অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আপাতত শিকেয়ই
রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে। তবু ভোটপর্ব মেটার আগে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পথে জেলা প্রশাসন হাঁটবে কি না, তা নিয়ে সংশয়টা থেকেই যাচ্ছে কোনও কোনও মহলে। নির্দেশ পাঠানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনও এফআইআর না হওয়ায় এই সন্দেহ আরও বেড়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, আগামিকাল সোমবার বীরভূমে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দলের কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বলে সরকারের শীর্ষ স্তরে সওয়াল করেছেন অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ। প্রশাসনের একটি মহলের বক্তব্য, এর ফলেই জেলা প্রশাসন আপাতত হাত গুটিয়ে রাখতে পারে।
প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগে অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই কাজে রাজ্য সরকারের তরফে গড়িমসি হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। শেষে শুক্রবার রাতে রাজ্য সরকারের তরফে কমিশনকে জানানো হয়, বীরভূমের পুলিশ সুপারকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন রাজ্যের ডিজি। কিন্তু সেই নির্দেশ মেনে কি দ্রুত ব্যবস্থা নেবে জেলার পুলিশ-প্রশাসন? শনিবার এই সংশয় প্রকাশ করেছে বিরোধী দলগুলিও। সিপিএম নেতা রবীন দেব কমিশনে গিয়ে অবিলম্বে অনুব্রতকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই নেতা বাইরে থাকলে বীরভূমে ভোট প্রহসনে পরিণত হবে।”
প্রচার সভায় অনুব্রত। শনিবার সাঁইথিয়ায়। ছবি: অনির্বাণ সেন
এই গড়িমসি নিয়ে কমিশনও খুশি নয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ রবিবার দিল্লি থেকে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ফিরলে তাঁকে বিষয়টি সবিস্তার জানাবেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। এর মধ্যেই বীরভূম জেলা প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে কমিশন। শনিবার কমিশনের পদস্থ আধিকারিকেরা জানান, নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে একাধিক বার বলা হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। কমিশন জেলা প্রশাসনের কাজকর্মের উপর নজর রাখছে। প্রয়োজন মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিনই কমিশনের সচিব তাপস রায় মহাকরণের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে জানিয়েছেন, “অনুব্রতর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বীরভূমের পুলিশ সুপারকে লিখিত নির্দেশ পাঠিয়েছেন ডিজি। মহাকরণ থেকে ওই নির্দেশের একটি প্রতিলিপি এ দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে পৌঁছেছে।”
সরকার অবশ্য এ দিন বল ঠেলে দিয়েছে জেলা প্রশাসনের ঘরে। এ দিন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “কমিশনকে চিঠি লিখে সরকারের নীতিগত অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বল এখন জেলার পুলিশ সুপারের কোর্টে।” এর পরেই তিনি বলেন, “তিনি এখন ভোট নিয়ে ব্যস্ত। তবে দেরিতে হলেও সরকার এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে।” আর রাজ্য পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, “কাগজে-কলমে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এখনও সে সব কিছু হয়নি।”
প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের এমন কথা শোনার পরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এর পরেও কি অনুব্রতর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
এই সন্দেহ আরও বেড়েছে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের কথায়। তিনি এ দিন সন্ধ্যায় সিউড়িতে তৃণমূলের কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে বলেন, “সিপিএমের এমনিতে ইএনটি সমস্যা ছিল। তিনি (অনুব্রত) সিপিএমের কানে ঢোকাতে পেরেছেন মানুষ কী চায়! সুন্দর ভাবে প্রচার করেছেন তিনি। এতে শান্তিতে ভোট হবে।” একই দিনে অনুব্রত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় অবশ্য আরও এক বার বলেছেন, “আমার বিশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ধরনের বক্তব্য সমর্থন করেন না।”
কিন্তু প্রশাসন বীরভূমের ওই পঞ্চায়েত এলাকায় অশান্তিরই আশঙ্কা করছে। বিশেষ করে অনুব্রত প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যে ভাবে নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে আক্রমণ হয়েছিল, তাতে চিন্তিত স্থানীয় প্রশাসন। যেখানে দাঁড়িয়ে ওই বক্তৃতা দিয়েছিলেন অনুব্রত, তার সংলগ্ন অঞ্চল অর্থাৎ বোলপুর ব্লকের কসবা, সিয়ান-মুলুক এবং সিঙ্গি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের সঙ্গে নির্দলদের লড়াই অব্যাহতই। তাই এই তিনটি পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কিছু ব্যবস্থা না নিলে কমিশন কি নিজে থেকেই কিছু পদক্ষেপ করতে পারে?
সরকারি কর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এ সব ক্ষেত্রে অতীতে একাধিক বার সরাসরি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারকেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে থাকে। কমিশনের সচিব চিঠি লিখে সরকারের কাছে এই অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রথা মেনেই সরকার তার উত্তর দিয়েছে। সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, প্রশাসনিক পদক্ষেপে সন্তুষ্ট না হলে কমিশন সরাসরি জেলাশাসক বা জেলা পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে পারে। জেলাশাসক এখন জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচন আধিকারিক হিসেবে কাজ করছেন। এমন নির্দেশ পেলে তিনি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতেও পারেন। কমিশন এবং বিরোধীরা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত এমন কিছু যদি হয়, তা-ও হবে ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার পরে। নাম-কা-ওয়াস্তে একটি এফআইআর দায়ের করা হবে তখন।
প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের গড়িমসি নতুন বা বেনজির কিছু নয়। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনও এ রাজ্যে একাধিক বার রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু সেই সব মামলায় সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটের সময় সিপিএম নেতা বিমান বসু দলীয় ক্যাডারদের প্রকাশ্যে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা বাড়াবাড়ি করলে তাঁদের ধরে থানায় নিয়ে যান। এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে ভোট স্থগিত করে দিতে চেয়েছিল। তৎকালীন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক তথা বর্তমান স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় বিমান বসুর নামে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। সেই মামলায় বিমান বসুর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া যায়নি। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময় পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও লেকটাউন থানায় এফআইআর করেছিলেন তৎকালীন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দেবাশিস সেন। ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন ডিএম-এসপিদের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচনের পর তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন সুভাষবাবু। সেই মামলাতেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।

পুরনো খবর:

সিপিএমকে নর্দমায় ফেলুন: জ্যোতিপ্রিয়
বরকত গনিখান চৌধুরী এক সময়ে সিপিএমকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলার ডাক দিয়েছিলেন। এ বার সিপিএমকে নর্দমায় ফেলার ডাক দিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তৃতীয় দফার পঞ্চায়েত ভোটের দিনে সিপিএমের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ডানলপ মোড়ে সভা করে তৃণমূল। এই সভাতেই জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “সিপিএমকে এ বার নর্দমায় ফেলে দিন। বর্ষার জলে সিপিএম ভেসে গঙ্গায় চলে যাক।” এর পাশাপাশি সিপিএম নেতা গৌতম দেব, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অমিতাভ নন্দী এবং বিমান বসুকে পচা মাছের সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.