ফের অস্ট্রেলিয়া বনাম সচিন তেন্ডুলকর।
আবার অজি স্লেজিং বনাম সচিন তেন্ডুলকর।
অথচ ভারত-অস্ট্রেলিয়া কোনও সিরিজ চলছে না!
আসলে প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিং-এর তোপের সামনে সচিন তেন্ডুলকর। যাঁরা কিনা মাস দুই আগেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-কে।
চিরকালীন একটা তুলনামূলক বিতর্ক নতুন করে উস্কে দিয়ে সচিনকে খোঁচা মারলেন পন্টিং। কে সেরা ব্যাটসম্যান সচিন তেন্ডুলকর, না ব্রায়ান লারা এই বিতর্ক ফের তুলে পন্টিং এগিয়ে রাখলেন লারাকে। জানিয়ে দিলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন থাকাকালীন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি কিংবদন্তিই তাঁকে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছেন। ভারতীয় মহাতারকা নন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৪ হাজারেরও বেশি রান ও একশো সেঞ্চুরির মালিক সচিন তেন্ডুলকরের কৃতিত্ব ক্রিকেট বিশ্ব স্বীকার করে নিলেও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মহল থেকে বহুবার ভারতীয় কিংবদন্তির কীর্তি নিয়ে পরোক্ষে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এমনকী গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সরকার যখন সচিনকে তাদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখনও সে দেশের ক্রিকেট মহল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ম্যাথু হেডেন মন্তব্য করেছিলেন, “কেন বাইরের কোনও লোককে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সরকারি সম্মান দেওয়া হবে?” তবু সেই সম্মান পাওয়ার পর সচিন তাঁর স্বভাবোচিত ভঙ্গিতে বলেছিলেন, “অস্ট্রেলিয়ানরাই আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে আরও কঠিন করে তুলেছে। ভারতের বাইরে এই দেশটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটীয় দেশ এবং এসসিজি আমার প্রিয় ক্রিকেট মাঠ।” |
রাজায় রাজায় |
|
|
সেঞ্চুরিতে দলের জয়
টেস্টে সচিন ২০ বার লারা ৮ বার
ওয়ান ডে সচিন ৩৩ বার লারা ১৬ বার |
টেস্ট জয়ী দলে
সচিন ৭০ বার লারা ৩২ বার |
ওয়ান ডে জয়ী দলে
সচিন ২৩৪ বার লারা ১৩৯ বার |
বিপক্ষে যখন পন্টিং |
টেস্ট
সচিন ২৯ ম্যাচ ৩০৬০ রান
৬১.২০ গড়
লারা ১৬ ম্যাচ ১৪৫৩ রান ৪৬.৮৭ গড়
|
ওয়ান ডে
সচিন ৫৫ ম্যাচ ২৫১৫ রান ৪৭.৪৫ গড়
লারা ৩২ ম্যাচ ১০৫২ রান ৩৫.০৭ গড় |
অধিনায়ক পন্টিংয়ের বিরুদ্ধে
সচিন ১১ টেস্টে ৬ জয় ২ হার ৩ ড্র
লারা ৪ টেস্ট ০ জয় ৪ হার |
|
এ বার সচিনের দিকে আর এক দফা তোপ দেগে বসলেন রিকি পন্টিং। এক ব্রিটিশ সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন, “প্রচুর সেঞ্চুরি করাটাই তো বড় কথা নয়। আমার কাছে ম্যাচ জেতানোটাই বড় কথা। সে দিক থেকে লারাকে আমি সচিনের চেয়ে এগিয়ে রাখব। দু’জনেই অসাধারণ ব্যাটসম্যান। কিন্তু লারা দলকে যত সাফল্য এনে দিয়েছে, সচিন বোধহয় তত সাফল্য এনে দিতে পারেনি।” পরিসংখ্যান যদিও উল্টো কথা বলছে, তবে সচিন সম্পর্কে পন্টিংয়ের এই ধারণা হওয়ার কারণটা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। বলেছেন, “যখন অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন ছিলাম, তখন লারা পরের দিন ব্যাট করতে নামলে তার আগে আমি বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি। সচিনের জন্য তেমন হত না। ওকে থামানোর রাস্তা খুঁজে বের করা যেত। কিন্তু লারা আধ ঘণ্টার মধ্যে সব কিছু পাল্টে ফেলে আপনার হাত থেকে ম্যাচ বের করে আনতে পারত।”
পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, সচিন যত ওয়ান ডে খেলেছেন, তার ৫০ শতাংশ ম্যাচেই ভারত জিতেছে। সেখানে লারার উপস্থিতিতে ৪৬ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্টেও এই ব্যাপারে এগিয়ে সচিন। যেখানে তাঁর খেলা ৩৫ শতাংশ টেস্টেই ভারত জিতেছে, সেখানে লারার মাত্র ২৪ শতাংশ ম্যাচে জিতেছে তাঁর দল। টেস্টে সচিনের ৩৯ শতাংশ সেঞ্চুরিতে যেমন জিতেছে ভারত, তেমন লারার সাড়ে ২৩ শতাংশ টেস্ট সেঞ্চুরির ক্ষেত্রে টেস্ট জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুধু ওয়ান ডে-তে এই ব্যাপারে লারা সচিনকে পিছিয়ে রেখেছেন।
বুধবার পন্টিংয়ের এই মন্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পরই সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা, বিশেষ করে সচিনভক্তরা রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সারা দিন ধরে পোস্ট হয় পন্টিংবিরোধী মন্তব্য “মিস্টার পন্টিং, পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখুন। অযথাই বহু রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন!” ...“পন্টিং একজন অস্ট্রেলিয়ান বলেই ওকে ক্ষমা করা উচিত।” ...“সচিন যদি চাপের মুখে ভাল ব্যাট করতে না-ই পারেন, তা হলে ১৯৯৩, ২০০৩ আর ২০১১-র বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচে তিনি ম্যাচের সেরা হলেন কী করে? জবাব দিন পন্টিং।” সচিনভক্তদের কেউ কেউ আবার পন্টিংকে ‘পাগল’, ‘মাতাল’ বলতেও দ্বিধা করেননি!
|
পন্টিং আগে যা বলেছিলেন... |
২০০৪: ম্যাথু হেডেনের ৩৮০ রানের রেকর্ড লারা (৪০০ ন.আ.) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভাঙার পর
“লারার ইনিংস নিয়ে খুব হইচই হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার কোনও প্লেয়ার এ রকম (স্বার্থপরের মতো) খেলছে
ভাবাই যায় না। লারার এই ইনিংসের জন্য টেস্টটা ওদের হাত থেকে বেরিয়েও যেতে পারত।”
২০১২: অবসর নেওয়ার আগে শেষ টেস্টের সাংবাদিক বৈঠকে
“সচিনই আমার দেখা সেরা ক্রিকেটার। শুধুমাত্র ক্যাপ্টেনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটা বলছি না।
দু’দেশের পরিবেশেই আমাদের বিরুদ্ধে সচিনের বিশাল সাফল্য দেখার পরই এ রকম মনে হয়েছে।” |
|