|
|
|
|
পুনর্নির্বাচনেও উৎসবের মেজাজ |
কিংশুক গুপ্ত • বেলপাহাড়ি
অভিজিৎ চক্রবর্তী • দাসপুর |
কড়া নিরাপত্তায় নির্বিঘ্নেই মিটল পুনর্নির্বাচন পর্ব। বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি এবং দাসপুরের দু’টি বুথে ফের ভোট নেওয়া হয়। কোথাওই কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
গত ১১ জুলাই বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজপাড়া বুথে ঢুকে ১৭টি ব্যালট পেপার দুষ্কৃতীরা লুঠ করে বলে অভিযোগ করেছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার। সিপিএম, ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) এবং নির্দল প্রার্থীর তরফেও কমিশনে অভিযোগ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, ওই দিন সন্ধ্যায় এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তৃণমূলের লোকজন। তারপর বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে ছাপ্পা ভোট দেয়। পরে ভোটারদের একাংশের প্রতিরোধের মুখে তারা চম্পট দেয়। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারও অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। এরপরই এড়গোদা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
এ দিন আর কোনও ঝুঁকি নেয়নি প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাজপাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ১২৭ নম্বর বুথে ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। দায়িত্বে ছিল রাজ্য পুলিশের স্ট্র্যাকো বাহিনী। তাছাড়া, এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) সন্তোষকুমার মণ্ডল এবং বিনপুর থানার আইসি সুমন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বুথ ও আশপাশে জনা পঞ্চাশেক সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন ছিল। বুথের ভিতরে ছিলেন দু’জন সশস্ত্র স্ট্র্যাকো কর্মী এবং দু’জন লাঠিধারী পুলিশ। বুথের বাইরে জনা পনেরো পুলিশকর্মী। ১০টি মোটর সাইকেলে পর্যায়ক্রমে চারপাশে টহল দিচ্ছিলেন ২০ জন সশস্ত্র পুলিশ। ভোট চলাকালীন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বুথের উল্টোদিকে গাছতলায় ঠায় বসেছিলেন মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (নির্বাচন) ইন্দ্রদেব ভট্টাচার্য ও বেলপাহাড়ির বিডিও সর্বোদয় সাহা। মাঝে মধ্যেই এসে পরিস্থিতি ঘুরে দেখে যাচ্ছিলেন বেলপাহাড়ি ব্লক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক আব্দুল করিম লস্কর। |
|
রাজপাড়া বুথে কড়া নিরাপত্তা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
রাজপাড়ার এই বুথে গত দু’টি (২০০৩ ও ২০০৮) পঞ্চায়েত নির্বাচনেই সিপিএম জিতেছিল। এই বুথের অধীনে রয়েছে কাঁটাশোলা, রাজপাড়া ও ধোবাকুড়িয়াএই তিনটি গ্রাম। মোট ভোটার ১০১৩। এ দিন সকাল থেকেই ভোটাররা লাইনে জড়ো হন। চাষের ফাঁকে এসে অনেকেই ভোট দিয়েছেন। দিনের শেষে ভোট পড়েছে ৮৪.৬৯%। ভোট দিতে আসা অনিল দাস, সনাতন মাহাতো, খুকু মাহাতোদের বক্তব্য, “গাঁ-গঞ্জে পঞ্চায়েত ভোট মানে উৎসব। এ দিন ফের ভোট দেওয়ার সুযোগ কেউই ছাড়তে চায়নি।” তৃণমূল, সিপিএম, ঝাড়খণ্ড পাটি-নরেন এবং নির্দল চার জন প্রার্থীর এজেন্টই এ দিন বুথে ছিলেন। কিছুটা দূরে সিপিএম ও ঝাড়খণ্ডীদের বুথ ক্যাম্পও চোখে পড়ল। তবে তৃণমূলের বুথ ক্যাম্পটি ছিল নজরকাড়া। সেখানে ছিলেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক দুর্গেশ মল্লদেব, জেলা কমিটির সদস্য অশোক মহাপাত্র, বেলপাহাড়ি ব্লকের দলীয় নেতা ধীমান লাহা, এড়গোদা অঞ্চল সভাপতি বিকাশ মাহাতো প্রমুখ। এসেছিলেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষও।
বুথ প্রাঙ্গণে দেখা মিলল সিপিএম প্রার্থী ঊষারানি মাহাতো ও ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) প্রার্থী হরিহর নায়েক-এর সঙ্গে। দু’জনেই বললেন, “এই বুথটা অতি স্পর্শকাতর। অথচ সে দিন গোলমালের খবর দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল।” এ দিনে নিরাপত্তায় অবশ্য তাঁরা সন্তুষ্ট। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কমিশনের নির্দেশে শুধু গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ নম্বর আসনে পুনরায় ভোট নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়েই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।”
দাসপুর-১ ব্লকের সীমানা প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথেও ছিল কড়া নিরাপত্তা। বুধবার বিকাল থেকেই এলাকায় পুলিশি টহল চলছিল। ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট মিটেছে।” এই বুথে শুধু জেলা পরিষদ আসনেই ভোট হচ্ছে। কোনও গোলমাল না হলেও এ দিন ওই বুথে তৃণমূল ছাড়া আর কোনও দলের পোলিং এজেন্ট ছিল না। দিনের শেষে ভোট পড়েছে প্রায় ৭০%।
গত ১১ জুলাই এই বুথে ছাপ্পা ভোটে বাধা দেওয়ায় প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর এবং ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রিসাইডিং অফিসার দিব্যেন্দু মণ্ডলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশনের আধিকারিকেরা রিপোর্ট পাঠান। তার ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন পুনরায় ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়। এ দিন সীমানা বুথে নিরাপত্তার আয়োজন ছিল নজরে পড়ার মতো। কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলেও পুলিশকর্মী ছিলেন প্রায় ৫০ জন। ঘাটালের ডিএসপি (ক্রাইম) দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, সিআই অসিত সামন্ত, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিমল সরকার এবং পর্যবেক্ষক অসীম ভট্টাচার্য-সহ পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ভোট কেন্দ্রে এসেছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী, ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী। গোটা সীমানা গ্রাম চষে বেড়ান দাসপুর-১ ব্লকের বিডিও তথা রিটার্নিং অফিসার রোশনি সরকার। |
|
|
|
|
|