সুন্দরবন এগিয়ে চলেছে সর্বনাশের দিকে’ (১২-৬) তুষার কাঞ্জিলালের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাঁর লেখাটির প্রেক্ষিতে এই অবতারণা। আমি সুন্দরবনের মেয়ে। জানি, আয়লা বিধ্বস্ত গত দুই বছরে (আয়লার পরের বছর অল্প বৃষ্টি) সুন্দরবনের মানুষ সত্যিই বিধ্বস্ত। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই প্রথম নয়। পরিসংখ্যান বলে, ঘূর্ণিঝড়-নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবন বারবার বিধ্বস্ত করেছে সুন্দরবনকে। সরকারি সাহায্যে রং খোঁজা হয়। নানা রকম টানাপড়েনে অনেকেই কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। অস্বীকার করার উপায় নেই আয়লার পরে বেশি সংখ্যক মানুষ কলকাতা ও তার আশপাশে, দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে অথবা আন্দামানের মতো দূরের জায়গায় অর্থোপার্জনের জন্য পাড়ি দিয়েছেন। শিল্পশহরে যাঁরা শ্রমিক হিসেবে কর্মরত, তাঁরা সত্যিই গ্রামের কুঁড়েঘরের মায়া কাটিয়ে নিয়মানুযায়ী শহরের বস্তিতে অভ্যস্ত হয়েছেন। সে তো তাদের পারিবারিক দায়দায়িত্ব আর মায়ামমতাভরা পরিবারের স্বার্থে। |
এই কষ্টকর অবস্থার মধ্যেও সুন্দরবনের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। স্কুলছুট হয়েছে অল্পসংখ্যক। এই পরিকাঠামো, দারিদ্র সুন্দরবনে ছিল। এর মধ্যেই তাদের লেখাপড়া করতে হয়েছে এবং দেশ জুড়ে, বিশ্ব জুড়ে মাথা উঁচু করে জায়গা করে নিয়েছেন অনেকেই। সুন্দরবনের প্রাইমারি স্কুল থেকে পাশ করে অনেকেই সম্মানজনক জায়গা করে নিয়েছেন বহু ক্ষেত্রে। আবার জন্মভূমি সুন্দরবনের কথা মনে রেখে কেরিয়ারের কথা না-ভেবে সুন্দরবনের মানুষের সেবায় প্রাণপাত করছেন এমন অভিজ্ঞ ডাক্তারও ওখানে আছেন। যেমন, গোসাবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. গিরীন্দ্রনাথ মণ্ডল অক্লান্ত পরিশ্রম করে পাগল পাগল চেহারায় ক্লান্তিহীন শয়ে শয়ে পেশেন্ট দেখে চলেছেন ওই পরিকাঠামোতেই। প্রচারের আলো বোধহয় পান না। অথচ তাঁর যোগ্যতা শহরের যে কোনও হাসপাতালে তাঁকে জায়গা করে দিতে পারত।
প্রাকৃতিক নিয়মে সুন্দরবনের কী হবে জানি না। সুন্দরবনের মানুষ হিসেবে নিজেকে তথা ওখানকার মানুষদের বাঁচার লড়াইকে আমি কুর্নিশ করি। আমরা এগোব কারও দয়ায় নয়, আমরা এগোব নাগরিক অধিকারের উপর দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে।
কবিতা মণ্ডল। শিক্ষিকা, ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়, কলকাতা-৯
|
সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ তুষার কাঞ্জিলাল তাঁর নিবন্ধে আয়লা পরবর্তী সময়ে সুন্দরবন থেকে ‘এক্সোডাস’ বা গণনির্গমন বিষয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এক জন সুন্দরবনবাসী হিসেবে তার শরিক হয়েও বলছি, এই ‘এক্সোডাসে’র কিছু ইতিবাচক দিক আছে। তুষারবাবু নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের গবেষণালব্ধ অনুসন্ধান উল্লেখ করে জানিয়েছেন, ‘গত একশো বছরে সুন্দরবনে ভৌগোলিক ভূমি ভাগের আয়তন কয়েকশো কিলোমিটার কমেছে।’