লগ্নির বাজার এখনও
প্রতিকূলতায় ভরা
টাকার পতন রুখতে এবং অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে গত সপ্তাহে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং অর্থ মন্ত্রক। এতে অবশ্য তাৎক্ষণিক সুফল এখনও তেমন দেখা যায়নি। দীর্ঘ মেয়াদেও ফল কতটা ফলবে, বিভিন্ন মহলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে তা নিয়েও।
শেয়ার সূচক দেখে হয়তো মনে হবে, বাজার বেজায় খুশি এই সব সিদ্ধান্তে আসলে কিন্তু তা নয়। একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, সূচকের যে উঁচু স্তম্ভ তৈরি হয়েছে, তার ভেতরটা কিন্তু বেশ ফাঁপা। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে যে-কোনও সময়ে।
সূচককে এতটা উঁচু জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে মাত্র কয়েকটি শেয়ার। ইনফোসিস, টিসিএস, আইটিসি, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, রিলায়্যান্স ইত্যাদির মতো কয়েকটি হেভিওয়েটকে বাদ দিলে অন্যদের অবস্থা বেশ খারাপ। সুদ কমানোর বদলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরোক্ষ ভাবে সুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বেশির ভাগ ব্যাঙ্ক শেয়ার। সেনসেক্স ২০ হাজারের উপরে, অথচ স্টেট ব্যাঙ্ক শেয়ারের দাম মাত্র ১৮০০ টাকা। এটা আদৌ মেনে নিতে পারছেন না দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক শেয়ারের অসংখ্য লগ্নিকারী।
দেশের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ায় অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণও অনেকটা করে বেড়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কের। এ ছাড়া বাজারে বন্ডের দাম ভাল রকম নেমে আসায় বেশ কিছুটা লোকসান নিতে হতে পারে ব্যাঙ্কগুলিকে।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে বেশ ভাল আর্থিক ফলাফল উপহার দিয়েছে কয়েকটি অগ্রণী কোম্পানি। তবে মনে রাখতে হবে, খারাপ ফলাফলগুলি সাধারণত পরের দিকে আসে। দেখতে হবে ইস্পাত, সিমেন্ট, মূলধনী পণ্য এবং গাড়ি সংস্থাগুলি কেমন ফলাফল করে।
মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ সংস্থাগুলির অবস্থা বেশ খারাপ। অর্থাৎ শুধুমাত্র সূচক দেখে গোটা অর্থনীতির বিচার করলে ভুল হবে। ভাল করে লক্ষ করলে বোঝা যাবে, সূচক এতটা উঠলেও অনেক ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ-ই সেই অনুপাতে বাড়েনি। বন্ডের দামে অস্বাভাবিক পতন হওয়ায় বেশ খারাপ অবস্থা ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডগুলিরও। সব মিলিয়ে লগ্নির বাজার এখন অনিশ্চয়তা এবং প্রতিকূলতায় ভরা। এই পরিস্থিতিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে, বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশের কমই হবে।
এ বার একনজরে দেখে নেওয়া যাক, টাকা এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের নির্দেশিত দাওয়াইগুলি। এগুলি সংক্ষেপে এই রকম:
সোজা পথে না-বাড়িয়ে পরোক্ষ ভাবে সুদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। উদ্দেশ্য, এতে বন্ডের ইল্ড অর্থাৎ প্রকৃত আয় বাড়বে এবং তাতে উৎসাহিত হয়ে বিদেশি লগ্নিকারীরা বেশি করে বন্ডে লগ্নি করবে। অন্য দিকে এই সুদ বৃদ্ধিতে ছোট মেয়াদে বাড়ি এবং গাড়ি ঋণে সুদ বেড়ে যেতে পারে, যা শিল্পের বর্তমান অবস্থায় আদৌ কাম্য নয়। বাজারে টাকার জোগান কমাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত সপ্তাহে ১২,০০০ কোটি টাকা শুষে নেওয়ার উদ্দেশ্যে যে-বন্ড বাজারে ছেড়েছিল, তার জন্য এসেছে মাত্র ২৫০০ কোটি টাকার আবেদন। এই ইস্যু সফল না-হওয়ায় নগদ জমার অনুপাত অর্থাৎ সিআরআর বাড়িয়ে টাকা শুষে নেওয়া হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। সুদ এবং সিআরআর বৃদ্ধি, দুটোই শিল্প এবং শেয়ার বাজারের বেশ অপছন্দ।
ইক্যুইটি এবং বন্ড ফান্ড দুইয়েরই অবস্থা খারাপ হওয়ায় ইউনিট বিক্রির (রিডেম্পশন) চাপ এখন প্রবল। হঠাৎ এত টাকার জোগান দেওয়া ফান্ডগুলির পক্ষে শক্ত। এ কথা মাথায় রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ১০.২৫% সুদে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পকে ২৫,০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ২০০৮-এর বিশ্ব-মন্দার সময়ে এ ধরনের পদক্ষেপ করা হয়। এতে কিন্তু বাজারে টাকার জোগান বাড়বে।
