|
|
|
|
|
|
দাশনগর |
বিপন্ন শিল্পাঞ্চল |
সুপ্রিয় তরফদার |
রাস্তা বেহাল। মেলে না পানীয় জল। অন্যান্য পরিকাঠামোর অবস্থাও ভাল নয়। ফলে ডুবতে বসেছে ব্যবসা। এমনই অবস্থা হাওড়ার দাশনগরের ক্ষুদ্র শিল্পাঞ্চলের (হাওড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট)। শিল্পোদ্যোগীদের অভিযোগ, প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ফলে ক্ষুব্ধ শিল্পোদ্যোগীরা ধর্মঘটে যাওয়ার কথা ভাবছেন। যদিও রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগম সূত্রে খবর, সমস্যা সমাধানে তারা উদ্যোগী হয়েছে।
’৬৭-তে বালিটিকুরিতে ১৭ একর জমির উপরে এই ক্ষুদ্র শিল্পাঞ্চল তৈরি হয়। এটি রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগমের অধীন। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭৭টি কারখানা রয়েছে। রয়েছে ১০টি দোকানও। এখানে ময়দার কল, রেলের সেতুর নানা অংশ, প্লাস্টিক, ইস্পাতের নানা জিনিস তৈরি হয়ে দেশের নানা জায়গায় যায়। কয়েক হাজার শ্রমিক এখানে কাজ করেন।
|
|
শিল্পাঞ্চলটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। যেমন, রাস্তায় পিচ নেই। একটু বৃষ্টিতেই কাদা হয়ে যায়। লরি বা যে কোনও বড় গাড়ির চাকা বসে যায়। এমনকী, ভ্যানেও মাল আনা যায় না। তাই কাঁচামাল আনতে খুবই সমস্যা হয়। শিল্পোদ্যোগী সুরজিৎ মণ্ডলের কথায়: “এক জনের কিছু অর্ডার দিতে আসার কথা ছিল। রাস্তার এমনই অবস্থা যে তিনি আমার
অফিসে পৌঁছতেই পারেননি। নিকাশির অবস্থাও খারাপ।”
একটি সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার গৌরীশঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “নিকাশির জন্য রাস্তা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। বার বার জানিয়েও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি।” সমস্যার কথা স্বীকার করে রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগমের এক আধিকারিক বলেন, “রাস্তার অবস্থা খারাপ। তবে ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাস্তা সারানো হবে। দরপত্র ডাকা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। কিন্তু, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব শিল্পোদ্যোগীদেরই নিতে হবে। নিকাশির জন্য পাম্প বসানো হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের সংযোগের জন্য ট্রান্সফর্মার বসানো হচ্ছে।”
শিল্পোদ্যোগীদের অভিযোগ, তাঁরা রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগমকে লিজের ভাড়া এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাবদ প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা কর দেন। কিন্তু হাওড়া পুরসভাকে খাজনা দেন না। তাঁদের দাবি, এই খাজনা দেওয়ার কথা ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগমেরই। কিন্তু নিগম খাজনা না দেওয়ায় পুরসভার থেকে কারখানার সম্প্রসারণ বা সংস্কারের অনুমতি মিলছে না। যদিও নিগমের এক আধিকারিক বলেন, “আগে আমরাই পুরসভাকে খাজনা দিতাম। কিন্তু সব শিল্পোদ্যোগী আমাদের ঠিকমতো কর দেন না। তাই আমরা পুরসভাকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।” |
|
শিল্পাঞ্চলের মূল প্রবেশপথের পাশে সিটিআই রোড দিয়ে কেএমডব্লিউএসএ-র পানীয় জলের পাইপ গিয়েছে। কিন্তু এই চত্বরে পানীয় জলের কোনও সংযোগ নেই। জল কিনে খেতে হয় বলে অভিযোগ। তা ছাড়া, প্রবেশপথের মুখে ৭৩ ও ৩৮ নম্বর রুটের মিনিবাস স্ট্যান্ডে বাসগুলি এমন ভাবে দাঁড়ায় যে দোকান খোলাই দায়। এমনকী, বাসের ধাক্কায় কয়েকটি দোকানের সামনের অংশও ভেঙে গিয়েছে। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সুব্রত ঘোষ বলেন, “বাসস্ট্যান্ডের জন্য দোকান খোলায় সমস্যা হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এই শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়েও শিল্পোদ্যোগীদের অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু অংশে পাঁচিল নেই। বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করেন। এলাকার ভিতরে বেআইনি ভাবে গাড়ি পার্ক করা থাকে। ফলে তাঁরা নিজেদের খরচে নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করেছেন বলে জানান।
হাওড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রবীর রায় বলেন, “গত বছর অগস্টে মুখ্যমন্ত্রী এবং নিগমের চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু, কোনও সুরাহা হয়নি।” রাজ্য ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগমের এক আধিকারিক জানান, পানীয় জলের জন্য কেএমডব্লিউএসএ-র সঙ্গে কথা বলা হবে। তবে অর্থাভাবে এখনই পাঁচিল দেওয়া সম্ভব নয়। |
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
|
|
|
|
|
|