দু’দিনেই সুপারহিট ইস্টবেঙ্গলের ‘বাবাই’!
অনেকটা ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়ালের মতোই। সাওপাওলোয় তিনি ছিলেন আমেরিকো। আর কলকাতায় হয়ে গিয়েছেন ‘বাবাই’। কারও কারও ‘বাবাইদা’। মোগা, চিডি, ওপারাদের অনুপস্থিতিতে এই মুহূর্তে লাল-হলুদের সেরা বিনোদন বিশাল বপু এই ব্রাজিলীয় ফিটনেস ট্রেনার কাম গোলকিপার কোচ। যাকে দেখতে দু’বেলা কলেজ, অফিস কেটে লাল-হলুদ সমর্থকদের ভিড় ময়দানে।
তবে পয়সা উসুল সকলেরই। থপথপিয়ে হেঁটে সমর্থকদের আদরের ‘বাবাই’ যেমন গ্যালারির পেটে খিল ধরিয়ে দিচ্ছেন, তেমনই তাঁর কাজে মজা পাচ্ছেন মেহতাবরাও ।
কেমন সেই কাজ? বৃহস্পতিবার সকাল। ইস্টবেঙ্গল মাঠে গমগম করে বাজছে সাউন্ড সিস্টেম। মাঠের ভিতর অনুশীলনে হাজির ফুটবলারদের তিনটে দল। ব্যান্ডমাস্টার সেই আমেরিকো ওরফে ‘বাবাই’।
শর্টস-জার্সি পরা লাল-হলুদের ফর্সা টুকটুকে ‘নাদুসনুদুস’ ফিজিক্যাল ট্রেনার কাম গোলকিপার কোচ মাঝে মাঝেই ছুটে চলে আসছেন ফেন্সিংয়ের ভিতর। ফাই থেকে বের করছেন একের পর এক সিডি। আর ক্লাব কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন সেই সিডি চালাতে। আর তারপরেই মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ‘বিপ টেস্ট’-এর নির্দেশাবলী, “ওয়ান-ওয়ান, ওয়ান-টু, ওয়ান থ্রি...টুয়েলভ এইট, টুয়েলভ নাইন, টুয়েলভ টেন...।” |
মাঠের মধ্যে চেয়ার পেতে ‘বাবাই’-এর এই অডিও সহযোগে হাইটেক বিপ টেস্ট দেখছেন কর্তারা। আর গ্যালারিতে সমর্থকদের কারও মাঠ ফাটিয়ে চিৎকার, “বাবাইদা, আগে বাড়ো”, কেউ বা জীবনমুখী গানের কলি ধার করে উলটেপালটে বলছেন, “বাবাইকে মোটা বোলো না, বাবাইকে মোটা বোলো না।” থলথলে শরীর নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের বাবাই যদিও রয়েছেন নিজের মেজাজেই। কোনও দিকে না তাকিয়ে প্রতিটি ফুটবলারের শারীরিক সক্ষমতার খুঁটিনাটি টুকে রাখছেন নোটবুকে। তাঁবুতে ফুটবলারদের মেডিক্যাল পরীক্ষার সময়ও ইসিজি, পালস রেট উঠছে তাঁর খাতায়।
শুধু কি দর্শক, সমর্থক? ফুটবলাররাও যে মজেছেন বাবাই ফ্যাক্টরে। বিকেলে অনুশীলন সেরে বাড়ি ফেরার পথে এ বারের লাল-হলুদ অধিনায়ক মেহতাবও যে হাসিমুখে বলে গেলেন, “বিপ টেস্ট জাতীয় দলেও হয়। কিন্তু আমেরিকো মজাদার রিদমটাকেও বেশ ধরেছে।”
‘বাবাই’ মহিমা এতটাই যে তাঁকে দেখতে এ দিন বিকেলে ক্লাবে এসেছিলেন দ্রোণাচার্য কোচ সৈয়দ নইমুদ্দিন। ময়দানে যিনি বিখ্যাত ফিটনেসের জন্য। ইস্টবেঙ্গলকে ত্রিমুকুট দেওয়া সেই গম্ভীর কোচও ‘বাবাই’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুচকি হাসি লুকোতে পারলেন না। বলছেন, “আপনারা তো সবই জানেন।”
