সাংগাঠনিক শক্তি হোক বা পেশিশক্তি, পঞ্চায়েত ভোটে কোনও ভাবেই তাঁরা যে তৃণমূলের সঙ্গে তেমন এঁটে উঠতে পারছেন না, তা ভালই বুঝেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই এখন তৃণমূলের সন্ত্রাসের দিকটি তুলে ধরেই দেশজোড়া বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। আজ দিল্লিতে পলিটব্যুরোর বৈঠকে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করেন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। ওই বৈঠকের পর দলের সমস্ত শাখাকে আগামী ৭ অগস্ট পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং হিংসা-সন্ত্রাস বন্ধের দাবিকে সামনে রেখে দেশজুড়ে প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে, এই আশায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছুটা হলেও লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন এ কে গোপালন ভবনের নেতারা। কিন্তু বিমানবাবুর রিপোর্ট দেখে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন তাঁরা।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জেলায় জেলায় এখনও তৃণমূলের সঙ্গে সাংগঠনিক শক্তিতে পাল্লা দিতে পারছে না সিপিএম। অবশ্য এর জন্য তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করছেন বিমানবাবু। তাঁর কথায়, “বাহাত্তর সালের মতো ভোট হচ্ছে। গত ৩৫ বছরে এমন হয়নি। এক কথায় গণতন্ত্রের ধর্ষণ হচ্ছে।”
বিমানবাবুর রিপোর্টের বক্তব্য, পঞ্চায়েতে এখনও পর্যন্ত প্রত্যেক দফাতেই বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট এবং গ্রামের পর গ্রাম অবরোধ করে সিপিএমের নেতা-কর্মী পোলিং এজেন্টদের উপরে হামলা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বুধ দখল হয়েছে।
শুধু বর্ধমানেই ৮৯০টি বুথ দখল করে রিগিং হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৯ জন সিপিএম তথা বাম-কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ৬ হাজার বাম-প্রার্থী মনোনয়নই দিতে পারেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও তা কাজে লাগায়নি রাজ্য সরকার। রাজ্য পুলিশ ছিল দর্শক। পালাবদলের আগে পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের দাপটের যুক্তি স্বভাবতই প্রকাশ্যে মানছেন না বিমানবাবু। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের সময়ে এমন কখনও ঘটেনি। এখন যা হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব।” বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানিমূলক বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে বিমানবাবুর যুক্তি, “ওঁর নাম যে অনুব্রত, তা জানতাম না। চিনতাম কেষ্ট মণ্ডল বলে। কিন্তু তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। উনি যা বলছেন, তার থেকেই বুঝুন, কী সন্ত্রাস চালাচ্ছে।”
গত কাল বীরভূমে সভা করতে গেলেও অনুব্রতর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকেও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে, অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিমানবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “এ সব লোকদেখানো ব্যাপার।”
|
১৩ কফিন নিয়ে আজ কংগ্রেসের ২১ জুলাই
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নিহত ১৩ শহিদের স্মৃতিতে ১৩টি কাঠের কফিন থাকবে প্রতিবাদ-মঞ্চে। থাকবে প্রতীকী কাঠগড়াও। সেই কাঠগড়ায় ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের অভিযুক্তদের ছবি টাঙিয়ে আজ, রবিবার গাঁধীমূর্তির পাদদেশে তাদের বিচারের দাবি তুলবে যুব কংগ্রেস। পঞ্চায়েত ভোটের মাঝে সমাবেশে অবশ্য রাজ্যের সব জেলা থেকে কংগ্রেস কর্মীরা আসতে পারবেন না। যুব কংগ্রেস সভাপতি সৌমিক হোসেন শনিবার জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি (এখনও পঞ্চায়েত ভোট হয়নি যে জেলাগুলিতে) বাদ দিয়ে বাকি জেলার কর্মী-সমর্থকেরা অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বেলা ১২টা থেকে শিয়ালদহ, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা থেকে মিছিল করে গাঁধীমূর্তিতে জমায়েত হবেন। যুব কংগ্রেস নেতৃত্বের পাশাপাশি সভায় থাকার কথা প্রদেশ কংগ্রেস-সহ এআইসিসি-র কয়েক জন নেতার। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কলকাতায় শহিদ দিবসের সমাবেশ এক মাস পিছিয়েছে তৃণমূল। এ বার ব্লকে ব্লকে শহিদ বেদি তৈরি করে নিহত ১৩ জনের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে দলের তরফে জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |