গণনার দিন মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রাম ২ ব্লকে তাদের প্রার্থী বা এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে তৃণমূল বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ তুলল কংগ্রেস ও সিপিএম। ইতিমধ্যে গণনাকেন্দ্র পাল্টানোর আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছে কংগ্রেস। প্রশাসনকে বিষয়টি তারা জানিয়েছেন বলে দাবি সিপিএম নেতাদেরও। তৃণমূলের যদিও দাবি, পুরোটাই অপপ্রচার।
গত বার পুলিশের মদতে সিপিএমের লোকজন কেতুগ্রাম ১ ব্লকে গণনার সময়ে কংগ্রেস কর্মীদের তাড়িয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতই দখল করেছিল সিপিএম। লোকসভা ভোটের পর থেকে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগেই কেতুগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের দখলে। অধিকাংশ আসনে বিরোধী কেউ প্রার্থী দিতে না পারায় পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা পেতে চলেছে তৃণমূলই। পঞ্চায়েত স্তরেও ১১৭টি আসনের ৮৮টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতছে তারা। এ ছাড়া মহকুমার বাকি চার ব্লকের মধ্যে কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকে তৃণমূলের সংগঠন বিশেষ জোরদার নয়। তাই মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতি দখল করাই এখন লক্ষ্য তৃণমূলের। দলেরই একটি সূত্র জানায়, পশ্চিম মঙ্গলকোট ‘দখল’ হলেও পঞ্চায়েতের ফল বেরোলে বোঝা যাবে পূর্ব মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রাম ২ ব্লকে দল কতটা শক্তিশালী হয়েছে। কারণ, এই দুই জায়গাতেই কংগ্রেসের সংগঠন রয়েছে। |
এ বার পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন দাখিল করতে সিপিএম ও কংগ্রেস কর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মঙ্গলকোটে। প্রহৃত হন কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি দীনবন্ধু পাল। পরে মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেন ওই দুই দলের প্রার্থীরা। সেই প্রসঙ্গ টেনেই কংগ্রেসের তরফে কমিশনের কাছে গণনাকেন্দ্র বদলের আর্জি জানানো হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, পূর্ব মঙ্গলকোটের অন্তত দু’টি পঞ্চায়েতে তারা ক্ষমতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই গণনার দিন বড় জমায়েত করে এক সঙ্গে মঙ্গলকোটের একেএম উচ্চ বিদ্যালয়ের গণনাকেন্দ্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান এমানুল হকের অভিযোগ, “তৃণমূল কখনও পালিশগ্রাম, কখনও বা ঝিলু মোড় টপকাতে দেওয়া হবে না বলে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। মার খেলে আমরাও যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
সিপিএমের আশা, পূর্ব মঙ্গলকোটে কৈচর ১, শিমুলিয়া, নিগন ও ক্ষীরগ্রামে দলের ফল ভাল হবে। প্রশাসনকে তারা অভিযোগ করেছে, মঙ্গলকোট বটতলা, পদিমপুর মোড়, আটঘড়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূল রীতিমতো শিবির করে তাদের কর্মীদের আটকানোর চেষ্টা করবে। দলের ভাগীরথী-অজয় জোনাল সম্পাদক দুর্যোধন সর বলেন, “আমরা সব শুনছি। প্রশাসনের উপরে ভরসা রাখছি। যে ভাবেই হোক আমরা গণনাকেন্দ্রে পৌঁছব।” তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য বিরোধীদের সমস্ত আশঙ্কা উড়িয়ে বলেন, “সিপিএম-নির্দল-কংগ্রেস মিলে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। কোথাও অশান্তি হবে না।” মঙ্গলকোটের ১৫টি পঞ্চায়েতেই তাঁরা ক্ষমতায় আসবেন বলে দাবি অপূর্ববাবুর।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন বুথে গোলমাল পাকাতে গিয়ে কেতুগ্রামের নিরোলে বাসিন্দাদের হাতে আটক হন পাঁচ জন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই পাঁচ জনই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। বুধবার কেতুগ্রাম ২ বিডিও-র ডাকা সর্বদল বৈঠকে সে কথা তুলে সিপিএম ও কংগ্রেস অভিযোগ করে, কেতুগ্রাম ১ ব্লক থেকে তৃণমূলের লোকেরা গণনাকেন্দ্রে এসে গোলমাল পাকাতে পারে। কংগ্রেসের এক নেতার দাবি, “গত বার সিপিএম যে কায়দায় কেতুগ্রাম ১ ব্লকে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল, তৃণমূলও সে ভাবে হামলা চালিয়ে কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতি দখলের পরিকল্পনা করেছে।”
সিপিএমের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের গোলমাল ঠেকাতে প্রমীলা বাহিনীকে গণনাকেন্দ্রের সামনে রাখবে তারা। পুরুষরা থাকবে পিছনে। দলের কেতুগ্রাম ২ লোকাল সম্পাদক তমাল মাঝির বক্তব্য, “অন্তত তিন হাজার লোকের জমায়েত হবে গণনাকেন্দ্রের সামনে।” এ ছাড়াও বহিরাগতদের আটকাতে নানা জায়গায় বিরোধীরা শিবির করবে বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূলের কেতুগ্রাম ২ ব্লক সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলের পাল্টা অভিযোগ, “সিপিএমই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।” তৃণমূলের আরও অভিযোগ, গণনা পরবর্তী সময়ে কাটোয়া ১ ব্লকের নানা গ্রামে তাদের কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। |