তাঁদের এলাকা বৃষ্টিপাত নির্ভর। তাই এলাকার উপর দিয়ে যাওয়া ভুটকা কাঁদরের (ছোট নদী) জল ধরে রাখতে পারলে রামপুরহাট থানার মাসড়া পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা উপকৃত হবেন। এই উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার আগে এলাকার দুই চাষি ব্রজ মুর্মু ও দুর্গা মুর্মু অন্য চাষিদের সংগঠিত করে কাঁদরের উপরে সেচবাঁধ তৈরির জন্য আন্দোলন করেন। বাঁধও তৈরি করেন তাঁরা। পরবর্তীতে ওই দুই চাষির স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৯১ সালে বাঁধটি সংস্কার করে ব্রজ-দুর্গা নাম দেওয়া হয়। ৪০ ফুট উঁচুতে জল ধরে রাখার জন্য ১৯৯৫-৯৬ সালে একটি রিজার্ভার তৈরি করা হয়। পরে বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রও বসানো হয়। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আগে যন্ত্রটি চুরি হয়ে যায় এবং আজও বাঁধ সংস্কার করে নতুন যন্ত্র বসানো হয়নি। স্বাভাবিক ভাবে বৃষ্টি নির্ভর মাসড়া অঞ্চল সেচের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
মাসড়া পঞ্চায়েতের ৩৩টি গ্রামের মধ্যে ৩১টি গ্রাম আদিবাসী অধ্যুষিত। সেই আদিবাসীরা আজও বৃষ্টির উপর নির্ভর করে চাষ করে আসছেন। এলাকার বাসিন্দা দেবীলাল মাড্ডি বলেন, “২০০৮-২০১৩ সাল পর্যন্ত এলাকায় পঞ্চায়েতের নির্দল সদস্য হিসেবে একাধিকবার পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।” এ বারও দেবীলালবাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, “সেচের সুবিধা পৌঁছে দিতে লড়াই জারি রেখেছি। ২০১০ সালে এলাকার নিরিষা মৌজায় আলুপাহাড়ি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপের জন্য পঞ্চায়েতের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হলেও তার সদুত্তর মেলেনি।” একই ভাবে বামনি মৌজায় তুলসীপাড়া এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর জন্য আবেদন জানিয়েও সদুত্তর মেলেনি বলে জানিয়েছেন দেবীলালবাবু। আলুপাহাড়ি এলাকার চাষি হরেন মাড্ডি, চাঁদেরজোল এলাকার বালিচাঁদ রায় বলেন, “মাসড়া এলাকায় ওই দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১৪০ বিঘা জমিতে সেচের সুবিধা পাওয়া যেত।”
অন্য দিকে, ঠাকুরপুরা গ্রামের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন উপপ্রধান ডাক্তার মির্ধার দাবি, “ব্রজ-দুর্গা বাঁধের সংস্কার করলে এলাকার প্রায় ১৫০ বিঘা জমি সেচের সুবিধা পাবে।” মাসড়ার বাসিন্দা, জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি সৈয়দ মৈনুদ্দিন হোসেন জানান, পাশ দিয়ে ময়ূরাক্ষ্মী উত্তর ক্যানালের সেচ নালা চলে গিয়েছে। অথচ মাসড়া অঞ্চলের ৯০ শতাংশ চাষি সেচের সুবিধা পাচ্ছেন না। যে বছর বৃষ্টি ভাল হয়, সে বছর ধান চাষ করতে পারেন চাষিরা। ১০ শতাংশ রবি চাষ করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন প্রধান তথা তৃণমূল নেতা রেজাউল করিম বলেন, “পঞ্চায়েত প্রধান থাকাকালীন সেচের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। আশা করি আগামী দিনে জেলা পরিষদের মাধ্যমে এলাকার মানুষ সেচের সুবিধা পারেন।” এলাকার প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য, সিপিএমের অনুপকুমার সাহাও বলেন, “মাসড়া এলাকায় সেচের উন্নতির জন্য ব্রজ-দুর্গা বাঁধ নতুন করে সংস্কার প্রয়োজন।” এই অবস্থার জন্য জেলা পরিষদকে দায়ী করেছেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যুতের জন্য সেচমন্ত্রী ও বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আশিসবাবু।
সেচ দফতরের রামপুরহাট বিভাগীয় (ময়ূরাক্ষ্মী উত্তর ক্যানাল) নির্বাহী বাস্তুকার তরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “ব্রজ-দুর্গা বাঁধ সেচ দফতরের আওতার মধ্যে পড়ে না। মাসড়া এলাকায় যে ক্যানাল গিয়েছে, তাতে নতুন নতুন এলাকায় সেচ পৌঁছে দিতে গেলে যে পরিকল্পনা দরকার, তা এখনও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।” |