• আম্মান • ছ’মাসে ছ’বার পশ্চিম এশিয়া সফরে গেলেন মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট জন কেরি (ছবি)। অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন এবং সবচেয়ে জটিল সমস্যার সমাধান করার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি— ইজরায়েল আর প্যালেস্তাইনের সম্পর্ক শান্ত করার চেষ্টা। এ বার নাকি তিনি অনেক দূর এগিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন, দু’পক্ষই শীঘ্র ওয়াশিংটন ডি সি-তে বৈঠকে বসবে। গত মাসে কেরি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। মঙ্গলবার বসলেন প্যালেস্তিনিয়ান অথরিটি-র প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে।
যেটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য তা হল, কেরির এই বারের প্রয়াসকে সমর্থন জানিয়েছে আরব লিগ। জর্ডনের বৈঠকে আরব লিগের প্রতিনিধিরা স্পষ্ট ভাষাতেই জানিয়েছেন, দু’পক্ষের আলোচনায় বসার মতো ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। |
কেরিই নাকি ইজরায়েলকে বলেছেন, ২০০২ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে শান্তি-প্রচেষ্টা হয়েছিল, তার মূল সুরটির দিকে নজর দিতে। সেখানে বলা হয়েছিল— আরব লিগ ইজরায়েলকে পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে রাজি আছে, কিন্তু তার জন্য ইজরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে অধিকৃত সব জায়গা ফিরিয়ে দিতে হবে, রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৯৪৮ সালের সিদ্ধান্ত মেনে প্যালেস্তিনীয় উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান করতে হবে।
ইজরায়েল তখন এ প্রস্তাব মানেনি। কিন্তু এখন সুর অনেকটাই নরম। ইতিমধ্যেই বৈঠকের ব্যাপারে ইজরায়েল কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। ঘোষণা করেছে, কেরির সঙ্গে হওয়া চুক্তি মেনে তারা ওয়াশিংটনের বৈঠকের আগেই কয়েক জন প্যালেস্তিনীয় বন্দিকে মুক্তি দেবে। তাঁদের অনেকেই নাকি ‘হেভিওয়েট’, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ইজরায়েলের জেলে বন্দি। যদি কেরির সব চেষ্টা ব্যর্থও হয়, তা হলেও এইটুকুই প্রাপ্তি ধরতে হবে।
|
বিক্ষুব্ধ তালিকায় তিনিও? |
• ওয়াশিংটন ডি সি • সতেরো বছরের কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন কিশোর মার্টিন ট্রেভরকে গুলি ছুড়ে মেরে ফেলেছিলেন জর্জ জিমারমান গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এই জুলাইয়ে মার্কিন আদালত জানাল, মামলার বিচার সমাপ্ত, জিমারমান মুক্ত। বিচারের রায় শুনে দেশের বহু প্রান্তে উত্তুঙ্গ হয়ে উঠেছে ক্ষোভ। অভিযোগ: মার্কিন ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনও প্রবিষ্ট বর্ণবৈষম্য! বিস্ময়ের ব্যাপার, গলা মিলিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজেও। এই উপলক্ষে বিশেষ বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি, অপ্রত্যাশিত তীব্রতার সঙ্গে বলেছেন, আদালত নিশ্চয়ই সব দিক বিচার করেই এই রায় দিয়েছে, তবে কি না, অপরাধী খালাস পেলেও অপরাধটার গুরুত্ব কমে যায় না। “পঁয়ত্রিশ বছর আগে ওই ছেলেটির জায়গায় আমিই থাকতে পারতাম,” বলেছেন তিনি, “না, আমেরিকা এখনও বর্ণবিদ্বেষের উপরে উঠতে পারেনি।” আগামী মাসে মার্কিন কিংবদন্তি মার্টিন লুথার কিং-এর বিখ্যাত বর্ণবিদ্বেষবিরোধী বক্তৃতা ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’-এর সুবর্ণজয়ন্তী। খুবই আবেগবিহ্বল উদ্যাপন হওয়ার কথা। কিন্তু উদ্যাপন সম্ভবত পরিণত হতে চলেছে বিক্ষোভে। ইতিমধ্যেই তার চড়া সুর শোনা যাচ্ছে।
|
আলেক্সেই নাভালনিকে জেলে পোরা হল, পাঁচ বছরের জন্য। তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। তবে সে বিষয়ে নাভালনি নিজে নাকি বিশেষ অবহিত নন। তার চেয়েও বড় কথা, আদালত চত্বরেও নাকি বিস্ময়ের অবধি নেই এই ভিত্তিহীন অভিযোগে শাস্তির কথা শুনে। কেউ বলছেন, রাশিয়ার বিচারব্যবস্থা নিয়ে ভুল করেও আর গর্ব করা যাবে না। কেউ বলছেন, গোটা দেশে আন্দোলন তৈরি করা দরকার এ বার। বহু মানুষ কান্নাকাটি শুরু করেছেন। তবে মোটের উপর সকলেই একমত যে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধতা করার দামটাই মেটাচ্ছেন নাভালনি।
কে এই নাভালনি? ৩৭ বছর বয়সী আলেক্সেই নাভালনি রুশ প্রেসিডেন্টের পার্টি ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় নেতা। নিয়মিত ব্লগার তিনি, এবং তাঁর ব্লগগুলি নিয়মিত ভাবে পুতিন ও পুতিনের দলের দুর্নীতি উদ্ঘাটনে ব্যস্ত। ক্ষমতাশীল দলের বিরুদ্ধে তাঁর অগ্নিবর্ষী বক্তব্য ও লেখাপত্র বেশ কিছু কাল ধরেই অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইমেল, ফেসবুক ও টুইটারে লক্ষ লক্ষ রুশ নাভালনির এই রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে ফেলছেন। এমনকী পুতিনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবতীর্ণ হতে পারেন নাভালনি স্বয়ং, এই সম্ভাবনা ক্রমশই বাড়ছে। তিনি এই বিরুদ্ধবাদীদের একত্রিত হতে ডাক দিয়েছেন বেশ কয়েক বার। সম্ভবত সেই কারণেই তড়িঘড়ি এই মামলা, এবং এই রায়। যাতে আগামী পাঁচ বছর নাভালনি কোনও ডাক দিতে না পারেন, কাউকে জড়ো না করতে পারেন, কোনও বিরুদ্ধ ক্যাম্পেন করার সুযোগই না পান।
আন্তর্জাতিক রীতি মেনে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যথারীতি তাদের ‘প্রবল উদ্বেগ’ জানিয়েছে এই ঘটনার পর। রাশিয়ার বিষয়ে তারা কতখানি চিন্তিত, সে বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেছে। ঠিক যেমন মার্কিন নাগরিক স্নোডেন-এর বিষয়ে ‘গভীর উদ্বিগ্ন’ মস্কো। দেশ পাল্টায়, রং পাল্টায়, ক্ষমতা বনাম নাগরিকের লড়াই পাল্টায় না: দেখিয়ে দিলেন নাভালনি। |