আশঙ্কাটা বেশ পুরনো। কিন্তু সম্প্রতি মোল্লাতন্ত্রের হাত ধরে তালিবানি রক্ষণশীলতার প্রত্যাবর্তনের আঁচ পেয়ে উদ্বিগ্ন প্রত্যন্ত আফগানিস্তানের বাসিন্দারা। সীমান্তের এ পারে পাকিস্তানের একাংশেও একই চিন্তা প্রত্যক্ষ তালিবানি-রাজ না হোক, পরোক্ষ তালিবানি শাসন ফিরছে স্বমহিমায়।
অন্তত তেমনই মনে করছেন আফগানিস্তানের বাঘলান প্রদেশের দেহ সালাহ এলাকার বাসিন্দারা। চলতি বছরের জুন মাসের শেষে বিশেষ ফতোয়া দিয়েছিলেন স্থানীয় ধর্মগুরু পুরুষ আত্মীয় ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না মহিলারা, এমনকী যেতে পারবেন না চিকিৎসালয়েও। এ ছাড়া প্রসাধন সামগ্রী বিক্রি করে এমন দোকানপাটও বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে। কারণ? ধর্মগুরুর ব্যাখ্যা, মহিলাদের প্রসাধন যৌনপেশার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই বন্ধ করা হোক দোকান। যদি ফতোয়া কার্যকর না করা হয়, সে ক্ষেত্রে ‘জেহাদের’ হুমকিও দিয়েছেন ওই ধর্মগুরু। নির্দেশের বিরোধিতা করে মুখ খুলেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চেয়েছিলেন প্রশাসনিক সমর্থনও। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে স্থানীয় ধর্মগুরুর এই ফতোয়ার সমর্থনেই মুখ খুলেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের ধর্মীয় পরামর্শদাতা গোষ্ঠী বা উলেমা কাউন্সিলের সদস্য এনায়েতুল্লা বালিঘ। শুক্রবার তিনি বলেন, “কোনও ভাবেই দোকানগুলো খোলা রাখা সম্ভব ছিল না। ব্যবসার জন্য দোকান, মিথ্যাচারের জন্য নয়।” |
ফতোয়ার জেরে এই দৃশ্য কি আর দেখা যাবে না? ছবি: এএফপি |
অন্য দিকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের করক জেলার ধর্মগুরুদের এক গোষ্ঠী শুক্রবারই শুনিয়েছে আর এক ফতোয়া। পুরুষ আত্মীয় ছাড়া মহিলারা বাজারে আসতে পারবেন না। তাঁদের ব্যাখ্যা, একা বাজারে এসে নানা ধরনের অশ্লীলতা ছড়াচ্ছেন মহিলারা। তা ছাড়া এ ধরনের মহিলারা চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কাজকর্মও করে বেরাচ্ছেন, অভিযোগ ধর্মগুরুদের। তাই এই ফতোয়া। নির্দেশ যাতে ঠিকমতো পালিত হয়, সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছিলেন ধর্মগুরুদের ওই গোষ্ঠী। তবে প্রশাসন সে সাহায্য দেয়নি। পড়শি দুই দেশে কার্যত একই রকম মহিলা-স্বাধীনতা বিরোধী নির্দেশ, তাও প্রায় কাছাকাছি সময়ে। দেখেশুনে কপালে ভাঁজ বাড়ছে বাসিন্দাদের। এমনিতেই ২০১৪ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ন্যাটো বাহিনীর। সে প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে শুরুও হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে শুরু হয়েছে তালিবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্যোগও। তবে আফগানিস্তানের বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, অবিলম্বে এ সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক সরকার। না হলে অচিরে তালিবানের ঢঙেই মোল্লারা রাজত্ব চালাবেন দেশে। প্রসাধন-যৌনপেশার সম্পর্কের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ধর্মগুরু, সেটিকেও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন স্থানীয়রা। পুরোটাতেই শুধুমাত্র ফিরতি রক্ষণশীলতার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন তাঁরা।
অথচ সম্প্রতি আফগানিস্তানেই নারীর ভূমিকা আরও জোরদার করে তুলতে ২০ কোটি ডলারের একটি প্রকল্প চালু করেছে আমেরিকা। তার ক’দিনের মধ্যেই সামনে এল এ হেন ফতোয়া। এ কাজে পাশে রয়েছে পড়শি পাকিস্তানও। পুরনো আশঙ্কা সত্যি করে তালিবানি রক্ষণশীলতা ফিরে আসে কি না, এখন সেটাই দেখার। |