দাবি একটা পাকা সেতুর। কিন্তু সে জন্য কুড়ি বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তবু পাকা সেতুর আজও পাননি এলাকার মানুষ।
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর, হুদা, কুমোরখোলা, হাদিখালি ইত্যাদি এলাকার মানুষ কোদালিয়া নদীর উপরে পাকা সেতু তৈরির জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। নদীর এক পারে বনগাঁ ব্লকের সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণচন্দ্রপুর। এলাকার মানুষের কাছে যার পরিচিতি বোঁচাখালি। অন্য পারে বাগদার হেলেঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতের পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর। বহু আগে নৌকাতেই পারাপার করতেন দু’পারের মানুষ। পরে নিজেদের সুবিধার জন্য তৈরি করেন বাঁশের সাঁকো। মূলত পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দারাই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হন। তৈরি হয় প্রায় ২০০ ফুট লম্বা এ ৫ ফুট চওড়া একটি সাঁকো। এমনকী প্রতি বছর দুর্গা পুজোর সময় তা সংস্কার করে ফের নতুন করে তৈরি করেন। যাঁদের বাড়িতে বাঁশের ঝাড় আছে তাঁরা সরবরাহ করেন বাঁশ। প্রয়োজনীয় পেরেক, দড়ি-সহ অন্যান্য খরচও নিজেরাই চাঁদা তুলে মেটান তাঁরা। |
এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত কিছু করে না।? প্রশ্ন শুনে ক্ষোভ উগরে দিলেন স্থানীয় বাসিন্দা পরিতোষ বিশ্বাস। জানালেন, “অনেক আগে হেলেঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সাঁকো মেরামত করার জন্য টাকা দেওয়া হত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের তো পারাপার করতে হবে। তাই গ্রামের মানুষ নিজেরাই চাঁদা তুলে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাঁকো মেরামত করেন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক অন্তত ১০ হাজার মানুষ এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। চলে সাইকেল, মোটকবাইকও। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর থেকে বনগাঁ-বাগদা সড়কে পৌঁছতে এই সাঁকোই ভরসা। মাত্র কয়েক মিনিটে যাতায়াত করা যায়। অন্যথায় সাঁকো না থাকলে এখানাকার মানুষকে প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘপরে আষাঢ়ু হয়ে বনগাঁ-বাগদা সড়কে পৌঁছতে হত।” তিনি আরও জানান, কয়েকবার বর্ষায় সাঁকোটি ভেঙে যায়। তখন নৌকা করে পারাপার করতে হত। সব চেয়ে সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। ঘুরপথে বাজার ফসল নিয়ে যেতে গিয়ে পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের আর্থিক ক্ষতি হয়।
পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর থেকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এলাকায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে নিয়ে গাড়িতে আষাঢ়ু হয়ে ঘুরপথে আরও চার কিলোমিটার পেরিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। পাকা সেতু থাকলে এই সমস্যা এড়ানো যেত বলে জানালেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, এ সব কারণেই দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা প্রশাসনের কাছে ওই জায়গায় একটি পাকা সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। বিধায়ক থেকে মন্ত্রী সকলের কাছে সেতু চেয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসুবিধা নিয়ে কোনও মাথাব্যাথাই নেই প্রশাসনের।
বাগদার বিডিও খোকন বালা অবশ্য এ ব্যাপারে আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ওই নদীর উপরে একটি পাকা সেতু ও সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।’’ |