বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল, হাওড়ায় মোটের উপরে ভোট মিটল শান্তিতে
সামান্য কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিতেই ভোট মিটল হাওড়ায়।
জয়পুরের উত্তরবাঁধেএই এলাকায় নির্বাচনের কয়েক দিন আগে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা বোমাবাজি ও মারপিটে জড়িয়ে পড়েন। ৪০টি বাড়ি পোড়ানো হয়। নিজের দলের ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে গিয়ে মার খান কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র। অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের দিকে। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল। শুক্রবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনে অবশ্য এই এলাকায় গিয়ে পাওয়া গেল না গোলমালের কোনও আঁচ।
উত্তরবাঁধের বাসিন্দারা ভোট দিয়েছেন কাশমলি পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বুথের প্রহরায় ছিল রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ। বুথের বাইরে দেখা গিয়েছে ভোটারদের লম্বা লাইন। ভিতরে বসেছেন কংগ্রেস এবং তৃণমূল দু’টি দলের এজেন্ট। সিপিএম এজেন্টকে দেখা গেল না। প্রিসাইডিং অফিসার জানালেন, সিপিএমের এজেন্ট ছিলেন, তবে ওই সময়ে তিনি খেতে গিয়েছেন। বুথের বাইরে অবশ্য কংগ্রেস বা সিপিএমের কোনও কর্মীকে দেখা গেল না। ভিড় করেছিলেন শুধুই তৃণমূলের কর্মীরা। মাঝে মাঝে গাড়ি বোঝাই কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে টহল দিয়ে যাচ্ছেন।
উলুবেড়িয়ায় মহিলা ভোটারদের উৎসাহ।
তৃণমূল নেতা হাফিজুর রহমান বললেন, “পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হচ্ছে। কয়েক দিন আগে অশান্তি হওয়ায় আমরা কোনও গোলমাল হতে দিচ্ছি না।” কংগ্রেসের অভিযোগ, উত্তরবাঁধে তাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করানো হয়েছে। একই অভিযোগ করেছেন সিপিএম নেতারাও। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতারা। অন্য দিকে উত্তরবাঁধে যাঁদের বাড়ি পুড়েছিল তাঁদের অন্যতম মানকুমার খান বলেন, “আমি কংগ্রেসের কর্মীই ছিলাম। কিন্তু দু’দিন হল আমি স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। ভোটও দিয়েছি।”
হাওড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন মোটের উপরে শান্তিতে কেটেছে। ২০০৮ সালে এই জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ডোমজুড় এবং জগৎবল্লভপুরে দু’জন খুন হয়েছিলেন। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে মারপিট বা সংঘর্ষে আহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। বরং বুথগুলিতে গিয়ে দেখা গেল ভোটারদের লম্বা লাইন। অধিকাংশ বুথে মোতায়েন ছিল আধাসামরিক বাহিনী। এ ছাড়াও ছিল বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ টহলদারি। যেখান থেকে গোলমালের খবর এসেছে সেখানে ছুটে গিয়েছে বাহিনী।
গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে ভোটকেন্দ্রে হাজির এই বৃদ্ধাও।
সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ জলা বিশ্বনাথপুর পঞ্চায়েতের মধ্য ধুনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুষ্কৃতীরা হামলা করে। এখানে তিনটি বুথ ছিল। প্রিসাইডিং অফিসার-সহ অন্য ভোটকর্মীদের মারধর করে তারা। বন্ধ হয়ে যায় ভোট। দুষ্কৃতীরা পিছনের জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিড়ে দেয়। বাধা দিলে পুলিশ মার খায় বলে অভিযোগ। ৬টি ব্যালট বাক্স পুকুরে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। প্রথম দিকে ভোটাররা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেলেও একটু পরেই মহিলা-সহ একদল গ্রামবাসী লাঠিসোটা, রড নিয়ে তাড়া করেন দুষ্কৃতীদের। তৃণমূল ও সিপিএম পরস্পরের ঘাড়ে হামলার দায় চাপিয়েছে। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, হামলার আধঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। ঘটনাস্থলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে পৌঁছনোর পরে এক্সিকিঊটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুব্রত ভট্টাচার্য ভোট বন্ধের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আমতা ২ ব্লকের বিকেবাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দু’টি বুথে ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং বাগনান ২ ব্লকের আন্টিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি বুথে ব্যালট বাক্সে জল ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ডোমজুড়ে মহিলা ভোটারেরা।
বাঁকড়ার শিবপাড়া আল আমিন হাই মাদ্রাসা ও মোবারেক হোসেন বালিকা বিদ্যালয় দু’টি বুথ দখল করে তৃণমূলের লোকজন বোমাবাজি করে বলে কংগ্রেস এবং সিপিএমের অভিযোগ। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে অশান্ত হয়ে উঠেছিল ডোমজুড়ের কোলড়া-১ পঞ্চায়েতের কারবালা এলাকা। এ বছর সেখানে ভোট হল শান্তিতেই। ধূলাগড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৮, ১১৯ ও ১৭৪ নম্বর বুথে বুথজ্যাম করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৮ ও ১১৯ নম্বর বুথে তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। অভিযোগ, বিডিও অফিস ওইসময় তালাবন্ধ ছিল। অন্যদিকে ডোমজুড়ের বেগড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৯৫ নং বুথে কেশবপুর বিদ্যাসাগর প্রাথমিক স্কুলে বিকেল পাঁচটার পর ভোটারদের লাইনে হামলার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। দু’টি দলই তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জগৎবল্লভপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজরাপাড়া গালর্স নিউ সেট-আপ আপার প্রাইমারী স্কুলে ভোট শুরু হওয়ার পর ভুল ভাঁজের কারণে বাতিল হয় ১৪টি ভোট।
ভোট দিতে না পেরে জগৎবল্লভপুর ব্লক অফিসে সিপিএম সমর্থকদের বিক্ষোভ।
বালির দুর্গাপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে দুর্গাপুর পল্লীমঙ্গল বিদ্যামন্দিরে দুপুর ১টা নাগাদ তৃণমূল ও সিপিএমের বচসা বাধে। বিবদমান দু’টি পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি চালায়। জেলা পুলিশের কর্তারা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। আমতা-২ ব্লকের জয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সেহাগড়িতে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। অন্যদিকে উদয়নারায়ণপুরে জেলা পরিষদের ৩৭ নম্বর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থী সরোজ কাঁড়ারের সঙ্গে নির্দল প্রার্থী প্রবীণ মালের।

ছবিগুলি তুলেছেন সুব্রত জানা ও রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
(তথ্য সহায়তা: নুরুল আবসার, দেবাশিস দাশ, অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু ঘোষ)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.