উত্তরপাড়ায় হিন্দমোটর কারখানার বাড়তি জমিতে বেঙ্গল শ্রীরমের ৬০০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘিরে তৈরি হতে চলেছে আইনি জট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, হিন্দমোটর সংস্থার পুনর্গঠন প্রকল্প বাস্তবে রূপায়ণ করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বেঙ্গল শ্রীরাম। চলতি বছরের গোড়ায় সংস্থার পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মূল সংস্থা থেকে চেন্নাইয় কারখানা আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে। এই কারখানা হিন্দমোটর ফিনান্স নামে একটি শাখা সংস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। বেঙ্গল শ্রীরামের আশঙ্কা, চেন্নাইয়ের চালু কারখানা পৃথক হয়ে যাওয়ার পরে সংস্থার আর্থিক হাল আরও খারাপ হবে। সে ক্ষেত্রে বকেয়া টাকা উদ্ধার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। প্রসঙ্গত, একই যুক্তিতে রাজ্যও এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আইনি পথে হাঁটার কথা ভাবছে।
২০০৬ সালে সি কে বিড়লা গোষ্ঠীর সংস্থা হিন্দুস্তান মোটরসের হাল ফেরাতে ৩১৪ একর জমি বিক্রি করার অনুমতি দেয় তৎকালীন বাম সরকার। সংস্থার পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে ৮৫ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল হিন্দমোটর। সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকার শর্ত দেয়, সংস্থা চাঙ্গা করার জন্য জমি বিক্রি করে ওই পরিমাণ টাকাই তুলতে পারবে হিন্দমোটর। যদিও বেঙ্গালুরুর সংস্থা শ্রীরাম প্রপার্টিজকে জমি বিক্রি করে ২৮৫ কোটি টাকা পায় হিন্দমোটর। অর্থাৎ বাড়তি ২০০ কোটি টাকা তাদের হাতে আসে। এই প্রকল্প তৈরির জন্য আমেরিকার দু’টি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শ্রীরাম প্রপার্টিজ তৈরি করে বেঙ্গল শ্রীরাম।
এই বাড়তি ২০০ কোটি টাকা নিয়েই সমস্যার সূত্রপাত। বর্তমান রাজ্য সরকার এই টাকা দাবি করে। হিন্দমোটর টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিলেও জানায়, বেহাল আর্থিক পরিস্থিতির কারণে টাকা দিতে অপারগ তারা। দফায় দফায় বৈঠক হয়। শেষ পর্যন্ত গত বছর অগস্ট মাসে তিন পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। ঠিক হয় পাঁচ কিস্তিতে ২৫ কোটি টাকা ফেরত দেবে হিন্দমোটর। এ ছাড়া বেঙ্গল শ্রীরাম-এর প্রকল্প থেকে লভ্যাংশ বাবদ ৪% টাকা হিন্দমোটরের প্রাপ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, হিসেব অনুযায়ী এই লভ্যাংশের মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
কিন্তু এই টাকা ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনায় প্রায় জল ঢেলে দিয়েছে হিন্দমোটর সংস্থার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। বেঙ্গল শ্রীরাম ও রাজ্য সরকার, দু’পক্ষেরই আশঙ্কা, লাভজনক ব্যবসা মূল সংস্থা থেকে আলাদা করে দিলে বকেয়া মেটানোর ক্ষমতাই তাদের থাকবে না। যেমন এর আগেও বেহাল আর্থিক দশার কারণ দেখিয়ে টাকা দেয়নি হিন্দমোটর।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে হিন্দমোটরের ওই বাড়তি জমিতে ৬০ একরের একটি তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক-সহ আবাসন ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্য ও দুই বেসরকারি সংস্থার বিবাদের জেরে প্রকল্পের কাজ এক পা-ও এগোয়নি। কাজ শুরু না-হওয়ায় ইতিমধ্যেই হাতছাড়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের জন্য বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা। বিনিয়োগের সঙ্গে আটকে রয়েছে কয়েক হাজার কর্মসংস্থানও। |