এক জন পঞ্চায়েতের তিনটি স্তর মিলিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের একমাত্র লড়িয়ে। হারিয়েছেন ক্যানসারকেও। দ্বিতীয় জন খালেবিলে মাছ ধরে পেট চালিয়েছেন, প্রয়োজনে হয়েছেন হাতুড়েও। এখন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রীর পরম আস্থাভাজন।
বীরভূমে জেলা পরিষদের ৯ নম্বর আসনটি পঞ্চায়েতের ভোট-যুদ্ধে সম্মান-রক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে, সিপিএম-তৃণমূল দু’দলের কাছেই। সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে নেমেছেন এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা জাফারুল ইসলাম। ইলামবাজার ব্লকের পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের মোট ১৪২টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেয়েছে শাসক দল। এ বার সিপিএমের একমাত্র প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারানোটাই চ্যালেঞ্জ।
সভা-সমিতিতে লোক জোটানোই হোক বা শ’য়ে শ’য়ে গাড়ির ব্যবস্থা করা, সবেতেই ডাক পড়ে জাফারুলেরই। ডানপন্থী বাড়ির ডাকাবুকো ছেলের উপরে ভর করেই তৃণমূল ইলামবাজারে সংগঠন মজবুত করেছে। যার ফল মিলেছে মনোনয়নপর্বেই। নিন্দুকেরা বলছেন, তাঁর দাপটেই ব্লকের ৯৯ শতাংশ আসনই বিরোধী-শূন্য হয়েছে। একমাত্র যে আসনটিতে ভোট হচ্ছে, সেখানেও দলকে জেতানোর ভার নিজের কাঁধেই তুলেছেন ‘লড়াকু’ জাফারুল। আর এমন ভরসার নেতাকে জেতানো, ইজ্জ্বতের সওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসক দলের কাছেও।
নিজের, দলের সম্মান বাঁচাতে নাওয়াখাওয়া ভুলেছেন জাফারুলও। লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার দাবি করে বলছেন, “বাম আমলে খুন, সন্ত্রাস, মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। ভোটে জেতার জন্য এটাই আমার সম্বল।” অন্য দিকে, বরাবর নিজেদের দখলে থাকা ইলামবাজারে কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি বামেরা। এমন ‘পরিবর্তনে’র আমলে কী ভাবে প্রচার চালাচ্ছেন জেলার প্রথম মহিলা সভাধিপতি? অন্নপূর্ণাদেবীর দাবি, “নিজের গ্রামেই আমি গৃহবন্দি। তৃণমূল সাধারণ মানুষকে আমার সঙ্গে কথাও বলতে দিচ্ছে না।” তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগকে অপপ্রচার দাবি করে বলছেন, “আমার সময়েই এই জেলা রাস্তা-পানীয় জল-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-স্বনির্ভর প্রকল্পে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে।”
রাজ্য নেতাদের সুরেই সিপিএমের প্রার্থীর দাবি, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে একমাত্র আসনটিতে তাঁর জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
আর জাফরুলের বিশ্বাস, “আর্থিক ভাবে দুর্বল হতে পারি, কিন্তু মানুষের জোর আমার পাশে আছে।”
|