|
|
|
|
জীবনের নাম হাফ সিরিয়াস
জটিল ভাবে ভাবলেই জটিল। বিন্দাস নিলেই সহজ।
জেন নেক্সটের কলার টিউন? খোঁজ নিলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
সিন ১: অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সেন্টার কোর্ট। মারিয়া শারাপোভার হাবভাব নকল করছেন নোভাক জোকোভিচ। হাসিতে ফেটে পড়ছে দর্শক। যে উইম্বলডনে সব সাদা না-পরলে কোর্টেই প্রবেশ করা যায় না, তেমন গোঁড়া জায়গায় ‘মিমিক্রি’! সাধে এটিপি র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে থাকা ২৬ বছরের ছেলেটার ডাকনাম ‘জোকার’!
সিন ২: হোটেল লবি। স্পোর্টস রুম থেকে বেরিয়ে আসছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। পায়ের জুতো হাতে। কারণ টেবল টেনিস রুমে স্টাডওয়ালা জুতোয় খেলা যায় না। লবি ভর্তি লোক, কিন্তু ৩২ বছর বয়সী ‘ক্যাপ্টেন কুল’য়ের তাতে কিছু যায় আসে না।
সিন ৩: টেক্সাসের এক ক্লাবের ওপেন মাইক। গিটার বাজিয়ে গান গাইছেন রবার্ট প্যাটিনসন। ‘টোয়াইলাইট’ সিরিজের সাফল্য টাইম পত্রিকার সব থেকে প্রভাবশালী একশোর তালিকায় ঢুকিয়ে দিতে পারে। কিন্তু বছর ২৭-য়ের ‘স্পাঙ্ক র্যানসাম’য়ের কাছে গান সব সময়ই ‘ব্যাক আপ কেরিয়ার’! |
|
কী বলবেন জেন নেক্সট-য়ের এই অ্যাটিটিউডকে? টেক ইট ইজি? হাফ সিরিয়াস?
মনস্তত্ত্ববিদদের ভাষায় দু’টোই। জীবনের যে কোনও পরিস্থিতিকে সহজে, জেন ওয়াইয়ের ভাষায় ‘কুললি’, হ্যান্ডেল করা। কিন্তু কেন এমন অ্যাটিটিউড? “দেখুন, টেক ইট ইজি ব্যাপারটা আসে তখনই, যখন আপনি কোনও কিছুতে ভীষণ কনফিডেন্ট থাকেন। লোকে আত্মবিশ্বাসী এই হাবভাবটাই টেক ইট ইজি মনোভাব হিসেবে দেখে। সেটা কিন্তু আদৌ ঔদ্ধত্য নয়। জীবনকে এমন হাফ সিরিয়াসলি নিলে অনেকটা চাপ কমে যায়। তবে এই অ্যাটিটিউডটা যে শুধু এই জেনারেশনেই দেখা যায় তা নয়, আগের জেনারেশনেও দেখা গেছে। কিন্তু জেন নেক্সটের চারিদিকে এত চাপ যে, অনেক সময়ই তারা টেক ইট ইজি খোলসে নিজেদের ঢেকে নেয়। যদিও জীবনের প্রতি এই অ্যাপ্রোচটা আসলে কিন্তু চলতে ভীষণ সাহায্য করে,” জানালেন মনস্তত্ত্ববিদ জয়রঞ্জন রাম।
মানে জীবন যদি তোমার দিকে লেবু ছুড়ে মারে, লেমোনেড বানিয়ো না, টাকিলা আর লবণ পাও কি না দেখো!
