সম্পাদকীয় ১...
বিষাক্ত রাজনীতি
কোনটি বেশি বিষাক্ত? বিহারের ছপরা জেলার গ্রামের স্কুলে ‘মিড-ডে মিল’-এ পাঁচ হইতে বারো বছর বয়স্ক শিশুদের পরিবেশন করা দুপুরের খাবার, না কি সেই খাবার খাইয়া মৃত ২৩টি শিশুকে লইয়া রাজ্যের রাজনীতি? যে শিশুগুলি ওই খাবার খাইয়া মারা গিয়াছে, তাহারা ছাড়াও আরও অন্তত ২৫টি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করিতে হইয়াছে। কিন্তু তাহাদের সুচিকিৎসা লইয়া রাজনীতিকরা আদৌ ভাবিত বলিয়া মনে হয় না। তাঁহারা কেবল খাদ্যে বিষক্রিয়ার দায় কাহার, তাহা লইয়া দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপ করিতে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে ঘটনার ‘প্রতিবাদ’ করিতে এবং প্রতিবাদের নামে এলাকায় বন্ধ পালন, পুলিশের সহিত সংঘর্ষ, দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং যথেচ্ছ লুঠতরাজে উস্কানি দিতে ব্যগ্র।
আসরে অবতীর্ণ অনেকেই লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, রামবিলাস পাসোয়ানের লোকজনশক্তি পার্টি, গত মাস অবধি সরকারে সংযুক্ত জনতা দলের জোটসঙ্গী এবং অধুনা জোটত্যাগী বিজেপি এবং অবশ্যই শাসক সংযুক্ত জনতা দলও। শেষোক্ত দলের নেতা এবং রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী শিশুখাদ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষ মিশাইবার অভিযোগ পর্যন্ত করিয়াছেন। অতঃপর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বাড়ি হইতে রাসায়নিক কীটনাশকরূপী বিষের কৌটা আবিষ্কার, তাঁহার স্বামীর মুদিখানা হইতে মিড-ডে মিলের রান্নার তৈজসপত্র সরবরাহের তথ্য উদ্ঘাটন এবং উভয়েরই ফেরার হওয়ার কাহিনি মুখে-মুখে ফিরিতেছে। এমন মুখরোচক কেলেংকারিকে নির্বাচনী প্রচারের কাজে ব্যবহার করিবে না, এমন আহাম্মক কোনও দল ভারতীয় রাজনীতিতে করিয়া খাইতে পারে না। তাই সকলেই আসরে অবতীর্ণ। বিশেষত ধীরে কিন্তু নিশ্চিত গতিতে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনের লগ্ন যখন ক্রমশ অগ্রসরমান। শিশুমৃত্যুর মর্মান্তিকতাকেও বহু গুণ ছাপাইয়া যায় তাহাদের লইয়া প্রাপ্তবয়স্কদের এই বিষাক্ত রাজনীতি, যাহার ছোবলে সমাজদেহের সর্বাঙ্গ নীল হইয়া যাইতেছে।
এই ন্যক্কারজনক প্রবণতা কিছু কাল আগেই রাজনীতিকরা প্রদর্শন করিয়াছেন উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুর্গতদের উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের প্রসঙ্গে। সেখানেও কে বেশি দুর্গতকে উদ্ধার করিয়াছে, কে-ই বা অকুস্থল এড়াইয়া বিদেশে কালযাপন করিয়াছে, তাহা লইয়া তরজা জমাইয়া তোলা হয়। সেই অ-শিক্ষিত কবিয়ালি এবং অপরের অকিঞ্চিৎকরতা ও নিজের গুরুত্ব জাহির করার মানসিকতা প্রতিযোগী রাজনীতিকদের ‘বিপর্যয়-পর্যটন’ ঘনাইয়া তোলে এবং ভি আই পি রাজনীতিকদের নিরাপত্তা ও সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করিতে গিয়া রাজ্য-প্রশাসনকে দুর্গতত্রাণের অগ্রাধিকারই বিসর্জন দিতে হয়। ছপরা জেলার মর্মান্তিক ঘটনা লইয়াও একই অমানবিকতা লক্ষ করা যাইতেছে। রাজনীতিকরা বিস্মৃত হইয়াছেন, কোনটি প্রতিবাদ ও আন্দোলনের সময়, আর কোনটি বিপর্যস্ত মানুষের গঠনমূলক ত্রাণের। অসুস্থ শিশুদের পরিবারবর্গকে সাহায্য করা বেশি প্রয়োজন, না কি পুলিশের জিপ-ভ্যান ভাঙচুর করিয়া তাহাতে আগুন লাগানো? দোকান লুঠপাট কিংবা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ কী ধরনের ‘প্রতিবাদ’, কেমন আন্দোলন? এই সব ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ জনরোষ কি দুষ্কৃতী ও সমাজবিরোধীদের অবাধ যথেচ্ছাচারের সুযোগ করিয়া দেয় না? লক্ষণীয়, ঘটনার পর দুই দিন কাটিয়া গেলেও কিন্তু অভিযুক্তরা কেহ গ্রেফতার হয় নাই, ‘ফেরার’ তালিকাতেই রহিয়া গিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ইস্তফার দাবিও বিজেপি নেতৃত্বের কণ্ঠে উত্তরোত্তর জোরালো হইতেছে, যেন মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করিলেই মৃত শিশুরা পুনর্জীবন লাভ করিবে! মৃত শিশুদের লইয়া প্রাপ্তবয়স্কদের এই আচরণে সন্দেহ হয়, কেমন করিয়া বিষ-জর্জর এই গ্রহ এক দিন শিশুদের বাসযোগ্য হইয়া উঠিবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.