সংসারে বনিবনা ছিল না দু’জনের। সেই শাশুড়ি ও বউমার দেহ মিলল একই ঘরে। বৃহস্পতিবার বোরো থানার নেকড়া গ্রামে ওই মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ সকাল ১০টায় গ্রামে গিয়ে শাশুড়ি লক্ষ্মীপ্রিয়া মণ্ডল (৫৬) ও তাঁর পুত্রবধূ চন্দনা মণ্ডলের (২৬) দেহ উদ্ধার করে। পরে দেহ দু’টি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।
বোরো থানার জাহিরাডি গ্রামের চন্দনার সঙ্গে প্রায় আট বছর আগে গৌরাঙ্গ মণ্ডলের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই ও তিন বছরের দু’টি ছেলে রয়েছে। গৌরাঙ্গের বাবা গোপাল মণ্ডল টাটায় একটি সংস্থায় অস্থায়ী কর্মীর কাজ করেন। বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলে ও মা’কে নিয়ে গৌরাঙ্গ থাকতেন। পড়শিরা জানিয়েছেন, চন্দনা ও শাশুড়ির মধ্যে প্রায় দিন নানা কারণে অশান্তি লেগেই থাকত। বুধবার রাতে কী হয়েছিল? গৌরাঙ্গের দাবি, “এক ঘরেই আমরা পাঁচ জনে ঘুমাচ্ছিলাম। ভোরে ঘুম ভেঙে দেখি কড়িকাঠে মায়ের দেহ ঝুলছে। স্ত্রী ও ছেলেরা তখন ঘরের একপাশে ঘুমাচ্ছিল। ওদের না ডেকে গ্রামের লোকেদের ডাকতে যাই। ফিরে দেখি বিছানায় স্ত্রী মরে পড়ে রয়েছে। কী করে এসব ঘটল বুঝতে পারছি না।” তাঁর এই বয়ান ঘিরেই রহস্য ঘনিয়েছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তাঁর কথায় অসঙ্গতি রয়েছে।
চন্দনার বাপের বাড়ির লোকেরাও জামাইয়ের কথা মানতে পারছেন না। তাঁর দাদা সরোজ মণ্ডলের অভিযোগ, “বিয়ের পর থেকে অশান্তি লেগে ছিল। সামান্য কারণে গৌরাঙ্গ ও তাঁর বোনের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালাত। এই নিয়ে কয়েকবার থানাপুলিশও হয়েছে। কিন্তু ওরা নিজেদের সংশোধন করেননি।” তাঁর দাবি, “আমাদের সন্দেহ গৌরাঙ্গ এবং ওর মা বোনকে গলা টিপে খুন করে। পরে পুলিশের ভয়ে বোনের শাশুড়ি নিজেই গলায় দড়ি দেন।” নেকড়া গ্রামের বাসিন্দা শুকদেব মণ্ডল, অনিল মণ্ডল বলেন, “ওঁদের বাড়ি গ্রামের এক প্রান্ত হওয়ায় মৃত্যুর কারণ আমাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। তবে ওঁদের শাশুড়ি ও বৌমার মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হত।” বাড়িতে অশান্তির কথা স্বীকার করেছেন চন্দনার স্বামী গৌরাঙ্গও। তাঁর কথায়, “সংসারে কাজ করা নিয়ে ওঁদের মাঝে মধ্যে ঝগড়া হত ঠিকই। তবে তা কখনও মাত্র ছাড়ায়নি।”
গৌরাঙ্গর বাবা গোপাল মণ্ডল বলেন, “আমি টাটায় কাজ করি। বাড়িতে কম থাকি। খবর পেয়ে বাড়ি এসে দেখি এই কাণ্ড। কী করে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।” চন্দনার বাবা অবনী মণ্ডল দাবি করেছেন, “কী কারণে আমার মেয়ের মৃত্যু হল পুলিশ তা তদন্ত করে দেখুক।” তবে এ দিন রাত পর্যন্ত ওই মৃত্যু নিয়ে কেউ তাঁদের কাছে অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছে বোরো থানা। প্রাথমিক তদন্তে তারা চন্দনার গলায় কালশিটের দাগ দেখতে পেয়েছেন। আপাতত পুলিশ দু’টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। |