উৎসাহী চাষিরা, বর্ষার পেঁয়াজ চাষের এলাকা বাড়ল হুগলিতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
আমন চাষের বিকল্প হিসেবে গত বছর বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছিল হুগলির মাত্র তিনটি ব্লকের ১৫ বিঘা জমিতে। সেই চাষ লাভজনক হওয়ায় এ বার প্রসার ঘটল আরও পাঁচটি ব্লকে।
বলাগড়, পোলবা এবং চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের পরে এ বার বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে আরামবাগ, গোঘাট, তারকেশ্বর, হরিপাল এবং ধনেখালি ব্লক এলাকায়। ১৫ বিঘা থেকে এ বার চাষের এলাকা বেড়ে প্রায় ১১০ হেক্টর ছুঁতে চলেছে বলে জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
দফতরের আধিকারিক দীপক ঘোষ বলেন, “অত্যন্ত লাভজনক এই চাষ জেলায় আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আমাদের বিশ্বাস। উৎসাহী ২০ জন চাষিকে আমরা প্রশিক্ষণের জন্য নাসিক পাঠিয়েছিলাম। বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে সফল হলে মহারাষ্ট্র থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমবে। রাজ্যও স্বনির্ভর হবে।”
জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রে জমি উঁচু হওয়ায় সেচ দিয়ে কষ্টেসৃষ্টে আমন ধান ফলান চাষিরা। অতিরিক্ত খরচ করে অনেকে লাভ পান না। কেউ কেউ জমি ফেলেও রাখেন। সেই সব জমিতে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের প্রচলন করে বিকল্প চাষে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গত বছর থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রকল্পটি ‘রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা’র অন্তর্গত। পেঁয়াজের যে প্রজাতি চাষ করার সুপারিশ করা হয়েছে, তার নাম ‘এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড’। বীজ ফেলার সময় আষাঢ় মাস থেকে শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহ। চারার বয়স পাঁচ সপ্তাহ হলেই জমিতে বসানো যাবে। উঁচু বেলে-দোঁয়াশ মাটি যুক্ত জমি এই চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। অন্য মাটি যুক্ত জমি হলে জল নিকাশি ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। পেঁয়াজ তোলা যাবে ১২০ থেকে ১৩০ দিনের মাথায়।
বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে খরচের তুলনায় লাভ কেমন?
গত বছর বলাগড় ব্লকের বাকুলিয়া গ্রামের বুদ্ধদেব ঘোষ ওই চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, “মাত্র ১৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। ১৫ কাঠায় খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। সেচের প্রয়োজন হয়নি। কাঠাপিছু ফলন পেয়েছি পাঁচ মণ করে। মোট ৭৫ মণ বা তিন হাজার কেজি। পাইকারি দরে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ গড়ে ১৮ টাকায় বিক্রি করেছি। এ বছর দু’বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি।” বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে লাভের অঙ্কের হিসাব উদ্যানপালন দফতরেরও প্রায় একই রকম।
এ বছর নতুন পেঁয়াজ চাষিদের মধ্যে আরামবাগের মায়াপুর-১ পঞ্চায়েতের বলরামপুরের বাণেশ্বর চিনা বলেন, “আমার বিঘা পাঁচেক জমি উঁচু। বর্ষায় আমন চাষে জমি তৈরি থেকে ধান তোলা অব্দি এক বিঘায় খরচ হয় প্রায় ন’হাজার টাকা। বিঘায় আট কুইন্টাল ধানের ফলন পেলেও বড়জোড় ১২০০ টাকা কুইন্টাল দরে বিক্রি করতে পারি। লাভ থাকে মাত্র ৬০০ টাকা। সেখানে পেঁয়াজ চাষ করে যদি ১০০ মণের বদলে ৮০ মণও ফলন পাই তা হলেও খরচ বাদ দিয়ে বিঘায় লাভ থাকবে ৬০ হাজার টাকা।” বাণেশ্বরবাবু আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “নিখরচায় বীজ দিচ্ছে উদ্যানপালন দফতর। এ বছর ভাল ফলন পেলে পরের বছর পাঁচ বিঘা জমিতেই বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ করব।” প্রায় একই বক্তব্য ধনেখালির চাষিদেরও। |