গ্লাস সব সময় অর্ধেক ভরা
সমাজতত্ত্ববিদরা টেক ইট ইজি মনোভাবের জয়গান অনেক দিন থেকেই গেয়ে আসছেন। তাঁদের মতে, যে কোনও ঘটনারই ভাল-খারাপ দু’টো দিক আছে। কেন শুধু খারাপ দিকটা দেখবেন? এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী শোনালেন তাঁর এক অভিজ্ঞতার কথা, “আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসি। ‘গানের ওপারে’র পুপে হওয়ারও আগে একটা সিরিয়ালে অভিনয় করতাম। একটাই এসি মেক আপ ভ্যান ছিল প্রোডাকশনে। আমার জায়গা হত না সেখানে। |
‘হাফ সিরিয়াস’ মুমতাজ। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
আমাদের মতো জুনিয়র আর্টিস্টরা অনেকেই সেটা নিয়ে হা-হুতাশ করত। ক্ষোভও দেখাত কখনও কখনও। আমি তা করিনি। নন-এসিতেই থাকতাম। কিন্তু সবার মধ্যে থেকে বিভিন্ন লোকের চরিত্র অবজার্ভ করতাম, যেটা পরে গিয়ে ডেফিনিটলি আমার অভিনয়ে কাজে আসে। এই সুযোগটা তো এসি মেক আপ ভ্যানে বসে থাকলে পেতাম না। আমার থিয়োরি হল অন্যের ওপর মাথা গরম করে কেন নিজের ব্লাড প্রেশার বাড়াব! টেক ইট ইজি, বস।”
কনফিডেন্সটাই আসল
কিন্তু বললেই তো আর জীবনকে সহজ ভাবে নেওয়া যায় না। জীবনকে সহজ ভাবে নেওয়ার সিক্রেটটা কী? “আমি নিজে হাফ-সিরিয়াস হওয়ায় বিশ্বাসী নই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিরাট কোহলির মতো ম্যাচের আগের দিন পার্টি করব না। তার একটা কারণ হয়তো, সেই কনফিডেন্সটা এখনও আমি পাই না। পরের দিন মাঠে নেমে সেঞ্চুরি করার আত্মবিশ্বাস আছে বলেই হয়তো এমন অ্যাটিটিউড ওঁর। আত্মবিশ্বাস থাকলে টেক ইট ইজি ব্যাপারটা আপনা-আপনিই এসে যায়। ওটা জোর করে আনতে হয় না,” বললেন ‘হাফ সিরিয়াস’ ছবির অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য।
মনস্তত্ত্ববিদরাও একই কথা বলছেন। যে কোনও বিষয়ে প্রস্তুতি ভাল থাকলে, আত্মবিশ্বাস আসবে।
এ ছাড়া উপায় কোথায়?
জীবনে সমস্যার তো শেষ নেই। সামাজিক, মানসিক, হাজারো চাপ। কখনও অফিসের চাপ আবার কখনও অনিচ্ছা সত্ত্বেও পার্টিতে যাওয়ার চাপ। উপরোধে অনেক সময় ঢেঁকি গিলতেই হয়। হাসির ছলে জীবনটাকে দেখলেই কি সমাধান হয়ে যাবে সব সমস্যার? “সমাধান হবে কি না জানি না। কিন্তু আমার মতে অনেক সহজ হয়ে যাবে সমস্যাটা,” বললেন উৎসব মুখোপাধ্যায়। যাদবপুরের মিডিয়া স্টাডিজের এই প্রাক্তন ছাত্র নারী নির্যাতন, লিঙ্গ-বৈষম্যের মতো সিরিয়াস বিষয় নিয়েও বানিয়েছেন ‘হাফ সিরিয়াস’য়ের মতো ছবি।
কিন্তু ছোট থেকেই যে শেখানো হয়, প্রথমে লক্ষ্য স্থির করো। তারপর নাক-মুখ গুঁজে সেই লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য পড়ে থাকো। সেই অভ্যাস কি সহজে পাল্টানো সম্ভব? হয়তো না। তবে এক আধবার ‘দ্য ডার্ক নাইট’য়ের জোকারের মতো প্রশ্ন করবেন নাকি, “হোয়াই সো সিরিয়াস?”
|
জীবন সহজ যখন |
• কেউ নিখুঁত নয়, তাই তা হওয়ার
চেষ্টা করারও কোনও মানে নেই
• মাঝে মাঝে ‘ভাট’ বকুন, তাতে পরের কাজটা ভাল হবে
• একজন কখনওই সব কাজ করতে পারে না
|
• কখনও কিছু কাজ বাকিই থাক
• ‘না’ বলতে শিখতে হয়
• নিজের জন্য সময় জরুরি
• দিনের কিছুটা সময় গ্যাজেটস বন্ধ রাখুন |
পরামর্শ: ডা. জয়রঞ্জন রাম |
|
|
|
|
|
|