এক জন অধীর চৌধুরীর বর্তমান অনুগামী। অন্য জন ঘোরতর ‘অতীত’। জেলাপরিষদের বহরমপুরের ৪১ নম্বর আসনে লড়াইটা দুই অনুগামীর মধ্যেই।
কংগ্রেস ও তৃণমূলের দুই প্রার্থীর মধ্যে বয়সের ব্যবধান দু’দশক। তৃণমূলের সত্যেন চৌধুরী যখন মধ্য গগনে। কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার তখন সবে ওঠা সূর্য।
১৯৯৮-এ সত্যেন চৌধুরী কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ভোটে জিতে বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন। সে বার শিলাদিত্য মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের প্রার্থী। ২০০৩ সালে সত্যেন চৌধুরী ফের কংগ্রেসের ভোটে জয়ী হয়ে বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা হন। এর পরেই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বহরমপুর ছাড়তে হয় তাঁকে। দীর্ঘ সাত বছর তিনি বহরমপুর ঢুকতেই পারেননি। পরে আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু তত দিনে পেরিয়ে গিয়েছে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট।
ভাকুড়ি-১ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সত্যেনবাবুর অনুপস্থিতিতে ওই আসনে লড়াইয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয় পড়শি শিলাদিত্যকেই। সেই দিক থেকে গ্রামপঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে উত্তরণ ঘটেছে তাঁর। বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির ৫০টি আসনের মধ্যে ২৮টি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন নব্য যুবক শিলাদিত্য। তাঁকে জেলা কংগ্রেস সভাপতির আরও কাছাকাছি এনে দেয় ওই জয়। তাই জেলাপরিষদের ৪১ নম্বর আসনে প্রার্থী বাছার ক্ষেত্রে দলকে বিশেষ ভাবতে হয়নি।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য জেলাপরিষদের ৪১ নম্বর আসনে জেতেন কংগ্রেসের প্রার্থী। জেলাপরিষদের ওই ৪১ নম্বর আসনের মধ্যে রয়েছে ভাকুড়ি-১ ও ২, হরিদাসমাটি, নওদাপানুর ও রাজধরপাড়া পঞ্চায়েত। তার মধ্যে ভাকুড়ি-২ পঞ্চায়েত ছাড়া বাকি ৪টি পঞ্চায়েতই কংগ্রেসের দখলে। এ বছর প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট কিছুটা হলেও ব্যালট বাক্সে প্রভাব ফেলবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
যদিও ভোট ময়দানে আচমকা আগমন বলে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তৃণমূলের প্রার্থীকে উড়িয়ে দিলেও শিলাদিত্য হালদারের জয়ের পথ ততটা সুগম হবে না। কেননা, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের আমলে এলাকা উন্নয়ন থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। ভোটের বাজারে সেই ক্ষোভ উস্কে দেওয়া ছাড়াও তৃণমূলের প্রার্থীর প্রতি এলাকার মানুষের ‘সহানুভূতি’ রয়েছে। কারণ, এলাকাবাসী ‘কংগ্রেসের’ সত্যেন চৌধুরীকে এখনও ভুলতে পারেননি। সেই সত্যেন চৌধুরী এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে তাঁদের পাশে দাঁড়াতেন। সেই ভরসাতেই বুক বেঁধেছেন প্রাক্তন কংগ্রেসি সত্যেন। |