মোটর ভেহিকলস-এর বেলতলা অফিসের উপর থেকে চাপ কিছুটা কমাতে ঠিক হয়েছিল, সল্টলেক এবং কসবায় পিভিডি-র নতুন অফিস খোলা হবে। কিন্তু এই দু’জায়গায় অফিসের এলাকা বিন্যাস পিন কোড নম্বর ধরে হবে, নাকি থানার ভিত্তিতে সেটাই এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি রাজ্য সরকার। ফলে বেলতলা অফিসের চাপ কমাতে জারি করা যায়নি সরকারি বিজ্ঞপ্তিও।
কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে থাকা সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি গাড়ি সম্পর্কিত কাজকর্ম কলকাতা মোটর ভেহিকলসের বেলতলা অফিসে করা হয়। এই এলাকা কলকাতা পুলিশের অধীন। এ ছাড়া, রাজ্য পুলিশের অধীনে থাকা সল্টলেক এবং লেকটাউনের গাড়ি সম্পর্কিত কাজকর্মও (রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স) কলকাতা মোটর ভেহিকলসের অফিসে হয়। আর কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের গাড়ি সম্পর্কিত সমস্ত কাজকর্ম হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার আলিপুর আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসে। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই নিয়মে কাজ হয়ে আসছে। কিন্তু কলকাতা-সহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় দিন দিন গাড়ি বাড়ছে। বাড়ছে লাইসেন্সের সংখ্যাও। তাই কলকাতা মোটর ভেহিকলসের উপর চাপ কমাতেই সল্টলেক এবং কসবায় অফিস খোলার কথা।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলতলায় কলকাতা মোটর ভেহিকলসের রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ির সংখ্যা (নতুন এবং পুরনো মিলে) বর্তমানে আট লক্ষেরও বেশি। সেখানে বছরে গড়ে ৫৫ হাজারের উপরে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এর মধ্যে অটো ছাড়াও মোটরবাইক, বাস এবং চার চাকার গাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া, ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যাও কম নয়। ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েক লক্ষ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ১৯৫৬ সালে পিভিডি তৈরি হয়। তার পর থেকেই দিন দিন লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়ছে।
এক পরিবহণ-কর্তার মতে, বেলতলায় দিনে গড়ে ৮০০ থেকে হাজার লাইসেন্স করা হয়। এর মধ্যে নতুন লাইসেন্স, রিনিউয়াল ছাড়াও লার্নার লাইসেন্স রয়েছে। সব মিলে চাপ বিশাল। তাই সল্টলেক এবং কসবা অফিস চালু হলে কাজের সুবিধা হবে। মানুষের হয়রানিও কমবে। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স বা ট্যাক্স দেওয়ার জন্য দূরে যেতে হবে না। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, কোন কোন এলাকা সল্টলেকে যাবে এবং কোন কোন এলাকা কসবার মধ্যে দেওয়া হবে, তার একটা খসড়া রিপোর্ট তৈরি করে পরিবহণ দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কলকাতা মোটর ভেহিকলসের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “আমরা একটা পরিকল্পনা করে পরিবহণ দফতরে জমা দিয়েছি। পরিবহণ দফতরই ঠিক করবে পিন কোড নম্বর ধরে এলাকা বিন্যাস হবে, নাকি থানা ভিত্তি করে। একটা পিন কোড এলাকায় তিনটি থানাও রয়েছে। তাই পিন কোড ধরে বিন্যাস করা হলেই ভাল হবে। পুলিশ, ডাক বিভাগের কর্তাদের নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। সব রিপোর্টই মহাকরণে পাঠানো হয়েছে।” ওই কর্তা জানান, ২০১২ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ ২০১৩ পর্যন্ত বেলতলার মোটর ভেহিকলস অফিসে চার চাকার গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ২৮ হাজার ৫৭৬টি। দু’চাকার গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ২৬ হাজার ৮০০, অটো হয়েছে ৩৫৪টা এবং মিনিবাস হয়েছে ২৬টা। গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি এখন একটু কমেছে।
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “পিন কোড ধরেও এলাকা বিন্যাস হতে পারে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনিক ভাবে যাতে সুবিধা হবে, সেটাই করা হবে। নির্বাচনের জন্য কোনও অফিসার না থাকায় কাজ আটকে রয়েছে। অগস্টের মধ্যেই কসবা এবং সল্টলেক পিভিডি অফিস চালু করা হবে।” মন্ত্রী জানান, কসবার মধ্যে দক্ষিণ কলকাতার কিছু অংশ আসবে। সল্টলেকের মধ্যে থাকবে রাজারহাট, লেকটাউন, সল্টলেক ছাড়াও উত্তর কলকাতার বেশ কিছু এলাকা। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থেই অফিস ভাগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। |