ভোটের লাইনে অসুস্থ হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল শিলিগুড়ি লাগোয়া জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভার জলেশ্বরী এলাকায়। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। অসুস্থ বৃদ্ধকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ জানায়, তাঁর নাম মহেন্দ্র বর্মন (৭৫)। দেহটি পুলিশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।
বাড়ির লোক ও স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, অসুস্থ থাকায় ভিড়ের মধ্যে ভোট দিতে যেতে চান নি মহেন্দ্র বাবু। কিন্তু তৃণমূলের কয়েকজন প্রার্থী এসে জোর করেই হাঁটা পথে নিয়ে যান বাড়ির কাছে থাকা ঠাকুরনগর শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে। মৃতের স্ত্রী মালতী বর্মন বলেন, “কয়েকজন মহিলা ও একজন পুরুষ এসে ১১ টার দিকে আমার স্বামীকে নিয়ে যায়। সেখানে অসুস্থ হয়ে মাটিতে বসে পড়েন, সকলে তাঁকে ছেড়ে চলে যান। তার পরই মারা যান আমার স্বামী।” তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ ওই কেন্দ্রের পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রার্থী সাগর মোহান্ত। |
নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেহ।—নিজস্ব চিত্র। |
তিনি বলেন, “যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। তবে তা নিয়ে রাজনীতি করা আরও খারাপ ব্যাপার। এটা মিথ্যে অভিযোগ, বিরোধীদের পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে।” তিনি আরও বলেন, “নির্দল প্রার্থী জিততে পারবে না বলে এ সব বলেছেন।” নির্দল প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ভবতোষ রায়। এ দিন সকালে বাড়িতে এসে জোর ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে নিয়ে যান মহেন্দ্রবাবুকে। কিন্তু পক্ষাঘাতে চলতে না পারা ওই ব্যক্তি বিকেলের দিকে যাবে বলে জানান। তা মানতে নারাজ তৃণমূলের কর্মীরা এক প্রকার জোর করেই নিয়ে গিয়েছে বলে অভেযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকার বিদ্যারানী রায় বলেন, “কয়েকজন মহিলা এসে জোর করে নিয়ে গিয়েছেন মহেন্দ্র বাবুকে। তাঁরা তৃণমূল করে বলে জানি।” সূত্রের খবর যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের কয়েকজনের নাম লক্ষ্মী মন্ডল, সাবিত্রী বর্মন। তবে ঘটনার পর এলাকায় তাঁদের আর দেখা যায় নি। তবে তৃণমূলের তরফে দাবি, তাঁদের কেউ জোর করে ভোট দিতে নিয়ে আসেননি। ভোট দাতা নিজের ইচ্ছাতেই এসেছিলেন। এ দিন হাসপাতালের বাইরে বসে মৃতের স্ত্রী বলেন, “যখন ওঁরা নিয়ে যেতে এসেছিল, তখন বলেছিল, ভোট দিন তবে বাধর্ক্য ভাতা পাবেন। আগের পঞ্চায়েত দেয় নি, কিন্তু আমরা দেব।” তিন বছর থেকে অসুস্থ থাকায় সংসার চালাতে মালতী দেবী নির্মাণ শ্রমিক। ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অফিসার জানান, ওই ব্যক্তি কেন্দ্রের ভেতরে এলেও ভোট দেন নি। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এই ঘটনায় বিকেল পর্যন্ত পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করা হয় নি। দার্জিলিং জেলা সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্যি হলে মারাত্মক ব্যাপার। প্রাণের থেকে একটি ভোটের মূল্য কখনও বেশি হতে পারে না।” সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন মুক্তি বিশ্বাস। তিনি নিউ পুঁটিমারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকায় জ্ঞান হারান তিনি। |