পূর্বে ভোটের হিসেব-নিকেশ
দুর্গরক্ষায় নিশ্চিত তৃণমূল,বামেদের নজরে ভোটের হার
ন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ত্রি-স্তরেই ভরাডুবি হয়েছিল বামেদের। ক্ষমতা হারানোর সেই শুরু। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে বাম-বিপর্যয় আরও বিস্তৃত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। লোকসভার দু’টি আসন তমলুক ও কাঁথি তাদের হারাতে হয়েছে। বিধানসভা ভোটেও জেলার ১৬টি আসনের সব কটি থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে বামফ্রন্টকে। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ভরাডুবির ধারা বজায় থাকবে বলেই বাম নেতৃত্বের ধারণা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির হার কিছুটা বাড়লেও জেলা পরিষদ-সহ অধিকাংশ পঞ্চায়েত দখলের আশা ফলপ্রকাশের আগেই ছেড়ে দিয়েছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। অন্য দিকে, তৃণমূল শিবির অনেকটাই নিশ্চিন্ত। জেলা পরিষদের ক্ষমতা ধরে রাখা ছাড়াও অধিকাংশ পঞ্চায়েত আসনে বিপুল জয়ের আশায় বর্তমান শাসক দল। তৃণমূল নেতৃত্ব আরও মনে করছেন, জেতা আসনের সংখ্যা গত বারের তুলনায় বাড়বে।
২০০২ সালে মেদিনীপুর জেলা ভেঙে তৈরি হয় পূর্ব মেদিনীপুর। তখন জেলা পরিষদ-সহ অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের দখলে ছিল। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বামফ্রন্টের জয়ের ধারা বজায় ছিল। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। ক্রমে সাংগঠনিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে সিপিএম তথা জেলা বামফ্রন্ট। গত পাঁচ বছর ধরে জেলা পরিষদে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। এই সময়কালে জেলার উন্নয়নে ব্যর্থতা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছে বামেরা। তবে জোরদার কোনও আ ন্দোলন করতে পারেনি। উল্টে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় নাম জড়ানোর জেরে লক্ষ্মণ শেঠ-সহ বেশ কয়েকজন প্রথম সারির নেতাকে আদালতের নির্দেশে জেলার বাইরে থাকতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করার জায়গাতেই ছিল না সিপিএম। তাও জেলা নেতৃত্ব মনে করছেন, গত পঞ্চায়েত ভোটের থেকে এ বার জেলায় সামগ্রিক ভাবে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের ভোট প্রাপ্তির হার বাড়বে। কিছু আসনও বাড়তে পারে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হয় শনিবার। সেখানে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা নিজেদের দায়িত্বে থাকা এলাকার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট পেশ করেন। সেই ফলাফল বিশ্লেষণ করার পর সিপিএম জেলা নেতৃত্ব মনে করছেন, জেলা পরিষদের ৬০টি আসনের মধ্যে ২০-২২টি জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। গত বার বামেরা জিতেছিল ১৭টি আসন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক গুড়িয়া বলেন, “এ বার প্রচণ্ড কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়তে হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রাথমিক পর্যালোচনার পর আমাদের অনুমান, জেলা পরিষদে আমাদের আসনপ্রাপ্তি কিছুটা বাড়বে। তবে জেলা পরিষদ দখলের মতো গরিষ্ঠতা হবে না। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও আমাদের আসন সংখ্যা বাড়বে। ভোট প্রাপ্তির হার বাড়ারও ইঙ্গিত মিলেছে।” সিপিএমের অন্দরের খবর, তমলুক ও হলদিয়া মহকুমায় ভাল ফলের আশা করছে দল। তবে কাঁথি ও এগরা মহকুমায় ফল ভাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নন্দীগ্রাম-১, ২, খেজুরি-১, ২, ভগবানপুর-২ , এগরা-২ ব্লকে তৃণমূলের সন্ত্রাসে ভোট স্বাভাবিক ভাবে হয়নি বলে সিপিএমের অভিযোগ। তাই এইসব এলাকায় দলের কর্মী-সমর্থকেরা অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। আবার কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, মহিষাদল, চণ্ডীপুর, নন্দকুমার, সুতাহাটা, হলদিয়া, ভগবানপুর-১, এগরা-২ ব্লকে ভোট তুলনায় ‘সন্ত্রাস মুক্ত’ ছিল। সব মিলিয়ে ভোটপ্রাপ্তির হার বাড়ার আশায় সিপিএম নেতৃত্ব।
জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে গতবার বামফ্রন্টের দখলে ৫টি। এ বার দুটি বেড়ে সংখ্যাটা ৭ হবে বলে সিপিএম নেতৃত্বের অনুমান। আর ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬০-৬৫টি দখলে রাখার আশা করছে বামেরা। অন্য দিকে, স্ত্রি-স্তরেই বিপুল জয় নিয়ে এক অর্থে নিশ্চিন্ত তৃণমূল। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “গত বারের চেয়ে এ বার জেলা পরিষদে আরও বেশি আসন জিতে গরিষ্ঠতা পাবে আমাদের দল। প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী জেলা পরিষদের ৬০টি আসনের মধ্যে ৫০টির বেশি আসনে আমাদের প্রার্থীরা জিতবেন।” জেলার এই তৃণমূল নেতা আরও জানান, ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২২-২৩টি আর ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০০টিতে তাঁরা সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবেন। তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যালোচনা অনুযায় নন্দীগ্রাম-১, ২, খেজুরি-১ ,২, ভগবানপুর- ২ ব্লকের সব জেলা পরিষদ আসনেই জয় নিশ্চিত। বাকি এলাকার মধ্যে পাঁশকুড়া-১, কোলাঘাট, চণ্ডীপুর, ময়না, নন্দকুমার, শহিদ মাতঙ্গিনী, হলদিয়া, ভগবানপুর -১ ব্লকে কিছু আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মামুদ হোসেনের বক্তব্য, “শুধু আসন সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, জেলায় উন্নয়নের কাজের জোরেই আমাদের প্রতি জন-সমর্থনের হার আরও বাড়বে। ফলে জেলায় এ বারও জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.