|
|
|
|
বস-খোকার সাইবার যুদ্ধ
এ যুদ্ধ রানাঘাটের হল জয়ের নয়। বোলপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের দর্শক টানা নিয়েও নয়। এটা নতুন পৃথিবীর,
নতুন প্রযুক্তির যুদ্ধ। ফেসবুক-টুইটার মহাকাশে দেব আর জিৎ-এর লড়াই! লিখছেন ইন্দ্রনীল রায় |
|
‘খোকা’ vs ‘বস’ |
|
|
ইন্ডাস্ট্রির ‘সেনসেশন’ vs ইন্ডাস্ট্রির ‘প্রিন্স’ |
|
যুদ্ধ আর সিনেমা হলে নয়, কুরুক্ষেত্র এ বার সাইবার ওয়ার্ল্ড।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রির দুই সুপারস্টারের লড়াই এখন পুরোদমে চলছে ইন্টারনেটে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ছাড়াও অনান্য ওয়েবসাইটেও ছড়িয়ে পড়ছে এই যুদ্ধ।
ঘটনার সূত্রপাত যদিও টুইটার এবং ফেসবুকে। সেখানে দেবকে নিয়ে কোনও পোস্ট হলেই, তাকে উদ্দেশ্য করে চলছে কুৎসিততম আক্রমণ। আগে কলকাতা ময়দানে গ্যালারি বনাম গ্যালারির যুদ্ধে যেমন জড়িয়ে পড়তেন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা, ঠিক সে ভাবেই ২০১৩-র পৃথিবীতে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন এই দুই সুপারস্টার।
দেব শিবিরের অভিযোগ, পুরো অপারেশনটা ঘটাচ্ছেন জিৎ-এর মদতপুষ্ট জিৎ ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা।
আক্রমণ এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, গালাগালি ছাড়াও এটা প্রচার করা হচ্ছে ‘দেব ধর্মনিরপেক্ষ নন’।
যেহেতু এ হেন মন্তব্যের ওপর কারও কন্ট্রোল নেই, তাই ফেসবুকে শেয়ার ও টুইটারে রিটুইটের দৌলতে খুব দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
জিৎ অবশ্য পুরো ব্যাপারটাকেই উড়িয়ে দিচ্ছেন। “আমার ফ্যান ক্লাব এ সব করতেই পারে না। ওরা পজিটিভ ইনটেনশন নিয়ে যা করার করে, কারও কোনও ডেসট্রাকটিভ ফিলিং যে নেই সেটা আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি,” অভিযোগ শুনে জানাচ্ছেন জিৎ। তাছাড়াও জিৎ বলছেন, “দেখুন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট কারও পক্ষে কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়। দেবও নিশ্চয়ই সেটা বোঝে। তবে এ ব্যাপারে যদি কোনও ভুল বোঝাবুঝি থাকে, আমি ওর সঙ্গে কথা বলে তা ক্লিয়ার করতে পারি।”
জিৎ অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও, ঘটনা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, টলিউডের প্রযোজক এবং পরিচালকেরা বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত।
“এটা সাঙ্ঘাতিক ট্রেন্ড। কোনও দিন ল’ অ্যান্ড অর্ডার প্রবলেমও হতে পারে এই ইন্টারনেটের লড়াইয়ের দৌলতে,” আতঙ্কের সঙ্গেই বলছেন এসকে মুভিজের হিমাংশু ধানুকা। একটা বড়সড় গণ্ডগোল যে বাঁধতে পারে, সেই ভেবে চিন্তিত যেমন টলিউড তার পাশাপাশি দেব শিবিরও নিশ্চিত এটা জিতের মদত ছাড়া হতে পারে না।
“দেবের নামে কোনও পোস্টিং হলেই দেখবেন দেব একটা ‘ইডিয়ট’ বা ‘দেব হটাও দেশ বাঁচাও’ এ রকম কমেন্ট করে চলে কিছু লোক। তা ছাড়াও দেবের কোনও ছবির ফার্স্ট লুক হলেই দেখবেন কমেন্ট আসে- “জিৎ থাকলে ভাল হত” মার্কা কমেন্ট। এগুলো এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, আমরা কনভিন্সড্ এগুলো জিৎ-এর ফ্যান ক্লাবরাই করছে এবং এতে প্রচ্ছন্ন মদত আছে জিতের,” বলছেন দেবের ঘনিষ্ঠমহল।
|
|
