|
|
|
|
দুশ্চিন্তায় জঙ্গলমহলের চাষিরা |
বৃষ্টি নেই, ধান রুইতে সমস্যা
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ভরা শ্রাবণ। কিন্তু বর্ষার বৃষ্টি কোথায়? কখনও-সখনও কালো মেঘ দেখে উজ্জ্বল হচ্ছে জঙ্গলমহলের চাষিদের মুখ। কিন্তু কয়েক পশলা বৃষ্টির পরই ফর্সা আকাশে রোদ্দুর ঝিলিক মারছে। ফের চাষিদের মুখে আশঙ্কার মেঘ। স্বস্তিতে নেই কৃষি দফতরও। গত মে মাসে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় ৩২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। জুন মাসে গড় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৫৫ মিলিমিটার। জুলাই মাসে মঙ্গলবার পর্যন্ত (২৩ জুলাই) বৃষ্টি হয়েছে মোট ১০৩ মিলিমিটার। অথচ গত বছর জুলাইয়ে বৃষ্টি হয়েছিল ৩৭২ মিলিমিটার। অর্থাৎ এ বার জুলাইয়ে ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় এখনও ৯৬,৭৯১ হেক্টর জমিতে ধান রোয়ার কাজ শুরুই করা যায়নি। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম মহকুমায় ৮টি ব্লকে মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ১,৬৮,৪৪৮ হেক্টর। গত বছর বর্ষায় ১,১৫,৭৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ এবং ১৪,৭৭৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছিল। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এবার এখনও পর্যন্ত মহকুমার ২৬,৭২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোওয়া (লাগানো) হয়েছে। আউশ ধান রোওয়া হয়েছে ৭,০৫০ হেক্টর জমিতে। অগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না হলে আমন ও আউশ চাষ ভীষণ রকম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ঝাড়গ্রাম মহকুমা খরাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ৮টি ব্লকের চাষিরা মূলত বৃষ্টি নির্ভর চাষ করেন। কংসাবতী প্রকল্পের আওতাধীন বেলপাহাড়ি, লালগড়, জামবনি, ঝাড়গ্রাম ও সাঁকরাইলের মতো ব্লকগুলির সিংহভাগ জমিতেই সেচের জল পৌঁছয় না। সরকারি ভাবে সেচের বন্দোবস্তও পর্যাপ্ত নয়। বেলপাহাড়ির আমলাশোল গ্রামের চাষি লক্ষ্মীকান্ত মুড়ার কথায়, “পাহাড়ি এলাকায় উঁচু জমিতে বর্ষার বৃষ্টি ছাড়া ধান রোওয়া অসম্ভব। সে রকম বৃষ্টি হচ্ছে না। ধান লাগানো যাচ্ছে না। আমরা ভীষণই চিন্তায় রয়েছি।” জামবনি ব্লকের মহুলি গ্রামের বলরাম পাতর এবং বেলিয়া গ্রামের সুকুমার দাসদের বক্তব্য, “এখনও এক ছটাক ধান লাগাতে পারিনি। আকাশ আমাদের ভাবাচ্ছে।” ঝাড়গ্রামের বনকাটি গ্রামের খেতমজুর বিমলা মাহাতো বলেন, “জমিতে কাদা না হলে ধান লাগাবো কী ভাবে? বৃষ্টি না হওয়ায় খেতমজুরের কাজ মিলছে না।”
লালগড়ের বৈতা অঞ্চলের গোয়ালডাঙা গ্রামের প্রবীণ চাষি পঞ্চানন মণ্ডলের কথায়, “বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে চাষের কাজ মার খাচ্ছে। কৃষি দফতর বিকল্প রবিশস্য চাষের আশ্বাস দিচ্ছে বটে, কিন্তু তাতে তো সারা বছরের সংসার চলবে না।” এর আগে ২০০৯-১০ এবং ২০১০-১১ অর্থবর্ষে বৃষ্টির অভাবে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। স্বভাবতই ভরা শ্রাবণে শরতের আকাশ দেখে চিন্তা বাড়ছে চাষিদের।
ঝাড়গ্রাম মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) দীনেশকুমার পাল বলেন, “এখনও সে ভাবে বৃষ্টি হয়নি। তবে, অগস্টের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হবে বলে আমরা আশাবাদী। পর্যাপ্ত বৃষ্টি যদি না হয়, তবে আমরা চাষিদের বিকল্প রবিশস্য চাষ করতে উৎসাহিত করব।” |
|
|
|
|
|