এসজিএসওয়াই নিয়ে বিভ্রান্তি
চালু হয়নি নতুন প্রকল্প, পুরনোর টাকা ফেরত
তুন প্রকল্প চালু হল না। অথচ, পুরনো প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল। পুরনো প্রকল্পের টাকাও ফেরত চাওয়া হল! এমনটাই ঘটেছে ‘ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন’ (এনআরএলএম) প্রকল্পে। আগে এই প্রকল্পের নাম ছিল স্বর্ণজয়ন্তী স্বরোজগার যোজনা (এসজিএসওয়াই)। এই প্রকল্পে মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠী বানাতেন। সরকার আবর্তনীয় তহবিল হিসাবে দু’টি ধাপে ২০ হাজার টাকা দিত। গোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেরাও ব্যাঙ্কে টাকা জমাতেন। ব্যাঙ্ক ঋণের মাধ্যমে প্রাণিপালন, শিল্পকর্ম বা ব্যবসা করে রোজগার করার সুযোগ দেওয়া হত তাঁদের।
বর্তমানে এর পরিবর্তে একটি নতুন প্রকল্প এসেছে।
তা হল ‘ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন’ (এনআরএলএম)। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পটি চালু করে। ২০১২ সাল থেকেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্প চালু তো দূরের কথা কোনও পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের ৮টি জেলার ১৮টি ব্লকে এই প্রকল্প রূপায়ণ হওয়ার কথা। যার মধ্যে ৫টি ‘রির্সোস ব্লক’ রয়েছে। ‘রিসোর্স ব্লক’গুলি প্রকল্প রূপায়ণে ১৫ কোটি টাকা পাবে। অন্য ব্লক পাবে ১২ কোটি করে। প্রায় ২ বছর হতে চললেও প্রকল্প রূপায়ণ দূরের কথা জেলাস্তরে কোনও নির্দেশিকাই আসেনি। এমনকী রাজ্য স্তরে কেবলমাত্র একটি অফিস করা হয়েছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল লাইভলিহুড মিশনে’র (ডব্ল্যুবিএসআরএলএম) ওই দফতরে কেবলমাত্র একজন সিইও নিয়োগ হয়েছে।
অথচ, রাজ্য স্তরের মতোই জেলা এবং ব্লক স্তরেও এরকম অফিস তৈরির কথা। কর্মী নিয়োগের কথা। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার কথা। সে সব তো হয়নি-ই। উল্টে এসজিওসওয়াই প্রকল্পে জেলাতে যে টাকা ছিল ওই জেলাগুলির কাছ থেকে সে টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে ডব্ল্যুবিএসআরএলএম থেকে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এনআরএলএম নিয়ে সম্প্রতি (১৭ জুন) কলকাতায় একটি বৈঠক হয়েছিল। যেখানে ৮টি জেলার আধিকারিকেরা কি ভাবে টাকা ফেরত দেবেন তা জানতে চান।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই প্রকল্পে এখনও প্রায় ৩ কোটি টাকা রয়েছে। জেলা প্রশাসন সেই টাকা ফেরত না দিয়ে এই নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “এসজিএসওয়াই বন্ধ হবে কি না আগে তা জানা জরুরি। তাছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে এসজিএসওয়াই প্রকল্পের কিছু গোষ্ঠীকে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই প্রকল্পে ঋণের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের সুবিধে পাওয়া যায়। যা দেয় সরকার। ব্যাঙ্ক তা জানাতে কিছু ক্ষেত্রে দেরি করে। টাকা ফেরত দেওয়ার পর তেমন ঘটনা ঘটলে কী হবে? এসব জানতে চেয়েই চিঠি দেওয়া হয়েছে।” কেন নতুন প্রকল্প চালু করা গেল না? কেনই বা পুরনো প্রকল্প থেকে টাকা চাওয়া হল, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সিইও অভিনব চন্দ্র। বর্তমানে নির্বাচন বিধি লাগু রয়েছে বলে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন তিনি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় এসজিএসওয়াই প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। যার মধ্যে প্রথম গ্রেডিং হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার গোষ্ঠীর। দ্বিতীয় গ্রেডিং হয়েছে প্রায় ১১ হাজার গোষ্ঠীর। গ্রেডিং পিছু সরকার আবর্তনীয় তহবিল হিসাবে প্রতিটি গোষ্ঠীকে ১০ হাজার টাকা করে দেয়। অর্থাৎ দ্বিতীয় গ্রেডিং হলে একটি গোষ্ঠী সরকার থেকে ২০ হাজার টাকা পায়। তারই সঙ্গে নিজেদের জমানোও কিছু টাকা থাকে। কিন্তু তা দিয়ে কী আর করা যেতে পারে। যে কারণে তার পরের ধাপটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। যা হল ‘ক্রেডিট লিঙ্ক’ অর্থাৎ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। যে ঋণের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পেতে পারে একটি গোষ্ঠী। দেখা যাচ্ছে এতগুলি গোষ্ঠীর মাধ্যে ক্রেডিট লিঙ্ক পেয়েছে মাত্র ৪৬২৭টি গোষ্ঠী!
এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কী দশা। গোষ্ঠীর এক সদস্যের কথায়, “ক্রেডিট লিঙ্ক তো পরের কথা। এখন গোষ্ঠী নিয়েই কেউ ভাবে না। না হলে দ্বিতীয় গ্রেডিংয়ের সংখ্যা এত কম হয়। ক্রেডিট লিঙ্ক করার ক্ষেত্রে এত উদাসীনতা দেখানো হয়। ঋণ না নিলে প্রাণিপালন হোক বা জৈব সার তৈরিকি ভাবে কাজ করবে দলগুলি।”
পরিবর্তে আসা এনআরএলএম প্রকল্পের অবস্থা আরও খারাপ। বিহার ১৯টি জেলার ৪৮টি ব্লকের মধ্যে ৭৭টি ব্লক এই প্রকল্প চালু করার জন্য প্রস্তুত, ছত্তীসগঢ়ও ৬টি জেলার ৯টি ব্লকের মধ্যে ১৬টি ব্লকে প্রকল্প রূপায়ণ করার জন্য তৈরি বলে জানিয়েছে। ২ বছর পরে আমাদের রাজ্যে কেবলমাত্র নিয়োগ হয়েছে এক জন সিইও। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সমস্ত কর্মী নিয়োগ করে ডিসেম্বর মাসে প্রকল্প চালু করার কথা জানিয়েছে রাজ্য। প্রকল্প রূপায়ণ করতে হলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নিয়ে সংসদ স্তরে উপসঙ্ঘ, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সঙ্ঘ এবং ব্লক স্তরে মহাসঙ্ঘের প্রয়োজন। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৫১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এখনও সঙ্ঘই তৈরি করা যায়নি। আবার ২৯টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ৫টি ব্লকে মহাসঙ্ঘ তৈরি করা গিয়েছে! এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “এসজিএসওয়াইয়ের গোষ্ঠীগুলিই এই প্রকল্পের আওতায় আসবে, নাকি নতুন গোষ্ঠী তৈরি করতে হবে, গোষ্ঠীগুলি কি ভাবে কাজ করবে, এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের কী করণীয়কোনও নির্দেশিকাই নেই। তা না জানলে প্রকল্প রূপায়ণের জন্য তৈরি হব কী করে!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.