হিংসার আবহেই আজ শেষ দফা ভোট
ত্তরে প্রাক নির্বাচনী সংঘর্ষ চলছেই। যেখানে ভোট মিটেছে, হিংসা অব্যাহত সেই জেলাগুলিতেও।
চতুর্থ দফার নির্বাচন পর্ব মিটে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেও বুধবার, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম কিংবা মালদহে ক্রমান্বয়ে অশান্তি চলল দিনভর। বোমা-গুলির বিক্ষিপ্ত লড়াই, শাসক-বিরোধী সংঘর্ষে বাড়িতে অগ্নি সংযোগের নালিশ, এমনকী সরকারি আমলাকে মারধরের ঔদ্ধত্যও বাদ পড়ল না। হিংসার এই ধারাবাহিকতায় এ দিন মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে নিহত হয়েছেন দু’জন। মালদহে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গুরুতর জখম এক যুবককে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।
সন্ত্রাসের এই আবহেই আজ, বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের চার জেলায় পঞ্চম ও শেষ পর্বের নির্বাচন।
চতুর্থ দফার নির্বাচন মিটতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি থেকে পাঠানো হয়েছিল উত্তরে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দুই দিনাজপুর, এই চার জেলাতে বুধবার থেকেই মোতায়েন হয়েছে ৫৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও এ দিন দুপুর থেকে কোচবিহার কিংবা উত্তর দিনাজপুরের আনাচ কানাচ থেকে আসতে থাকে হিংসার খবর।
কোচবিহারের তুফানগঞ্জ এলাকার বালাভূতে মঙ্গলবার রাতেই সংঘর্ষে জড়িয়েছিল সিপিএম ও শাসক দল। আহত হয়েছিলেন অন্তত ১০ জন। শাসক-বিরোধী সমর্থকদের বচসা থেকে বোমাবাজিতে গড়িয়েছিল তুফানগঞ্জের মারুগঞ্জের ঘটনাও। সেখানেও জখম হয়েছেন ৪ জন। দিনহাটার পেটলায় ফরওয়ার্ড ব্লক ও তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে পরস্পরের অগ্নি সংযোগের নালিশও এসেছে জেলা পুলিশের কাছে।
ফেরার প্রস্তুতি

হাওড়া স্টেশনে অস্ত্রশস্ত্র গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। বুধবার দেবস্মিতা চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চম দফার নির্বাচনে আগে কোচবিহার যে তেতে রয়েছে তা কবুল করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ এবং তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। উদয়নবাবু বলেন, “পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরপেক্ষ ভাবে কাজ না করতে পারলে শান্তিপূর্ণ ভোটের আশা কম।” রবীন্দ্রনাথবাবু পাল্টা বলছেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। বিরোধীদের কাছেও সহযোগিতা চাইছি।”
নির্বাচনের প্রাক্কালে উত্তপ্ত উত্তর দিনাজপুরও। গত দু-দিন ধরেই ওই জেলার চোপড়ায় সিপিএম-কংগ্রেস সংঘর্ষে বোমা-গুলির লড়াইয়ের অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। চোপড়ার ঘিন্নিগাও এলাকার ওই গণ্ডগোলের জন্য সিপিএম দায়ী করেছে কংগ্রেসকে। কংগ্রেস সমর্থকেরা শূন্যে গুলি ছুড়ে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়িয়েছে বলে পুলিশের কাছে নালিশ সিপিএমের। যথারীতি কংগ্রেস সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তবে, উত্তরের কোন ঘটনাই মালদহ বা মুর্শিদাবাদের মতো রক্তক্ষয়ী নয়। বুধবার, ভোট পরবর্তী মুর্শিদাবাদের সব চেয়ে বড় সংঘর্ষটি সাগরদিঘির বেলাইপাড়ায়। সেখানে শাসক দলের সঙ্গে সিপিএমের বোমার লড়াইয়ে মারা গিয়েছেন উম্মদ শেখ (৪২) নামে এক তৃণমূল সমর্থক। বোমার ঘায়ে গুরুতর জখম হয়েছেন অন্য তিন তৃণমূল কর্মীও। তাঁদের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সিপিএমের অবশ্য দাবি, বোমার আঘাতে নয়, বোমা বাঁধতে গিয়েই বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন উম্মদ। দলের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের চার জন বোমা বাঁধছিল। আচমকা তা ফেটেই ওই বিপত্তি ঘটে।” দ্বিতীয় প্রাণহাণির ঘটনাটি বীরভূমের রামপুরহাটের কাছে সইপুরে। মাছ ধরাকে ঘিরে সামান্য কথাকাটাকাটি চেহারা নেয় রাজনৈতিক সংঘর্ষের। সিপিএম এবং তৃণমূলের সেই হানাহানিতে পিটিয়ে মারা হয় হুমায়ুন মীর (৩২) নামে এক যুবককে। সিপিএমের দাবি, হুমায়ুন তাদের সমর্থক।
কড়া নজর

ভোট উপলক্ষে উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি স্কুলে কলকাতা পুলিশের কর্মী। বুধবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
মালদহের বৈষ্ণবনগরের ভগবানপুরে বুথেই কয়েকটি ব্যালটপেপার ফেলে এসেছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার। বুধবার সেই ঘটনার তদন্তেই গ্রামে গিয়েছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট আব্রাহাম আলম। সেই সময়ে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরা তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, ওই সরকারি আমলার চোখে সামান্য আঘাত লেগেছে। তাঁকে মালদহের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। মালদহের জেলাশাসক গোদলা কিরণ কুমার বলেন, “গুরুতর ঘটনা। ম্যাজিস্ট্রেটের উপর কংগ্রেসের লোকজন হামলা চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।”
মালদহের অন্য ঘটনাটি কালিয়াচকে। বাড়ি থেকে বেরোতেই রিন্টু শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রিন্টুর ভাই মারুফ শেখ এ বার স্থানীয় জালুয়াবাথান পঞ্চায়েতে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন। আহত রিন্টুকে ভর্তি করা হয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ এলাকায় রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে রাতেই অভিযুক্তদের ধরা যাবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র অবশ্য এ ঘটনার পিছনেও শাসক দলের অন্তর্কলহকেই দায়ী করেছেন। তাঁর যুক্তি, “ওই এলাকায় আমরা প্রার্থীই দিতে পারিনি। আমাদের কর্মীরা গিয়ে গুলি করার সাহস পাবে কী করে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.