। সমুদ্র-থাবায় ক্রমক্ষয়িষ্ণু সাগরদ্বীপের ধবলাট অঞ্চল, ঘোড়ামারা দ্বীপ প্রভৃতি সে কথার প্রমাণ দেয়। আবার তুষারবাবুর কথায়, ‘মানুষ বেড়েছে বিপুল গতিতে’। ফলে, অতিরিক্ত মানুষের ক্ষতিকর চাপ পড়ছে সুন্দরবনের প্রকৃতি-পরিবেশের উপর। বিকল্প জীবিকার অভাবে মানুষ নদীতটের বাদাবন ধ্বংস, মাছ-কাঁকড়া ইত্যাদির বংশনাশ করে চলেছে নির্বিচারে। ফলে, ত্বরান্বিত হচ্ছে পরিবেশ-ভঙ্গুর সুন্দরবনের বিপন্নতা। এমতাবস্থায় কিছু মানুষ যদি সুন্দরবনের বাইরে গিয়ে কষ্ট করে হলেও রোজগার করে, বসত গড়ে, তবে তা সুন্দরবন ও সেই সব মানুষের জন্য খানিক হলেও মঙ্গলজনক হয়। তবুও এই ‘এক্সোডাস’ যদি একান্তই ঠেকাতে হয়, তা হলে তিনটি জিনিস জরুরি। ১) মজবুত নদীবাঁধ (যা জমিজটের দরুন কবে হবে তা কেউ জানে না)। ২) বিকল্প জীবিকার সংস্থান। ৩) বিশ্ব উষ্ণায়নের গ্রাস থেকে বাঁচাতে সুন্দরবন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে নিরন্তর প্রচার ও আন্দোলন। গণমাধ্যম ও নানা সংগঠনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া সুন্দরবনের মানুষরাও কিন্তু এ বিষয়ে কাজে আসতে পারেন। শুধুমাত্র সুন্দরবনে আটকে থেকে কিন্তু সুন্দরবনকে রক্ষা করা যাবে না।
প্রণবকুমার মাটিয়া। সহশিক্ষক, দক্ষিণ মহেন্দ্রপুর এস বি হাইস্কুল,
পাথরপ্রতিমা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
|
১৯৭২-এ ‘যায় রে যায় রে, বেলা যে বয়ে যায় রে...’ গানটি দ্বৈত কণ্ঠে গেয়েছিলেন আশা ভোঁসলে ও রাহুলদেব বর্মন। স্বপন চক্রবর্তীর লেখা গানটিতে সুর দিয়েছিলেন রাহুলদেবই। এই গানটির প্রথমে এক সংলাপের মধ্য দিয়ে তিনি দলের তিন কান্ডারিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন শ্রোতাদের সঙ্গে। এঁরা হলেন মনোহরি সিংহ, বাসু চক্রবর্তী, মারুতি রাউথ। নেপথ্য শিল্পীকে রাহুলদেব সামনে আনলেও ২০১০-এর ১৩ জুলাই মৃত্যুর পর বিস্মৃতই রয়ে গেলেন মনোহরি সিংহ। নেপালি পরিবারের সদস্য হলেও জন্মসূত্রে ও কর্মসূত্রে তিনি ছিলেন খাঁটি বাঙালি। |
তাঁর জন্ম এই বাংলায় ১৯৩১-এর ৮ মার্চ। সঙ্গীতজীবন শুরু হয় সুরকার সলিল চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় পরবর্তী কালে মুম্বই যাওয়া। হিন্দি ছবিতে প্রথম সাফল্য পান শচীনদেব বর্মন সুরারোপিত ছবি ‘সিতারোঁ সে আগে’ (১৯৫৮)-তে। কাজ করেছেন বহু সুরকারের সঙ্গে। তবে রাহুলদেব বর্মনের প্রধান তিন সহযোগীর এক জন হিসেবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন। ’৭০-এর শেষ দিকে বাসু চক্রবর্তীকে নিয়ে জুটি বেঁধে বেশ কয়েকটি হিন্দি ও বাংলা গানের সুরারোপ করেন। স্যাক্সোফোন ছাড়াও বাজাতে পারতেন বাঁশি, ক্ল্যারিয়োনেট, ম্যান্ডোলিন প্রভৃতি। কর্মসূত্রে মুম্বইবাসী হলেও কলকাতার প্রতি ছিল তাঁর গভীর টান। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও কলকাতায় বেশ কয়েক বার এসেছিলেন ‘রাহুলদেব স্মৃতি সন্ধ্যা’য় যোগ দিতে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয় দীর্ঘ পাঁচ দশকের এক বর্ণময় সঙ্গীতজীবনের।
অভিজিৎ দাস। কলকাতা-৭৫ |