। রয়েছে সুন্দরবন থেকে শুরু করে আফ্রিকার জঙ্গল অবধি পাড়ি দিয়ে ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি-সংক্রান্ত ভরপুর খোঁজখবর।
কেউ কেউ প্রথমেই জেনে নিচ্ছেন, বেড়ানোর সময়ে সঙ্গে বাঙালি রাঁধুনি থাকবে কি না! আবার কয়েক জন বেড়াতে গিয়েও মাছ-ভাত-চচ্চড়ির নামে ‘তওবা-তওবা’ বলে কানে হাত দিচ্ছেন। কোথাও বেড়াতে গিয়ে সেখানকার লোকাল খানাই যদি না চাখা হল, তবে তো সেই বেড়ানোর বারো আনাই ফাঁকি! বেলেঘাটার এক দম্পতির এই অভিমত শুনে শ্রীনগরের মির দানিয়াল তাঁদের খাঁটি কাশ্মীরি মাংসভাজা তবকমাজের লোভ দেখাতে থাকলেন। |
মির ও তাঁর বন্ধু মহম্মদ আমিনকে ঘিরে বিরাট জটলা। একগুচ্ছ হাউজবোট-সমেত দুই বন্ধুর ভ্রমণ সংস্থা বছর চারেক ধরে নানা মেলায় কলকাতায় হাজির হচ্ছে। শ্রীনগর-পহেলগাঁও-গুলমার্গ-সোনমার্গের চেনা জায়গার বাইরে ভূস্বর্গের কিছু আনকোরা ঠিকানার কথাও শোনালেন মির। যেমন, ইয়ুসমার্গ ও দুধপাতরি। নদীর ধারে সবুজের সমারোহ, চমৎকার কটেজের মোড়কে স্বপ্নের হাতছানি। পাখিপ্রেমীদের স্বর্গ, চিল্কার নতুন স্পট মঙ্গলাজোড়িও সগর্বে নিজের মহিমা মেলে ধরছে। অজস্র বেসরকারি সংস্থার বাইরে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশের পর্যটন দফতরের স্টল রয়েছে মেলায়। পুজো উপলক্ষে বাঙালির জন্য কিছুমিছু ছাড়ের খবরও হাওয়ায় ভাসছে। একটি সংস্থা পুজোয় ইউরোপ সফরের ২৫ শতাংশ ছাড়ের কথা প্রচার করছিল। তবে ইউরোর দামের হেরফের হলে, সেই খরচা বাড়তে পারে বলেও তাঁরা সাবধান করলেন।
প্রকৃতির হাতে ধ্বস্ত কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রীর জন্য বিষাদটুকুও এখন বেড়ানোর এই প্রস্তুতিপর্বের সঙ্গী। ভ্রমণসংস্থাগুলির দু’টি সংগঠনের তরফে আলাদা ভাবে তহবিল গড়া হচ্ছে। ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (ট্যাব)-এর কর্তারা জানালেন, মেলা শেষে টাকাটা তাঁরা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের হাতে তুলে দেবেন। |