এটা অনস্বীকার্য জিৎ-এর ফ্যান ক্লাব যে কোনও স্টারের ফ্যান ক্লাবের থেকে বেশি সক্রিয়। আর এটাও সত্যি, জিতের সঙ্গে ওর ফ্যানক্লাবের নিবিড় যোগাযোগও আছে।
সে তুলনায় দেবের সঙ্গে তাঁর ফ্যান ক্লাবের যে সেই রকম যোগাযোগ নেই, মানছেন ‘খোকাবাবু’ নিজেই।
“হ্যাঁ, আমার সেই রকম কোনও যোগাযোগ নেই। তবে আমি এটা জানি এ সব করে কোনও লাভ হয় না। ছবি এভাবে হিটও করানো যায় না,” পাল্টা জবাব দেবের।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাইবার ওয়ার্ল্ডের যে রকম বাড়বাড়ন্ত, সেখানে ভবিষ্যতে ইন্টারনেটই স্টারদের ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ নির্ধারণ করবে।
“সোশ্যাল মিডিয়া প্রথম দিকে মজা হিসেবেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু আজ দিস ইজ সিরিয়াস বিজনেস। আজ যদি দেবকে আক্রমণ করে জিতের ফ্যানরা তা হলে এটা বুঝতে হবে, জিৎ সাইবার ওয়ার্ল্ডের রেসটা ঠিকঠাক শুরু করেছে। দেবের অ্যানালিসিস করা উচিত কেন ওকে এ রকম টার্গেট করা হচ্ছে এবং কী ভাবে ও সেটাকে ডিফেন্ড করতে পারে?” জানাচ্ছেন আইটি বিশেষজ্ঞ এবং ইন থিঙ্কের সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, কল্যাণ কর।
ভবিষ্যতের ছবিটাও কী রকম হতে পারে তারও একটি আভাস দিয়ে রাখছেন তিনি। “দেব-জিতের মতো স্টারদের সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টারঅ্যাকশন আর কিছু দিনের মধ্যে কন্ট্রোল করবে প্রোফেশনাল টিম, যারা স্টারদের ডেটা অ্যানালিসিস দিয়ে সাহায্য করবে। এই টিম বলে দেবে ফ্যানরা স্টারদের কাছে কী রকম ছবি এক্সপেক্ট করছে, ফ্যানদের বয়েস কত, ফ্যানদের জিওগ্রাফিকাল লোকেশন কোথায়। একবার যখন গ্রামগঞ্জে ইন্টারনেট পেনিট্রেশন বাড়বে, সাইবার ওয়ার্ল্ড আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে জিৎ তো হেডস্টার্ট নিয়েই নিয়েছে,” সাফ জানাচ্ছেন কল্যাণবাবু। সাইবার ওয়ার্ল্ডে জিতের জনপ্রিয়তার আর একটি কারণও দেখছে টলিউড।
|
|
“জিৎ যেহেতু কালীঘাটের ছেলে, তাই কলকাতায় জিৎ-এর ফ্যান ক্লাব সাঙ্ঘাতিক অ্যাকটিভ। দেবের সেখানে কলকাতা শহরে সেই রকম ক্লোজ বন্ধুবান্ধব নেই, যারা ওর হয়ে এই উদ্যোগটা নেবে। আমরা জিৎ-এর ‘শত্রু’, ‘ওয়ান্টেড’, ‘ফাইটার’ রিলিজের সময় দেখেছি, প্রথম দিন মিনার আর বিজলির শো, জিৎ-এর ফ্যান ক্লাবই কিনে নেয়। এ ছাড়াও ‘খোকা ৪২০’ রিলিজ করানোর সময় দেখেছিলাম কী অ্যাটাক জিতের ফ্যানক্লাবের তরফ থেকে হয় দেবের প্রতি। তবে আমার মনে হয় না জিৎ এগুলো নিজে করাচ্ছে,” বলছেন হিমাংশু।
এর মধ্যে আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা দেখে অনেকেই নিশ্চিন্ত, ‘সাইবার ম্যানেজমেন্ট’য়ে ঠিক কতটা এগিয়ে জিৎ। “এই মাসের শুরুতে জিতের টুইটারে ফলোয়ার ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। কুড়ি দিনের মধ্যে যেটা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ডেডিকেটেড ফ্যান ক্লাব না-থাকলে এ জিনিস কি সম্ভব?” বলছেন দেব-ঘনিষ্ঠ এক পরিচালক।
পুরো ঘটনায় দুই সুপারস্টারের কী বক্তব্য? ‘বস’য়ের মুক্তির আগে অসম্ভব ব্যস্ত জিৎ। তার ফাঁকেই বললেন, “আই হ্যাভ নো ক্লু। আমি জানি না এগুলো কে করাচ্ছে।”
কিন্তু এটাও তো অভিযোগ, যে আপনার অফিসে মাস-মাইনে করা দু’-তিন জন আছে, যাদের কাজ শুধু ইন্টারনেটে দেবকে আক্রমণ করা। সেটা কি ঠিক?
