বড় বড় জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরাই কারবারিরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার রায়দিঘি রেঞ্জের আওতায় থাকা বড় জঙ্গলগুলি থেকে কাঠ কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, এ ভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ফাঁকা হয়ে যাবে অধিকাংশ জঙ্গল। নদীবাঁধও বাঁচানো যাবে না। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের মদতেই চলছে এই কারবার। বন দফতরও বিষয়টি সে ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী সংলগ্ন এলাকায় যে সব জঙ্গল রয়েছে, তার একাংশের দেখভালের দায়িত্ব পঞ্চায়েতের। প্রতি বছর বনসৃজন প্রকল্পে ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ম্যানগ্রোভের বীজ লাগানো হয়। মথুরাপুর-২ ব্লকে আবার প্রশাসনের উদ্যোগেই রায়দিঘি জেটিঘাটের কাছে তিন বিঘা চর ঘিরে তৈরি করা হয় ম্যানগ্রোভের নার্সারি। কালো বাইন, সাদা বাইন, কাঁকড়া, কেওড়া, গরান এই জাতীয় গাছের বীজ নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়। বীজগুলি বিভিন্ন জঙ্গলে গাছ থেকে নদীতে পড়ে। পরে ভাসতে ভাসতে চলে যায় বিভিন্ন এলাকায়। জোয়ারের জলের সঙ্গে ওই বীজ চরে এসে পড়ে। ভাটার সময়ে চরেই আটকে থাকে। ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে ১০০ দিনের প্রকল্পে শ্রমিকদের দিয়ে চর থেকে ওই বীজ সংগ্রহ করা হয়। তা নার্সারিতে বসানোর পর চারা তৈরি করে ফাঁকা চর এলাকায় রোপণ করা হয়। এই ভাবে যে ম্যানগ্রোভ অরণ্য গড়ে ওঠে, তার দায়িত্ব থাকে পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের। |
মথুরাপুর-২ এর বিডিও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মূলত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নদী থেকে বীজ সরবরাহ করা হয়। পরে ওই বীজ নার্সারিতে বসিয়ে মাস খানেক যাওয়ার পরে ম্যানগ্রোভ চারাগুলি বসানো হয়। ইতিমধ্যেই আমরা প্রায় কুমড়ো পাড়া, নগেন্দ্রপুর, নন্দকুমার, দিঘির পাড়, রাধাকান্তপুরে, মনি নদী লাগোয়া ১৫০ হেক্টর বন সৃজন করেছি।” ওই অঞ্চল মূলত দেখভাল করার কথা পঞ্চায়েতগুলির।
বন দফতর সূত্রে খবর, রায়দিঘি রেঞ্জের মধ্যে প্রায় ৫০০ হেক্টর বর্গ কিলোমিটার জুড়ে জঙ্গল রয়েছে। হেরোভাঙা ৯, আজমলমারি ১ থেকে ১০ পর্যন্ত, অন্যদিকে, দুলভাসানি ৩ থেকে ৫ পর্যন্ত তা বিস্তৃত। রায়দিঘি রেঞ্জের এক বনকর্তা জানান, যে কোনও জঙ্গলে গাছ কাটার খবর পেলেই বন দফতরের কর্মীদের ছুটতে হয়। অথচ বেশ কিছু জঙ্গল বন দফতরের আওতাতেই নেই। তিনি বলেন, “জঙ্গল মাত্রই যে বন দফতরের আওতায় পড়বে, এই ধারণা ঠিক নয়।” স্থানীয় মানুষের একাংশের দাবি, এই এলাকায় মণি নদী লাগোয়া মাইতির ঘেরি, দমকল, কুয়েমুড়ি, মনি নদীর দু’দিকে সাহেবের দ্বীপ, নন্দকুমার রেল বাজারের কাছে যে সমস্ত বাণী, গরান, কাঁকড়া, গেঁওয়া ও সুন্দরী গাছের জঙ্গল রয়েছে তা কেটে সাফ করে দিচ্ছে চোরাই কারবারিরা। ওই জঙ্গলের কাঠ ব্যবহার হচ্ছে জ্বালানি হিসাবে। মাইতির ঘেরি বা দমকল গ্রামের কাছে দেখা গেল মনি নদীর চরে গড়ে ওঠা জঙ্গলের কোথাও নদী বাঁধের পাশে গাছ কেটে ফাঁকা হয়ে রয়েছে, কোথাও বা জঙ্গলের ভিতর পুরো ফাঁকা। অন্য দিকে, নদী বাঁধের আশপাশে বসতি এলাকায় জ্বালানির স্তূপ চোখ এড়ায় না। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ভোট বাক্সের কথা ভেবেই রাজনৈতিক নেতারা কাঠ চুরির বিষয়টি এড়িয়ে যান।
রায়দিঘির রেঞ্জার আশিস মণ্ডলও বলেন, “কাঠ চুরি রুখতে দিনে রাতে জঙ্গলে কড়া পাহারার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু কেউ ধরা পড়লেই নেতাদের ফোন আসে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তা সত্ত্বেও যতটা সম্ভব, কঠোর হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।” |