কুবের উবাচ
পীযূষ কান্তি দাস (৫১) • স্ত্রী মিঠু (৪৫) • মেয়ে (২০)
• ছেলে (১২) • বাবা (৮৭) • মা (৭১)
কর্তা বেসরকারি সংস্থার কর্মী • তিন মাস বেতন বন্ধ • নিজের গ্র্যাচুইটি, পেনশন নেই • সংসার চালাতে অথৈ জলে
• আর্থিক সুরক্ষা নিয়েও উদ্বিগ্ন • স্ত্রী দু’টি বেসরকারি সংস্থার এজেন্ট • মেয়ে স্নাতক স্তরে, ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে
• নিজের বাড়ি• পৈতৃক বাড়ির অংশীদারি আছে • ইচ্ছে ছোট ব্যবসা শুরুর

মাসে নিট আয়
পীযূষ শূন্য (ছিল ৪০,০০০)
মিঠু ৩,০০০
বাড়ি ভাড়া ৮,০০০
সুদ ১৪,০০০
বাবা-মায়ের পেনশন ১২,০০০
টাকা রাখেন (মাসে)
• পিপিএফ ৬,৬৬৬
• এসবিআই গোল্ড ২,০০০
• অ্যাক্সিস গোল্ড ৩,০০০
• রেকারিং ১৭,৬০০
• জীবনবিমা ৬,৫২৮
সম্পদ
• শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ৩০,০০০
• স্থায়ী আমানত
(ডাকঘর ও ব্যাঙ্ক)
১৮,০০,০০০
• বেসরকারি
অর্থলগ্নি সংস্থায় আমানত
৮১,০০০
• এনএসসি/ কেভিপি ২,৫০,০০০
খরচ (মাসে)
• সংসার চালাতে ২৮,০০০
• স্বাস্থ্য বিমা ১,৪৭৮


বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
জীবনে যে সব রকমের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হয়, তারই প্রমাণ পীযূষের প্রোফাইলটি। সঞ্চয়ের কথা তো পরে ভাবা যাবে, আপাতত সংসার চালানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ তাঁর কাছে।

আয়ের থেকে ব্যয় বেশি
অনেক সময়েই আমরা দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। সংসার চালানো, সামাজিকতা রক্ষা, চিকিৎসা ও পড়াশোনার মতো বিষয়গুলি চালাতে কখন যে খরচের হাতটা বেড়ে যায়, খেয়ালই থাকে না। যখন হয়, দেখা যায় অথৈ জলে পড়েছি। পীযূষেরও এখন সেই অবস্থা।
নতুন চাকরি খোঁজার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। তবে কবে পাবেন ঠিক নেই। নিয়মিত বেতন পাওয়ার সময়ে যে-খরচ পীযূষের আয়ত্তের মধ্যে ছিল, তা নিয়ে কখনও চিন্তিত হননি তিনি। বরং হাতে থাকা বাড়তি টাকা নিয়মিত লগ্নি করেছেন। কিন্তু গত তিন মাস যখন বেতন বন্ধ, তখন সেই খরচই ঘাড়ে চেপে বসেছে। অথচ চালাতে হচ্ছে লগ্নিও। তৈরি হয়েছে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বিশাল ফারাক।
এত দিন খুব প্রয়োজন না-হলে তিনি বাবা-মায়ের পেনশনের টাকা সংসারে ব্যবহার করেননি। এখন তাঁকে সেই টাকা নিতেই হবে। তা সত্ত্বেও মাসে আয়ের তুলনায় তাঁর ১০ হাজার টাকার বেশি অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
তাই প্রথমেই পীযূষকে বলব, খরচ যতটা সম্ভব কমান। একটা খাতায় প্রতি দিনের জমা ও খরচের হিসাবগুলি লিখে রাখুন। দেখে নিন কোনটা বাড়তি খরচ। সেগুলি বন্ধ করুন প্রথমেই। তবে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, চিকিৎসা, বিমা ইত্যাদি খরচ কিন্তু অবশ্যই চালাতে হবে।

