|
|
|
|
হিমঘর নেই, পচছে শাঁখালু
দেবমাল্য বাগচি • মহিষাদল |
হিমঘরের অভাবে সমস্যায় মহিষাদলের শাঁখালু চাষিরা। হিমঘর না থাকায় ঘরের মধ্যেই পুরনো পদ্ধতিতে শাঁখালু সংরক্ষণ করছেন তাঁরা। বর্ষায় অল্প দিনেই পচন ধরায় শাঁখালু তোলার পরেই তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। মুনাফার সিকিভাগও মিলছে না এতে। কৃষি দফতরের কাছে হিমঘর গড়ার দাবি জানিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ শাঁখালু চাষিদের। ফলে চলতি মরসুমে অনেক চাষিই শাঁখালু চাষ ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।
দীর্ঘ দিন ধরেই পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে শাঁখালু চাষ হয়ে আসছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে শাঁখালু চাষ হয়। প্রায় দেড় হাজার পরিবার এই শাঁখালু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে শাঁখালুর বীজ রোপণ করে ফসল তোলা হয় পৌষ-মাঘ নাগাদ। সেই সময় ফসল বিক্রিতে প্রতি কিলোগ্রামে ১০ টাকার বেশি মেলে না। অথচ পুজোর মরসুমে প্রতি কিলোগ্রামে ৫০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা পাওয়া যায় বলে দাবি চাষিদের। তাই মুনাফার আশায় ভাদ্র-আশ্বিন মাস অর্থাৎ পুজোর মরসুম পর্যন্ত শাঁখালু সংরক্ষণ করে রাখা হয়। |
শাঁখালুর বীজ রোপণ মহিষাদলের গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র। |
হিমঘর না থাকায় এখনও পুরোনো পদ্ধতিতে বাড়ির মধ্যেই মাটির স্তর করে সেখানে সারি দিয়ে শাঁখালু সংরক্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। কিন্তু বর্ষায় ছত্রাকের ছোঁয়ায় পচন ধরে সহজেই। এ ছাড়াও ইঁদুর, পিঁপড়ে, পোকামাকড়ের উৎপাতে অনেক শাঁখালু নষ্ট হয়। সুন্দরা গ্রামের চাষি রবীন্দ্রনাথ গাঁতাইতের কথায়, “আমরা যতটা সম্ভব ফসল সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু ঘরের মধ্যে এ ভাবে শাঁখালু থাকায় অনেক সময়েই তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি দফতরে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। লোকসানের বহর বাড়ছে।” একই কথা বলেন শাঁখালু চাষি ভানুভূষণ মাইতি। তাঁর কথায়, “ফসলের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই শাঁখালু চাষ ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছি।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই ন্যাশনাল হর্টিকালচার মিশনের উদ্যোগে পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে বহুমুখী হিমঘর তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্প এখনও বিশ বাঁও জলে। তবে জেলার বিভিন্ন ব্লকে সরকারের ‘কিসান মাণ্ডি’ প্রকল্প আশার আলো জাগিয়েছে। মহিষাদলে কিসান মাণ্ডি তৈরি হলে একটি হিমঘর হওয়ার আশা রয়েছে। তবে পাঁশকুড়া, নন্দীগ্রাম সহ বেশ কিছু ব্লকে ‘কিসান মাণ্ডি’ প্রকল্প চালু হলেও মহিষাদলে এখনও ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। মহিষাদলের ব্লক কৃষি আধিকারিক মৃণালকান্তি বেরা বলেন, “মূলত শাঁখালুর কথা ভেবেই হিমঘর প্রয়োজন। তবে অন্য ফসলের জন্যও বহুমুখী হিমঘর গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পিপিপি মডেলে হিমঘর এখনও তৈরি হয়নি। কিসান মাণ্ডি প্রকল্প চালু হলে চাষিদের সমস্যা মিটবে।” |
|
|
|
|
|