পঞ্চায়েত ভোটের জন্য বাস তুলে নেওয়ায় সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনকে বলেছিলেন, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বাস যেন কোনও ভাবেই তোলা না হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে পুলিশ এবং পরিবহণ-কর্তাদের সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সে নির্দেশ পৌঁছয় কলকাতা সংলগ্ন হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা-সহ বাকি দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের জেলাশাসকদের কাছেও। কিন্তু বাস্তবে শুক্রবার, ভোটের দিন সকাল থেকে কলকাতার রাস্তায় কার্যত বাসই পাওয়া গেল না। বাস না থাকায় দিনভর হয়রানি হল নিত্যযাত্রীদের। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি বাসও এ দিন কলকাতার রাস্তায় দেখা যায়নি।
বাসমালিকেরা অবশ্য বাস না থাকার কারণ হিসেবে শুধু নির্বাচন কমিশনের বাস তুলে নেওয়াকেই দায়ী করছেন না। তার সঙ্গে সরকার ভাড়া না বাড়ানোর জেরে উত্তরোত্তর কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বাসের সংখ্যা সার্বিক ভাবে কমে যাওয়াও এর কারণ বলে মত তাঁদের।
বাসমালিকদের সংগঠন ‘বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট’ এবং মিনিবাস মালিকদের সংগঠনের নেতা দীপক সরকার এবং অবশেষ দাঁর যেমন বক্তব্য, বাস কমে যাওয়ার পিছনে বড় কারণই নির্বাচন। প্রশাসন কয়েক দিন আগে থেকেই ভোটের জন্য বাস তুলে নিয়েছে। ফলে, রাস্তায় বাস এমনিতেই কমে গিয়েছে। তাঁদের কথায়, “শুধু আজকেই নয়, কাল অবধি এই সমস্যা থাকবে। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে আসতে আসতে কমতে পারে এই সমস্যা। তখন রাস্তায় আবার বাস পাওয়া যাবে। |
‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, কমিশনের বাস তুলে নেওয়াই বাস না-থাকার একমাত্র কারণ নয়। তিনি বলেন, “ভাড়া না বাড়ার জন্য ধারাবাহিক ভাবে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বাস ক্রমশই কমে যাচ্ছে। সাধারণ বাস প্রায় ৫০ শতাংশই বসে গিয়েছে। জেএনএনইউআরএম বাসগুলির ক্ষেত্রে অবস্থা আরও শোচনীয়। প্রায় ৭০ শতাংশ বাসই চলছে না। ফলে এমনিতেই সব রুটে বাস কমেছে। তার উপরে নির্বাচন কমিশন বাস তুলে নেওয়ায় অধিকাংশ রুটে কার্যত বাস নেই বললেই চলে।” তিনি আরও বলেন, “এমনিতেই এখন বাস চালিয়ে মালিকদের আর তেমন লাভ হয় না। তার উপরে যে সব বাস পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে, তারা ভয় পেয়েও বাস বার করেনি। যদি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, তা হলে সেই ক্ষতি বাসমালিক সামাল দেবেন কী করে!”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য বাস না থাকার অভিযোগ একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “নির্বাচন কমিশন ঢালাও বাস তুলে নেওয়ায় পরিবহণ ব্যবস্থা কিছুটা বিপর্যস্ত হয়েছে। আমরা কিছু কিছু বাস ফিরিয়ে এনে পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক করেছি। কাল থেকে পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
বাসমালিকেরা অবশ্য পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে একমত নন। তাঁদের মতে, এ দিন সন্ধ্যায় বাস ছেড়ে দিলে কাল বাসের সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু বেশি রাতে বাস ছাড়লে কালও একই রকম পরিস্থিতি থাকবে। |