|
আমেরিকোর সারা দিন |
• সকাল ৮-৩০। দলের সব ফুটবলারকে নিয়ে বিপ টেস্ট। চলল এক ঘণ্টা দশ মিনিট।
• ৯-৪০। গোলকিপারদের নিয়ে অভিনব অনুশীলন পঁয়ত্রিশ মিনিট।
• ১০-১৫। শেষ সকালের অনুশীলন। মাঠ থেকে ফিরেই তাঁবুর দরজা বন্ধ করতে
নির্দেশ ক্লাব কর্মীদের। ভিতরে চলল ফুটবলারদের মেডিক্যাল পরীক্ষা।
• ১১-০০। তাঁবুতেই মধ্যাহ্নভোজ। মেনুতে ভাত, ডাল, আলুসেদ্ধ, চিকেন স্টু, আম এবং মুসাম্বি।
• ৪-০০। দ্বিতীয় দফার অনুশীলন। শুরু গা ঘামানো। কোচ ফালোপা চলে গেলেন র্যাম্পার্টের দিকে গোটা
দলকে নিয়ে। এরিয়ানের দিকে দুই গোলকিপার জয়ন্ত এবং অভ্রকে নিয়ে পড়লেন আমেরিকো।
• ৪-১৫। গোলকিপারদের ট্রেনিং। কোমরে ইলাস্টিক বেঁধে দিলেন দুই গোলকিপারের।
এক জন পিছনে দিকে টানতে লাগলেন সামনে আগুয়ান গোলকিপারকে। আর প্রথম জন
সেই বাধা কাটিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলেন। লক্ষ্য, মাঠের মাঝখানে রাখা বল।
বলের কাছে গিয়েই
ডাইভ দিয়ে বল তালুবন্দি করার অনুশীলন চলল পাক্কা এক ঘণ্টা।
• ৫-১০। অনুশীলন শেষ। |
|
মুখে সর্বদা আদুরে হাসি ঝুলিয়ে রাখা আমেরিকোকে দেখে ময়দানে মিথে পরিণত হওয়া লজেন্স দিদিও মোহিত। এ দিন আমেরিকোকে লজেন্স দিয়ে বলেই বসলেন, “হাসি মুখটা কিন্তু বাচ্চাদের মতো সারল্যে ভরা।”
আর আমেরিকো? ভাষার ব্যবধান থাকলেও বুঝে গিয়েছেন তিনিই এখন সমর্থকদের ‘লাফটার শো’। মাঠ ছাড়ার আগে তাই আনন্দবাজারকে বলে গেলেন, “ফ্যানরা তো দেখছি খুব খুশি! ওদের আরও খুশি রাখতে হবে।” আপনার ওজন কত? কলকাতায় আপনার নতুন নাম যে বাবাই হয়ে গিয়েছে তা জানেন? শুনেই মুখে সেই আদুরে হাসি। বললেন, “আপনি খুব চালাক। নো ট্রিকি কোয়েশ্চেন।”
লাল-হলুদ জনতার আদরের ‘বাবাই’ ডাকে আমেরিকোর গোঁসা হলে? জবাবটা দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার। বলছেন, “সমর্থকরা আমাদের সম্পদ। ওরা মজা করছে। আমেরিকোও মজাটা বোঝে। জানে এই ডাক আদরের। গোঁসা বা অপমানের কিছু নেই।”
|
চেহারা যখন বাধা নয় |
মার্ক ম্যাঞ্জিনো |
ওজন প্রায় ২০০ কিলো। তবু চেহারা কোনও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি এই ৫৬ বছর বয়সি আমেরিকান ফুটবল কোচের কাছে। কানসাস স্টেট টিম, ওকলাহোমা ইত্যাদি অনেক হেভিওয়েট টিমকে কোচিং করিয়েছেন। মার্কের হাত থেকে বেরিয়েছে তিরিশ জনেরও বেশি এনএফএলের প্লেয়ার। কোচ হিসাবে জিতেছেন মার্কিন মুলুকের বিভিন্ন পুরস্কারও। বর্তমানে ইয়ংস্টাউন স্টেটের সহকারী কোচ। |
|