“(হেসে) আমার না অনেক কাজ আছে জানেন। কে আমার নামে এ রকম স্টোরি ছড়াচ্ছে আমি জানি। এইটুকুই বলতে পারি, নিশ্চয়ই আমি কিছু ঠিক করছি যার জন্য আমাকে এই রকম ভাবে অ্যাটাক করা হচ্ছে। তবে টুইটারে হঠাৎ করে আমার ৯০ হাজার ফলোয়ার দেখে আমিও চমকে গিয়েছিলাম। আমি আমার অ্যাকাউন্টা ভেরিফাই করতে দিয়েছি,” সাফ জানাচ্ছেন জিৎ।
|
|
পুরো ঘটনাটার গুরুত্ব যে আজকে যথেষ্ট তা মানছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের শ্রীকান্ত মোহতাও। “আমিও অনেক দিন ধরে শুনছি সাইবার ওয়ার্ল্ডে জিৎ আর দেবের এই লড়াইয়ের ব্যাপারটা। এটুকুই বলতে পারি, ইন্টারনেটে কার কত বেশি ক্ষমতা তা দিয়ে কিছু যাচাই করা যায় না। আসল যুদ্ধটা কিন্তু হয় বক্স অফিসে। সেখানে যে জেতে সেই সুপারস্টার হয়,” বলছেন শ্রীকান্ত।
ক্রমাগত যে তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়াতে আক্রমণ করা হচ্ছে তা নিয়ে বিরক্ত দেবও। “আমি বহু দিন ধরেই ইগনোর করছি ইন্টারনেটে আমাকে এই জঘন্য আক্রমণ করাটা। কিন্তু আর কত দিন ধৈর্য ধরব বলুন? কে বা কারা এর পেছনে আছে আমি তা জানি না। কিন্তু যেহেতু এরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে, ফেসবুক-টুইটার করে, আমি ধরে নিচ্ছি এরা শিক্ষিত। আমি চাইব ভগবান এদের সুবুদ্ধি দিন,” বললেন দেব।
কথা প্রসঙ্গে দেব এও জানালেন, তাঁকে উদ্দেশ্য করে এই আক্রমণ নিয়ে তাঁর আর জিতের মধ্যে কোনও দিন কোনও আলোচনা হয়নি।
ঘটনা যে দিকে এগোচ্ছে, অনেকেই মনে করছেন, ইন্টারনেটে লড়াইয়ে প্রথম রাউন্ড অনায়াসে জিতে যাচ্ছেন জিৎ। তবে শোনা যাচ্ছে দেব ফ্যান ক্লাবও নাকি ‘বস’য়ের মুক্তির সময় জিৎকেও সমান ভাবে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে।
ইন্টারনেটের এই যুদ্ধ কে জেতে, ‘খোকা’ না ‘বস’ সেটা দেখতেই এখন মুখিয়ে টলিউড।
|
আক্রমণের ভাষা |
|
আমার ফ্যান ক্লাব এ সব করতেই পারে না।
সেটা আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি
জিৎ |
আমি বহু দিন ধরেই ইগনোর করছি,
কিন্তু আর কত দিন ধৈর্য ধরব?
দেব |
যদি দেবকে আক্রমণ করে জিতের ফ্যানরা তা হলে এটা বুঝতে হবে,
জিৎ সাইবার ওয়ার্ল্ডের রেসটা ঠিকঠাক শুরু করেছে
কল্যাণ কর, আইটি বিশেষজ্ঞ |
|
|
|
|
|
|