চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে বেদম মারধর করে মেরে ফেললেন কিছু গ্রামবাসী। মানবাজার থানার কদমা গ্রামে রবিবার গভীর রাতের ঘটনা। নিহতের নাম সোহন শবর (৪৫)। বাড়ি লাগোয়া জনড়া গ্রামে। সোমবার পুলিশ গ্রামে গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। নিহতের স্ত্রী পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “কদমা গ্রামে এক কৃষকের বাড়িতে ওই ব্যক্তি চুরি করতে ঢুকেছিলেন এই অভিযোগে কিছু লোক তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। খুনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।” সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। |
বাসিন্দাদের দাবি, রবিবার বেশি রাতে সোহন পাঁচিল টপকে পেশায় কৃষক কিঙ্কর কুম্ভকারের বাড়িতে চুরির মতলবে যান। পরে কিঙ্করবাবুর ছেলে বলরামপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র গোপীনাথ কুম্ভকারের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়। হাতে আঘাত পেয়ে মানবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি গোপীনাথ। তাঁর দাবি, ‘কিসের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আধো অন্ধকারে দেখি একটা লোক খাটের নীচ থেকে আমার জামা-কাপড় ভর্তি বাক্সটা মাথায় তুলে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি চিত্কার করে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। উঠে দাঁড়িয়ে ফের জাপটে ধরার চেষ্টা করতে লোকটা আমার হাতে ভোঁতা কোনও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। হাত পিছলে গেলেও ফের ওকে ধরি।” গোপীনাথের বাবা কিঙ্কর কুম্ভকারও দাবি করেন, “ছেলের চিত্কারে পড়শি ও গ্রামবাসীদের অনেকেই তত ক্ষণে আমাদের বাড়ি চলে এসেছিল। সবাই মিলে ওকে ধরে মনসামেলার দিকে নিয়ে যায়। তারপরে কী হয়েছে আমি জানি না।”
পুলিশ জানিয়েছে, সকালে তারা গ্রামে গিয়ে দেখে মনসামেলায় সোহনের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। তাঁর সারা দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। এ দিন দুুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, থমথমে অবস্থা। কেউ কথা বলছেন না। গ্রামের মনসামেলার কাছে দুই কিশোর খেলা করছিল। রাতে কী হয়েছিল, জানতে চাওয়ায় তারা দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। দুই যুবক এগিয়ে এসে বললেন, “কী হয়েছে আমরা জানি না।” পরে সোহনের স্ত্রী ঠাকুরমণি পরিজনদের নিয়ে থানায় এসে কিঙ্করবাবুর, তাঁর ভাই বিশ্বনাথ কুম্ভকার ও কিঙ্করবাবুর ছেলে গোপীনাথ কুম্ভকারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
ঠাকুরমণির দাবি, “মিথ্যা চুরির অভিযোগ তুলে আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে। রবিবার রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে স্বামী ঘুরতে বেড়িয়েছিল। বোধহয় মদের নেশায় ভুল করে কারও বাড়িতে ঢুকে পড়ে। কিন্তু তা বলে মানুষটাকে ওরা একেবারে মেরে ফেলবে!” তাঁর দেওক রাইমোহন বলেন, “ওঁরা নৃশংস ভাবে ভাইকে খুন করেছে। কঠিন শাস্তি দাবি করেছি।” তবে পুলিশের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, আগেও সোহনের বিরুদ্ধে এলাকায় ছোটখাটো অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ শবর খেড়িয়া কল্যাণ সমিতির প্রকল্প আধিকারিক প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, “সোহন বাঁশের ঝুড়ি, পেতে, খেঁজুর পাতার টুপি ভাল তৈরি করত। কেন তিনি ওই গ্রামে রাতে গিয়েছিলেন খোঁজ নেব। তবে এ ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা মানা যায় না।” |