শেষ দফায় নজর উত্তরে
গোলমাল চলছে, মালদহে গুলি, কোচবিহারে সংঘর্ষ
বাড়ি থেকে বের হতেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর দাদাকে গুলি করল কয়েকজন দুষ্কৃতী। বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ কলিয়াচক থানার জালুয়াবাথাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিবিগ্রাম এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। গুলিবিদ্ধ রিন্টু শেখকে (৩২)কে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভতি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রিন্টু শেখের পিঠে গুলি লেগেছে। অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। তদন্ত করছে।”
বুথের পথে ভোটকর্মী, নিরাপত্তারক্ষীরা। বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “কালিয়াচকে ওই এলাকায় আমরা গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিতে পারিনি। এমনকী, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারিনি। তবে আমরা কী ভাবে ওই এলাকায় গুলি চালাব?”
এদিকে দলের প্রার্থীকে গুলির ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীকে দায়ী করেছেন। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “জেলায় কংগ্রেসের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে শুরু করায় ডালুবাবু দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হারিয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার করতে ডালুবাবু কালিয়াচকসহ জেলার সমাজবিরোধীদের উসকানি দিচ্ছিল।ডালুবাবুর উসকানিতেই সিপিএমের সমাজবিরোধীরা উৎসাহিতত হয়ে আমাদের প্রার্থীর ভাইকে গুলি করেছে।”
এদিকে তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস তো কালিয়াচকের সমস্ত গুন্ডাদের দলে ঢুকিয়েছে। যারা গুলি করেছে তারা ওদের দলেরই গুন্ডা। গোষ্ঠী কোন্দলেই একে অপরকে গুলি চালিয়েছে। কে কাকে উসকানি দিচ্ছে মালদহের মানুষ জানেন।”
আজ উত্তরবঙ্গের চার জেলায় পঞ্চায়েত ভোট। বুথের পথে ভোটকর্মী,
নিরাপত্তারক্ষীরা। বুধবার জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জালুয়াবাথাল গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মারউফ শেখের দাদা রিন্টু শেখ আজকে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। বাড়ি থেকে কিছু পথ যেতেই সাতজন দুষ্কৃতী পিছন থেকে রিন্টু শেখকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরই রিন্টু শেখ রাস্তাতেই লুটিয়ে পরে। দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। এর পরে আশেপাশের লোকজন তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তৃণমূল কংগ্রেসের জালাউদ্দিন শেখ অভিযোগ করেছেন, “ভোটের দিন লাইন নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে রিন্টু শেখের গোলমাল হয়েছিল। তারই জেরে সিপিএমের দুস্কৃতীরা আজকে রিন্টুকে গুলি করেছে।”গোলমাল হয়েছে কোচবিহারেও। মঙ্গলবার রাতে তুফানগঞ্জ থানার বালাভূতে সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১০ জন জখম হন। তাদের মধ্যে ৪ জন কোচবিহার ও ১ জন তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্যদিকে মারুগঞ্জে ফের দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বাদানুবাদ থেকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় উভয়পক্ষের ৪ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে ৩ জনকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ ছাড়াও ওই রাতে দিনহাটার পেটলায় এক তৃণমূল সমর্থকদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিরুদ্ধে। ফরওয়ার্ড ব্লক ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “বালাভূতের গোলমালের ঘটনায় ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আলিপুরদুয়ারের কালচিনিতে ভোটের প্রস্তুতি। বুধবার ছবি তুলেছেন নারায়ণ দে।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার নির্বাচনে জেলায় গোলমালের আশঙ্কা করছেন যুযুধান সমস্ত শিবির। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন “পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরপেক্ষভাবে না কাজ করতে পারলে শান্তিপূর্ণ ভোটের আশা কম।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওসব ভিত্তিহীন কথা। আমরা শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। বিরোধীদের কাছেও ওই ব্যাপারে সহযোগিতা চাইছি।” বিজেপি কংগ্রেসের নেতারা জেলায় শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে সন্দিহান
এদিকে, সিপিএম কংগ্রেস সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এলাকা। মঙ্গলবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানার ঘিন্নিগাও এলাকাতে ঘটনাটি ঘটেছে। সিপিএম এর অভিযোগ, এদিন ঘিন্নিগাও এলাকাতে রাস্তার পাশে বসে থাকার সময় কংগ্রেসের সমর্থকেরা তাদের মারধর করে শূন্যে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। সিপিএমের ৩ জন কর্মী সমর্থক আহত হন।
