ছবির নাম ‘হাফ সিরিয়াস’। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা অতি গুরুতর।
‘দ্যাখ কেমন লাগে’ নামে একটি নির্মীয়মাণ ছবির প্রযোজকেরা আদালতে অভিযোগ করেছেন, ‘হাফ সিরিয়াস’-এর গল্পটা আসলে তাঁদের ছবি থেকে টোকা। এই অভিযোগ নিয়ে তাঁরা আইনি পথেও যান এবং শিয়ালদহ আদালত বৃহস্পতিবার ‘হাফ সিরিয়াস’-এর মুক্তি তথা প্রদর্শনের উপর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অথচ নিষেধাজ্ঞার পরেও শুক্রবার কলকাতার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘হাফ সিরিয়াস’। ছবির প্রিমিয়ারও হয়েছে। স্বভাবতই অভিযোগকারী প্রযোজকেরা এ বার আদালত অবমাননার মামলা করার হুমকি দিয়েছেন।
‘হাফ সিরিয়াস’-এর প্রযোজক-পরিচালকের দাবি, তাঁরা আদালতের নির্দেশ হাতে পাননি। তা না পাওয়া পর্যন্ত ছবি দেখানো তাই বন্ধ হবে না। কিন্তু অভিযোগকারীরা এ বার আদালত অবমাননার মামলা করার হুমকি দিয়ে বসায় কোথাও যেন ঝঞ্ঝাটে জড়ানোর আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের জন্য। কোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শুক্রবার তাঁরা ছবিটি দেখান (কারও কারও দাবি, তাঁরা কোর্টের নির্দেশ হাতে পাননি)। কিন্তু এখন তাঁদের চিন্তা, আদালত অবমাননার মামলা হলে তাঁরা ছবিটি দেখানোর দায়ে অভিযুক্ত হবেন না তো? |
হাফ সিরিয়াস ছবির একটি দৃশ্য। |
প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত যেমন বলছেন, “আমরা প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা কোনও দিন আইনি বিতর্কে যেতে চাই না। কপিরাইট নিয়ে কোথায় কী বিতর্ক, তা নিয়েও আমাদের মাথাব্যথা নেই। একেই আমাদের উপরে অনেক চাপ। তার মধ্যে এ সব উটকো ঝামেলা আমরা চাই না। আদালতের আদেশ মেনেই চলব। কিন্তু ‘হাফ সিরিয়াস’-এর বিষয়ে আদালতের পাঠানো কোনও নির্দেশ এখনও আমি দেখিনি।” যদিও ‘দ্যাখ কেমন লাগে’-র প্রযোজকদের দাবি, প্রিয়া কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ পেয়েছেন।
বিতর্কটা ঠিক কী? ‘দ্যাখ কেমন লাগে’ টিমের অভিযোগ, তাদের গল্পটা ২০১১-তেই ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা ইমপা-য় নথিভুক্ত হয়েছিল। তবে ছবির শু্যটিং শুরু হয়নি এখনও। সে গল্পটাই টুকেছে ‘হাফ সিরিয়াস’। অভিযোগকারী প্রযোজনা সংস্থার তরফে আইনজীবী বিকাশ গোস্বামী জানান, সোমবার তাঁরা আদালত অবমাননার অভিযোগ জানাবেন। বিকাশবাবু বলেন, “হাফ সিরিয়াস-এর তরফে বলা হচ্ছে, ওরা আদালতের কোনও নির্দেশ পায়নি। সোমবার আদালতে গিয়ে আমরা রিসিভার বসিয়ে সপ্তাহান্তে কত টিকিট বিক্রি হয়েছে, তা জানার দাবি জানাব।” দেব অভিনীত ‘পরান যায় জ্বলিয়া রে’ ঘিরে একই ধরনের জটিলতায় রিসিভার বসানো হয়েছিল বলে বিকাশবাবুর দাবি। ‘দ্যাখ কেমন লাগে’-র প্রযোজক ঋত্বিক ভট্টাচার্য বলেন, “আমি প্রযোজকের অফিসে গিয়েছিলাম কোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি নিয়ে। অফিস বন্ধ ছিল। ‘হাফ সিরিয়াস’-এর বুকার পরেশ পারেখের অফিসে নির্দেশের প্রতিলিপি শুক্রবার সাড়ে বারোটায় দেওয়া হয়েছে। আমাদের গল্পটা প্রীতম সরকারের লেখা। ‘হাফ সিরিয়াস’-এর গল্প পুরোটাই টোকা। শুধু মুখ্য চরিত্রগুলোর নাম পাল্টানো হয়েছে।”
‘হাফ সিরিয়াস’-এর পরিচালক উৎসব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “এই নির্দেশ নিয়ে কিছু জানি না। আপনাদের কাছ থেকেই প্রথম শুনছি। রাজ্যের বিভিন্ন হলে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। প্রিমিয়ারও হয়েছে। আমার গল্পটা নকল কি না সেটা তো প্রমাণসাপেক্ষ। আমার গল্প ইমপায় নথিভুক্ত রয়েছে।” ছবির প্রযোজক সুদীপ হাজরারও একই মত। বললেন, “আমাদের গল্পটা অরিজিনাল। সব প্রমাণ রয়েছে। আমি হাতে কোনও কোর্টের নির্দেশ পাইনি। শুক্রবার ছবির প্রিমিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমাদের অফিস বন্ধ ছিল। যত ক্ষণ না আদালতের নির্দেশ হাতে পাচ্ছি, আমি ছবি দেখানো বন্ধ করব না। নির্দেশ হাতে পেলে আদালতের কাছে সব প্রমাণ নিয়ে যাব। তার আগে ছবি যেমন চলছে তেমনই চলবে।”
টালিগঞ্জের পরিচালক সুজিত গুহর সঙ্গে ঋত্বিকবাবুর কথা হয়েছিল ‘দ্যাখ কেমন লাগে’র পরিচালনা নিয়ে। সুজিত বলেন, “গল্পটা কোথা থেকে নেওয়া তা আমি জানি না। তবে সেটা ইমপা-য় রেজিস্ট্রি করা ছিল। আমাকে প্রযোজক গল্পটা দেন। আমি আমার চিত্রনাট্যকারদের দিয়ে একটা চিত্রনাট্য লিখিয়েছিলাম। তার পর শুনি এত গণ্ডগোল। বেশ অসহায় বোধ করছি।” |
সহ প্রতিবেদন: তীর্থ আচার্য |