জোটের কোনও টানাপোড়েন ছিল না। একক ভাবেই মালদহ জেলা পরিষদ দখলে ছিল কংগ্রেসের। টাকারও অভাব ছিল না। গত আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনার খাতে ২৫ কোটি টাকারও বেশি এসেছিল জেলায়। তার প্রায় কিছুই খরচ করতে পারেনি মালদহ জেলা পরিষদ। ‘আশ্রয়’ প্রকল্পেও বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক টাকা পড়ে।
যোজনা কমিশনের মূল্যায়ন বলছে, আবাস, পানীয় জল, বিদ্যুৎ প্রভৃতির নিরিখে রাজ্যের সর্বাধিক বঞ্চিত তিনটি জেলার একটি হল মালদহ। দারিদ্রের সূচকেও উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদের পরেই রয়েছে এই জেলা। আবাসের জন্য মানুষের আগ্রহও বড় কম ছিল না। গৃহহীন, বিপিএল তালিকার মানুষদের অনেকেই ঘর পাওয়ার আশায় পঞ্চায়েতের অফিসে বারবার গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরেছেন। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান, সভাপতিদের একাংশও জেলা পরিষদে গিয়ে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। |
এখন ভোটের মুখে সেই ক্ষোভ যে দানা বেঁধেছে তা নিয়ে কংগ্রেস নেতাদেরও সংশয় নেই। পঞ্চায়েত সদস্যদের অনেকেরই অভিযোগ, তাঁরা বিস্তর আর্জি জানালেও জেলা পরিষদ থেকে ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা বিলি করাই হয়নি। অবশ্য পঞ্চায়েত সমিতির একাংশের বিরুদ্ধেও টাকা খরচ করতে না-পারার গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে। জেলার ১৫ টি ব্লকে ইন্দিরা আবাস যোজনা খাতে বরাদ্দ অন্তত ১২ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে।
পাঁচটি ব্লকের অনগ্রসর এলাকা বলে চিহ্নিত এলাকায় রাস্তা তৈরির এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অথচ জেলা পরিষদ তা তৈরি নিয়ে অন্তত ২ বছর টালবাহানা করে বলে অভিযোগ। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, পরিষদের বোর্ড মিটিং-এ প্রথমে ঠিক হয়, ওই প্রকল্পের টাকা জেলা পরিষদ খরচ করবে। পরে সেই কাজ অন্য সংস্থার মাধ্যমে করানোর সিদ্ধান্ত হয়। এতেই দেরি হয়ে যায় বলে জেলা পরিষদের দাবি। ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে বলে কাজ শুরু করা যায়নি।
একই ভাবে জেলার প্রতি ব্লকে হর্টিকালচার ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় জেলা পরিষদ। এক বছর আগে ওই খাতে ১ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ হয়। সে টাকা জেলা পরিষদেই পড়ে ছিল। পঞ্চায়েতের ভোট ঘোষণার কয়েক দিন আগে তড়িঘড়ি সেই টাকা জেলা পরিষদ এক সংস্থা দেয়। ভোট বিধি বলবৎ হওয়ায় সেই কাজও শুরু হয়নি। যে সব কাজ হয়েছে, তার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত এক বছরে যে ২২টি রাস্তা মেরামত করেছে তার বেশির ভাগ বছর ঘোরার আগেই ভেঙে গিয়েছে।
যে টাকা বরাদ্দ হয় তা যাতে
ঠিকঠাক খরচ হয় সেটা দেখার জন্য অনেকগুলি স্তর রয়েছে জেলা পরিষদে। যেমন বছরে চারটি সাধারণ সভা করে সেখানে সব আলোচনা করতে হবে। গত এক বছরে মালদহ জেলা পরিষদের সাধারণ সভা হয়েছে মাত্র ১টি। একই ভাবে ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটারিং কমিটির মিটিং বছরে চারটি হওয়ার কথা। গত বছর সেই কমিটির একটি মাত্র মিটিং হয়েছে। জেলা সংসদের সভা বছরে দুইটি হওয়ার কথা থাকলেও গত এক বছরে মালদহ মেলা পরিষদে একটিও জেলা সংসদের সভা হয়নি। ফলে, কোথায় টাকা এসে পড়ে আছে তা নিয়ে বলার সুযোগ অফিসার-জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই পাননি। যেমন, ২০১১-১২ আর্থিক বছরে মালদহ জেলা পরিষদ মোট বরাদ্দের ৬৬ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে। বাকি টাকা এখনও পড়ে রয়েছে।
