তৃণমূল-এসইউসি সংঘর্ষের পরে রাত পেরোলেও থমথমে কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রাম। শুক্রবার ওই এলাকায় পুলিশি টহল ছিল। এসইউসি-র কাটোয়া লোকাল কমিটি এক বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছে, তাদের নেতারা কোজলসা গ্রামে যেতে গেলে পুলিশ নানা অজুহাত দেখিয়ে যেতে নিষেধ করেছে। বাধ্য হয়ে দলের জেলা নেতৃত্ব কেতুগ্রাম থানা থেকে ফিরে এসেছে। পুলিশ গ্রাম থেকে এক এসইউসি সমর্থককে আটক করেছে।
বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত ভোটের পুনর্নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেই কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের কোজলসা গ্রামে তৃণমূল এবং এসইউসি-র মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়। দু’পক্ষের মধ্যে গুলিও চলে। বৃহস্পতিবার ওই পঞ্চায়েতেরই মোরগ্রামে দু’টি বুথে ফের ভোট হয়। পুলিশ জানায়, ভোট শেষ হওয়ার পরেই কোজলসা বাসস্টপে ভোট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে বচসা বাধে। তার পরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, তৃণমূলের বিক্ষুব্ধেরা এসইউসি-র প্রতীকে তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছে। আর এই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীকে মদত দিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোজলসার পাহাড়পুর পাড়ার কাছে একটি মাঠে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে বোমাবাজি ও গুলির লড়াই চলে। অন্তত ৬০-৭০টি বোমা পড়ে ও আট রাউন্ড গুলি চলে বলে পুলিশের ধারণা। পুলিশ গেলে লড়াই থামে। এসইউসি অভিযোগ করেছিল, পাহাড়পুর এলাকার বুথ দখল করতে না পারার রাগেই তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, এসইউসি-র নাম করে দুষ্কৃতীরা তাদের এক সক্রিয় কর্মীর উপরে গুলি চালায়। তা থেকেই উত্তেজনা দেখা দেয়।
শুক্রবার সকালে এসইউসি-র জেলা নেতৃত্ব ওই গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই এলাকায় তাঁদের জখম কর্মীরা বাড়িতেই পড়ে রয়েছেন। ওই কর্মীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কাটোয়ায় নিয়ে আসা ও গ্রামের পরিস্থিতি দেখতেই যেতে চেয়েছিলেন, দাবি এসইউসি নেতাদের। দলের কাটোয়া লোকাল সম্পাদক অপূর্ব চক্রবর্তী লিখিত বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, কেতুগ্রাম থানার আইসি ‘পুলিশের অভাব’ ও ‘এলাকায় গেলে উত্তেজনা বাড়বে’এই অজুহাত দিয়ে তাঁদের যাওয়া আটকে দেন। অপূর্ববাবু বলেন, “এসডিপিও-কে বিষয়টি জানালে তিনি আইসি-র সঙ্গেই কথা বলতে বলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারও (গ্রামীণ) একই কথা বলেন। তার পরে আর কোথায় যাব?” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকে কোজলসার পাহাড়পুর পাড়া পুরুষশূন্য।
শুক্রবার দিনভর কোজলসায় ছিলেন কেতুগ্রামের আইসি আব্দুর গফ্ফর। এসইউসি নেতাদের গ্রামে যেতে নিষেধ করা প্রসঙ্গে পুলিশের কোনও কর্তা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ভোটের জন্য অন্য জেলায় পুলিশ চলে গিয়েছে। পাশাপাশি ওই এলাকায় উত্তেজনাও রয়েছে। এই অবস্থায় ওই এলাকায় গেলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় কেতুগ্রাম থানা এসইউসি নেতৃত্বকে গ্রামে যেতে বারণ করেছে।” |