জীবনবিমা
পীযূষের জীবন বিমার তালিকা সত্যিই মাথা খারাপ করে দেওয়ার মতো। এ ভাবে লগ্নি করার কারণ খুঁজতে গিয়ে দু’টি প্রশ্ন আমার মাথায় এসেছে
• পীযূষ কি আয়কর বাঁচাতে এ ভাবে লগ্নি করেছেন?
• না কি, উনি ভবিষ্যৎ জীবন সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে সম্পদ বাড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
পীযূষ বেশির ভাগই ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে লগ্নি করেছেন। কয়েকটির প্রিমিয়াম দেওয়া ইতিমধ্যেই শেষ। কিন্তু বাকি প্রকল্পগুলির জন্য এখনও প্রতি বছর তাঁকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা প্রিমিয়াম গুনতে হয়। সব ক’টি প্রকল্প মিলিয়ে মোট প্রিমিয়ামের অঙ্ক ১৩ লক্ষ টাকার বেশি। বিমা মূল্য ২০ লক্ষ টাকা। আর মেয়াদ শেষে প্রাপ্য টাকার পরিমাণ ২৪ লক্ষের কম।
অর্থাৎ এত বছর টাকা রেখেও তাঁর কোনও লাভ হচ্ছে না। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াইয়ের হাতিয়ার তো তিনি পাচ্ছেনই না। এমনকী সঞ্চয় প্রকল্প হিসেবেও এগুলি ব্যর্থ। তাই আমার মতে, এখনই পীযূষ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে কোন প্রকল্প চালাবেন ও কোনটি বন্ধ করবেন, তা ঠিক করুন। দেখে নেবেন
• মেয়াদ শেষে প্রাপ্য টাকা কোন প্রকল্পে বেশি।
• কত দিন ধরে প্রকল্প চালিয়েছেন।
• কোন প্রকল্প থেকে নিয়মিত আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
মানি ব্যাক ও অন্যান্য পলিসি থেকে নিয়মিত যে-টাকা পাবেন, তা ছেলেমেয়ের পড়াশোনা ও মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত করে রাখুন। কিছু প্রকল্প বন্ধ করলে অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল হবে।

অন্যান্য লগ্নি
• এসবিআই গোল্ড ও অ্যাক্সিস গোল্ড প্রকল্পে মাসে ৫,০০০ টাকা খরচ হয়। আপাতত সেই লগ্নি বন্ধ রাখুন। তবে এত দিন পর্যন্ত যে-টাকা লগ্নি করে ফেলেছেন, তা তুলবেন না।
• হাত দেবেন না শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ডে জমে থাকা সম্পদেও।
• আপাতত টাকার জোগান বজায় রাখতে পীযূষ স্থায়ী আমানত ও ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল। তাই এগুলি চালিয়ে যান।
• রেকারিং ডিপোজিটের টাকা জোগানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। সেই টাকা তুলে নিয়ে স্থায়ী আমানত করতে পারেন। পরে তা ফের শুরু করা যেতে পারে।
• এনএসসি ও কিসান বিকাশ পত্র থেকে পাওয়া টাকা ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে রাখুন। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বা অবসরের লগ্নি হিসেবে তা ব্যবহার করতে পারেন।
• বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় রাখা টাকা সরিয়ে ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত করুন।
• আপাতত পিপিএফে লগ্নি অর্ধেক করুন। বছরে ৪০ হাজার টাকা রাখুন।
• কোনও জীবন বিমা প্রকল্প বন্ধ করলে যে -টাকা বাঁচবে, তা দীর্ঘ মেয়াদি সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে (এসআইপি) লগ্নি করুন।

স্থাবর সম্পত্তি
• বাড়ি ভাড়া থেকে আয় বাড়ানো যাবে কি না, তা ভেবে দেখুন।
• পৈতৃক সম্পত্তি থেকে কোনও টাকা হাতে আসতে পারে কি না, সেটাও আলোচনা করে দেখতে পারেন।

ব্যবসা
পীযূষের যা অবস্থা, তাতে এখন ব্যবসা করার কথা না-ভাবাই ভাল। মূলধন নেই তো। ক’বছর পরে টাকা জোগাড় করা গেলে ভেবে দেখতে পারেন।
সামান্য কিছু পরিবর্তন করে পীযূষ আপাতত সংসার চালাতে পারবেন। তবে চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সে জন্য শুভেচ্ছা রইল।

বিমার পরামর্শ***
প্রকল্প মোট প্রিমিয়াম মেয়াদ (বছরে) বিমা মূল্য সম্ভাব্য প্রাপ্য
মোট ১৩,৫২,৯৩১   ২০,০৩,২১৫ ২৩.৭৬ লক্ষ

* তিন বছর ৫০,০০০ করে প্রিমিয়াম।
** ২০১২-’২২ পর্যন্ত কিস্তিতে টাকা পাওয়া যাবে। ২০১২ সালে ইতিমধ্যেই ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন।
*** ২০২২-’৩০ পর্যন্ত কিস্তিতে টাকা পাওয়া যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.