তবে বিআরজিএফ, ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন, তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশনের মোট বরাদ্দের প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে মালদহ জেলা পরিষদ। গত এক বছরে মালদহ জেলা পরিষদ গ্রামে গ্রামে শৌচাগার তৈরির কাজেও অনেকটা সাফল্য এসেছে। দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী ৫০ হাজার মানুষকে জেলা পরিষদ শৌচাগার তৈরি করে দিয়েছে। সে জন্য খরচ করেছে ১৭ কোটি টাকা। |
খরচের খতিয়ান
|
কিছু প্রকল্প যাতে বরাদ্দের এক টাকাও গত অর্থবর্ষে খরচ হয়নি |
• বিধায়কের এলাকা উন্নয়নের তহবিল (৫৩ লক্ষ) • বিএমএস (৯ লক্ষ) • খাদ্য ও সরবরাহ (৪৭ লক্ষ) • সামাজিক বনসৃজন (১১ লক্ষ) • পশ্চাৎপদ শ্রেণিকল্যাণ- তফসিলি জাতি ও উপজাতি (১০ লক্ষ) • আবাসন ও নগরোন্নয়ন নিগম- ঋণ সহায়তা (১৬ লক্ষ) • ক্ষুদ্র সেচ (৬৬ লক্ষ) • সেচ ও জলপথ (১.১৪ কোটি) • জমি রেকর্ড সমীক্ষা (১১ লক্ষ) • পূর্ত (সড়ক) (১.০৭ কোটি) • বন্যার পরে পুনরুদ্ধারের কাজ (১১ লক্ষ) • খেলার মাঠ উন্নয়ন (২০ লক্ষ) • স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনায় পরিকাঠামো উন্নয়ন (১৯ লক্ষ) • জেলা উদ্যানপালন প্রযুক্তি কেন্দ্র (১.০৩ কোটি) • জাতীয় উদ্যানপালন অভিযান (২৬ লক্ষ) • চাঁচল স্টেডিয়াম (১.০১ কোটি) • প্রধানমন্ত্রী গ্রামোদয় যোজনা (১৯ লক্ষ) • সাংসদের উন্নয়ন তহবিল (২০ লক্ষ) • শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (১৫ লক্ষ |
কয়েকটি প্রধান প্রকল্পে যত খরচ হয়েছে |
প্রকল্প |
হাতে মোট টাকা |
পড়ে আছে |
খরচ হয়েছে (%) |
ইন্দিরা আবাস যোজনা |
২৮.৪৮ কোটি |
২৬.৬০ কোটি |
০.০৭ |
পশুপালন |
৩৩ লক্ষ |
৩৩ লক্ষ |
০.২৩ |
চিহ্নিত পশ্চাৎপদ গ্রাম উন্নয়ন |
৫.০১ কোটি |
৩.৭০ কোটি |
২৬.১৯ |
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন |
৫৬ লক্ষ |
৭১ লক্ষ |
২৬.১৯ |
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন |
৯.১৭ কোটি |
৬.৪০ কোটি |
৩০.২১ |
গ্রামীণ জল সরবরাহ |
১.৮০ কোটি |
১.০৮ কোটি |
৪০.০৬ |
স্বজলধারা |
১.০১ কোটি |
২৭ লক্ষ |
৭৩.৮৮ |
আশ্রয় |
১ কোটি |
২৬ লক্ষ |
৭৪.২৩ |
কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনিশিয়েটিভ |
১.১৭ কোটি |
২৭ লক্ষ |
৭৭.১২ |
গৌড়ে পর্যটন উন্নয়ন |
২.৮৮ কোটি |
২৫ লক্ষ |
৯১.২৩ |
সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প |
১.৭২ কোটি |
১২ লক্ষ |
৯৩.৩০ |
পশ্চাৎপদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল (বিআরজিএফ) |
২৩.৫০ কোটি |
১২ লক্ষ |
৯৯.৫০ |
বেহাল রাস্তার জন্য সন্ধ্যায় অটো চালানো বন্ধ করেছেন মালিকেরা। গ্রাম থেকে মালদহে যেতে অটোয় ৮-১০ টাকা লাগে। সেখানে গাড়ি ভাড়া করলে ২০০ টাকা দিতে হচ্ছে। মুনমুন দাস, গ্রামবাসী |
প্রতিদিন ৮-১০ হাজার সাইকেল যাতায়াত করে। পথে এত ধুলো উড়ছে যে ঘরের জানলা-দরজা সব সময় বন্ধ করেই রাখতে হয়। আর একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় এক হাঁটু জল জমে যাচ্ছে।
উত্তম দাস, গ্রামবাসী |
ঠিকাদার যখন রাস্তার কাজ করছিল বাধা দিই। নিম্নমানের জিনিস দিয়ে কাজ করার অভিযোগ করলে বলা হয়, যেমন টেন্ডার তেমন কাজ। কিছু বললে জেলা পরিষদে গিয়ে বলুন।
অশোক দাস, গ্রামবাসী |
|
|