সিপিএমের আমলে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরি হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে কাজে বাধা দিয়েছিলেন পশ্চিম মঙ্গলকোটের দীর্ঘসোঁয়া গ্রামের বাসিন্দারা। পুকুরের গার্ডওয়াল তৈরির সিমেন্টও আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই থেকে থমকে রাস্তা সংস্কার। এখন প্রশ্ন, নতুন পঞ্চায়েত কী সেই দাবি পূরণ করতে পারবে।
দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামবাসীরা মোরাম রাস্তা সংস্কার ও পুকুরের পাড় বাধানোর জন্য স্থানীয় গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েতের কর্তাদের কাছে দাবি জানাচ্ছিলেন। সিপিএম পরিচালিত বিগত গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েত কর্তারা দেড় বছর আগে বাসিন্দাদের দাবি পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। সেই মত একশো দিনের প্রকল্পে রাস্তা তৈরির জন্য মোরাম ও ঝামা ফেলা হয়। |
পুকুরের গার্ডওয়ালের তৈরিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু নিম্নমানের মোরাম ও ঝামা দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে চেয়েছিল সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত, এমন অভিযোগ তুলে কাজে বাধা দেন গ্রামবাসীরা। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের আনসারুল হক ও নির্মাণ সহায়ক প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় একটি মুচলেকায় স্বাক্ষর-সহ জানান, তাঁরা মঙ্গলকোটের বিডিও-কে বিষয়টি জানাবেন। বিডিও দফতরের বাস্তুকার দিয়ে তদন্ত করাবেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এর পর পাঁচ মাস কেটে যায়। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই পুকুরের গার্ডওয়াল তৈরি করা হয়। ফলে গত ১৭ মে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের সামনের পুকুরে গার্ডওয়ালটি জলের উপরে মুখ থুবড়ে পড়ে। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে বাসিন্দাদের। এরপরেই ওই পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক পরিস্থিতি দেখতে এলে বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁকে প্রাথমিক স্কুলে তালা দিয়ে আটকে রাখেন গ্রামবাসীরা। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকার পর মঙ্গলকোটের যুগ্ম বিডিও ওই গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে ওই নির্মাণ সহায়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, সাত দিন কেটে গেলেও কারও তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচটি পুকুরের মোট ৩০০ মিটার গার্ডওয়াল ও রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু এখনও মঙ্গলকোটের নতুনহাট-গুসকরা রাস্তা থেকে দীর্ঘসোঁয়া গ্রামের ভিতর সেচখাল পর্যন্ত আনুমানিক ১৩০০ মিটার রাস্তার পুরোটাই যাতায়াতের অযোগ্য। রাস্তার ধারে ঝামা ও মোরাম পড়েই রয়েছে। পঞ্চায়েতের অভিযোগ, মোরাম ও ঝামার বেশির ভাগটাই ‘চুরি’ গিয়েছে। গ্রামবাসীদের অবশ্য দাবি, কিছু চুরি হয়নি। রাস্তার গর্ত বোজানোর কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে মোরাম ও ঝামা।
|
গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। দলের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “সিপিএম পঞ্চায়েত ওই গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে কী করেছে তা দেখতে হবে। তার পর অবশ্যই গ্রামবাসীদের দাবি পূরণ করা হবে।” কিন্তু সিপিএম ব্যর্থ হল কেন? সিপিএমের ভাগীরথী অজয় জোনাল কমিটির সদস্য সৈয়দ বদরুদ্দোজার পাল্টা জবাব, “খাতায়-কলমে সিপিএম ক্ষমতায় থাকলেও বাস্তবে গত চার বছর তৃণমূল পঞ্চায়েত দখল করে রেখেছিল। ওই তৃণমূলের বিরুদ্ধেই মানুষ ক্ষোভ দেখিয়েছিল।” আর প্রশাসন? মঙ্গলকোট ব্লক কর্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, মে মাস থেকে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি।
তাহলে এ বার কি পরিবর্তন হবে? উত্তর নেই। গ্রামের এক প্রবীণ বটগাছতলায় দাঁড়িয়ে বলেন, “নানা রকম অজুহাত দিয়ে নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এক কথা, কাদা রাস্তা হাঁটব তাও মেনে নেব। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে দেব না।”
|