যদিও কংগ্রেসের সদস্যরা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সিপিএম হামলা চালালে তাঁদের একজন মহিলা কর্মী আহত হন। ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলে, “ঘটনার খবর পেয়ে এলাকাতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদেরও এলাকায় পাঠানো হয়েছে।”
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠি এলাকায় সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। ৩০ জন তৃণমূল সমর্থকের বিরুদ্ধে ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সিপিএমের তরফে। তৃণমূলের তরফেও ১৬ জন সিপিএম সমর্থকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তৃণমূলের সমর্থকের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মাদারিহাটেও।
আজ ভোট। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় চলছে তারই প্রস্তুতি। কোচবিহারে ছবি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।
মঙ্গলবার রাতে তৃণমূলের এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থীর স্বামীর পায়ে কুড়ুল দিয়ে কোপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরএসপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের দাবি, মাদারিহাট থানা এলাকার দলদলিয়া গ্রামে রাঙালিবাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী আলপনা বর্মন তাঁর স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় কয়েকজন আরএসপি কর্মী কুড়ুল নিয়ে তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন বলে অভিযোগ।
প্রার্থীর স্বামীর পায়ে কুড়লের আঘাত লাগে বলে অভিযোগ। তাঁকে বীরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই ঘটনায় পাঁচ জনের নামে মাদারিহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও আরএসপি নেতা বিকাশ দাস অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের দলের কেউ হামলা করেনি। উল্টে তৃণমূলের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়।
দক্ষিণ দিনাজপুরে অবশ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের অভিযোগ, তাদের এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থীর বাড়িতে হামলা ও দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। হরিরামপুরের তৃণমূল নেতা সোনা পাল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
রাতের দিকে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় একটি গাড়ি থেকে দু’টি বোমা ও একটি গুলি উদ্ধার হয়। চোপড়া থানার চুটিয়াখোরে একটি ছোট গাড়িকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় এলাকাবাসীর। তারা গাড়িটিকে আটকাতেই পালিয়ে যায় গাড়ির চার জন আরোহী। পরে পুলিশ এসে গাড়ি থেকে উদ্ধার করে দু’টি বোমা ও একটি গুলি। বাসিন্দাদের ধারণা, বাকী অস্ত্র ওই আরোহীরা নিয়ে পালায়।
নজরে ত্রি-স্তর
গ্রাম পঞ্চায়েত ১৪৬ আসন ২৩৪৬।
পঞ্চায়েত সমিতি ১৩ আসন ৪২২।
জেলা পরিষদের আসন ৩৭।
মোট ভোটার ২১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪৮১।
মোট বুথ ২৭৪৭।
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী ৭৫৮০।
পঞ্চায়েত সমিতি প্রার্থী ১৫১৯।
জেলা পরিষদ প্রার্থী ২০৫।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আসন
গ্রাম পঞ্চায়েতে ০৯।
তৃণমূল ২। কংগ্রেস ২।
সিপিএম ৩। নির্দল ১। আরএসপি ১।
গ্রাম পঞ্চায়েত ৬৫ আসন ১০০২।
পঞ্চায়েত সমিতি ৮ আসন ১৯০।
জেলা পরিষদের ১৮ (১টি আসনে ভোট হচ্ছে না)।
মোট ভোটার ৯ লক্ষ ২৬০০।
মোট বুথ ১১৫৭।
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী ৩২৯৮।
পঞ্চায়েত সমিতি প্রার্থী ৬৭২।
জেলা পরিষদ মোট প্রার্থী ৯৭।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আসন
গ্রাম পঞ্চায়েত ১৪টি এবং পঞ্চায়েত সমিতি ২টি (সবই তৃণমূল)।
গঙ্গারামপুরের দমদমা গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে।
গ্রাম পঞ্চায়েত ৯৮ আসন ১৬৪৯।
পঞ্চায়েত সমিতি ৯ আসন ২৮৭।
জেলা পরিষদ আসন ২৬।
মোট ভোটার ১৫ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৩৯ জন।
মোট বুথ ১৭৬৯।
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী ৬৪৪৩।
পঞ্চায়েত সমিতি প্রার্থী ১২২৪।
জেলা পরিষদ প্রার্থী ১৪৮।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আসন
গ্রাম পঞ্চায়েতে ২টি।
দুটি আসনেই কংগ্রেসের মহিলা প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
গ্রাম পঞ্চায়েত ১২৮ আসন ১৯৬৬।
পঞ্চায়েত সমিতি ১২ আসন ৩৬৬।
জেলা পরিষদের আসন ৩৩।
মোট ভোটার ১৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩৯০ জন।
মোট বুথ ২২৮৮টি।
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী ৫৮৮৯।
পঞ্চায়েত সমিতি প্রার্থী ১২৩৭।
জেলা পরিষদ প্রার্থী ১৯২।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আসন
গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২৬ আসন (তৃণমূল)
পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৬ (সবই তৃণমূল)
৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.