প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির (এফডিআই) পথ সুগম করা হয়েছে। বাড়ানোও হয়েছে কোনও কোনও শিল্পে। এর মধ্যে আছে পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস, বিমা, একক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসা, টেলিকম পরিষেবা ইত্যাদি। এই সিদ্ধান্তের সুফল রাতারাতি পাওয়া যাবে না, সময় লাগবে। তবে এর মাধ্যমে সরকার বাজারকে এই বার্তা দিল যে, তারা সংস্কারের পথ থেকে সরে যায়নি।
এখনও পর্যন্ত যে-সব ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, মোটের উপর তা ভালই বলতে হবে। ইনফোসিসের পর ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস-ও। প্রথম তিন মাসে তারা প্রায় ১৮,০০০ কোটি টাকা আয়ের উপর ঘরে তুলেছে ৩,৮৩১ কোটির নিট মুনাফা। বিশ্লেষকদের আশার তুলনায় লাভের অঙ্ক বেশি হওয়ায় টিসিএস শেয়ার পৌঁছে গিয়েছে সর্বকালীন উচ্চতায়।
রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের লাভ বেড়েছে ১৯%। ৯০,৫৮৯ কোটি টাকা আয়ের উপর কোম্পানির মুনাফা ৫,৩৫২ কোটি টাকা। দেশের বৃহত্তম গৃহঋণ কোম্পানি এইচডিএফসি-র লাভ ১,০০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ১,১৭৩ কোটিতে। ৩৮.৫% লাভ বেড়েছে রেটিং এজেন্সি ক্রিসিল-এর। ইউকো ব্যাঙ্কের মুনাফা ৪১% বেড়ে পৌঁছেছে ৫১১ কোটি টাকায়। ২২% মুনাফা বেড়েছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের। কর দেওয়ার পর ব্যাঙ্কের লাভ ১,৪০৯ কোটি টাকা। ৪২৭ কোটি টাকা থেকে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের লাভ নেমে এসেছে ৩০৭ কোটি টাকায়। ১৪ অগস্টের মধ্যে প্রকাশিত হয়ে যাবে বাকি ফলাফল। এ পর্যন্ত প্রকাশিত ভাল কোম্পানি ফলাফল ছাড়া আর যা বাজারের পক্ষে ভাল, তা হল পর্যাপ্ত বর্ষা। ফসল ভাল হলে খাদ্যপণ্যের মূল্য কমবে এবং গ্রামাঞ্চলে শিল্পপণ্যের চাহিদা বাড়বে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাচ্ছে কিছুটা আশার আলো।
শেয়ার, বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডের আকর্ষণ কমায় এবং পন্জি প্রকল্পগুলির প্রতি মানুষের আস্থা তলানিতে ঠেকায় আবার ভিড় জমতে শুরু করেছে সনাতন ডাকঘরে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে। যেখানে আগের গোটা বছরে এই রাজ্যে নিট সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ১৭৮৯ কোটি টাকা, সেখানে ডাক বিভাগের বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে জমা পড়েছে ৫৬০ কোটি টাকা। অনেক ক্ষেত্রে আয় এবং সুদের হার কমে আসায় তুলনামূলক ভাবে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলি। সুরক্ষার দিক থেকেও জায়গাটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ।

পুরনো খবর:
জেসিআই মারফত রাজ্যে বাড়তি পাট কেনার দাবি
পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে-পরিমাণ পাট কেনা হয়, তার অন্তত ২০-২৫ শতাংশ জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (জেসিআই)-র মাধ্যমে কেনার দাবি তুললেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। সম্প্রতি রাজ্য সফররত কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী কে সম্বাশিব রাওয়ের কাছে এই দাবি জানান তিনি। সৌগতবাবুর যুক্তি, এ রাজ্যে যে- পরিমাণ পাট উৎপাদন হয়, তার সামান্য অংশ (৫-১০%) জেসিআই সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে নায্যমূল্যে কেনে। পশ্চিমবঙ্গের পাট চাষিদের স্বার্থে অবিলম্বে এর পরিমাণ বাড়ানোর দাবি করেছেন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে জেসিআই সমস্ত রকম নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কর্মীর অভাবেও সঙ্কটে পড়েছে সংস্থা। তৃণমূল সাংসদের দাবি, জেসিআই কর্মীদের অবসরের বয়স এখন ৫৮ বছর। তা বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হলে অম্তত কিছু কর্মী থাকবেন। তা না-হলে স্রেফ কর্মীর অভাবেই জেসিআইয়ের কাজকর্ম শিকেয় উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.