রাস্তা তৈরির জন্য তিন বছর আগে ইট, মোরাম ফেলার কাজ শুরু হয়েছিল। চওড়া করে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল নির্দিষ্ট টাকাও। কিন্তু তিন বছর কেটে গেলেও কালনার নিভুজিবাজার থেকে হরিশঙ্করপুর পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তার হাল রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। রাস্তার কাজ কবে শুরু হবে, নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাতে পারেনি পূর্ত দফতর।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকা রাস্তাটির দু’পাশ চওড়া করে নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে ৩ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। সেই অনুযায়ী একটি ঠিকাদার সংস্থা দু’পাশে মাটি ফেলে কাজ শুরু করে দেয়। রাস্তার পুরনো পাথর তুলে ফেলার কাজও আরম্ভ করে ওই সংস্থাটি। কিন্তু এর পর কাজ ব্যাহত হয়। এলাকার চাষিরা দাবি করেন, প্রায় তিন দশক আগে এই রাস্তা তৈরির জন্য তাঁরা জমি দিয়েছিলেন। তবে এতগুলো বছর কেটে গেলেও, অনেকেই কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। প্রশাসনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। তাই যত দিন না তাঁদের ক্ষতিপূরণের টাকা মেটানো হচ্ছে, তত দিন রাস্তার কাজ করতে দেওয়া যাবে না, জানিয়ে দিয়েছেন ওই চাষিরা। প্রশাসনের তরফে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও, তা পাননি চাষিরা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা তৈরির কাজ। ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঠিকাদার সংস্থাটি আদালতের দ্বারস্থ হয়। |
সারা দিন প্রচুর যানবাহন চলাচল করে এই রাস্তায়। মাঝেমধ্যে রাস্তা মেরামতিতে কিছু ইট এবং মোরাম ফেলা হলেও তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে রাস্তার বেশির ভাগ অংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাঘনাপাড়া থেকে হরিশঙ্কর মোড় পর্যন্ত এলাকায় রয়েছে অজস্র বড় গর্ত। ফলে ভারী যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হয়। কৃষ্ণ ঘোষ নামে এক বাসচালক বলেন, “এই রাস্তায় আস্তে গাড়ি চালিয়েও বিপদ এড়ানো যায় না। মাঝেমধ্যেই খানাখন্দে বসে যায় বাসের চাকা। সব থেকে বেশি অসুবিধা হয় বর্ষাকালে। কারণ, এই সময়ে রাস্তার মধ্যে থাকা গর্তগুলি জলে ভরে থাকে। ফলে বোঝা যায় না গর্তগুলি কতটা গভীর।” তাঁর দাবি, যত দিন যাচ্ছে তত এই রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। বর্ষায় পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বড় বড় গর্ত ছাড়াও রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা রাস্তার পাথর। সেখান দিয়ে মোটরবাইক, সাইকেল চালানো দুষ্কর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেহাল রাস্তায় মোটরবাইক থেকে পড়ে ইতিমধ্যে জখম হয়েছেন বহু যুবক। এক মোটরবাইক আরোহী জাফর শেখের কথায়, “এই রাস্তার পরিস্থিতি যাঁদের আগাম জানা নেই তাঁরা বেশি বিপাকে পড়েন। যে কোনও সময়ে গর্তে গাড়ি পড়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারেন চালক।” তাঁর আরও দাবি, রাস্তার জন্যই যানবাহনের যন্ত্রাংশ ভাঙছে।
দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তার এমন বেহাল থাকায় ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। বাঘনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিক্রম ঘোষের বক্তব্য, “এই রাস্তার আশপাশে রয়েছে ৬০টিরও বেশি গ্রাম। সেখানকার বহু বাসিন্দাদেরই নানা প্রয়োজনে বাসে যাতায়াত করতে হয়। বাসে উঠলেই বেহাল রাস্তায় ঝাঁকুনি শুরু হয়। অনেক যাত্রী বাসেই চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। প্রশাসনের অবিলম্বে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
জমি দিয়েও ক্ষতিপূরণ না পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ চাষিরাও রাস্তার হাল নিয়ে বিরক্ত। উপলতি গ্রামের এমনই এক চাষি সঞ্জয় পানের কথায়, “আমরা বছর তিনেক আগে রাস্তার কাজ বন্ধ করে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে ক্ষতিপূরণের নিশ্চিত আশ্বাস দাবি করেছিলাম। তা পাইনি। এত দিনে না রাস্তা ঠিক হল, না ক্ষতিপূরণ পেলাম। পুরো বিষয়টিই দুর্ভাগ্যজনক।”
পূর্ত দফতরের সড়ক বিভাগের কালনা শাখার সহ-বাস্তুকার সুনীতি বিশ্বাস জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে রয়েছে। আপাতত এই রাস্তার ব্যাপারে এখনও কোনও নির্দেশ কর্তৃপক্ষ দেননি। দিলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে, আশ্বাস তাঁর। |