বেতন ৩৫ টাকা, নেই অবসরও
স্কুলে রাত পাহারা দেওয়ার কাজ দিয়ে শুরু করেছিলেন চাকরি। ছিল স্কুলের বাগান দেখাশোনার ভারও। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় মাইনে পেতেন ৩৫ টাকা। কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের কর্মী ভদ্রেশ্বর পাল ৭৭ বছর বয়সেও রাত পাহারা দেওয়া এবং বাগান দেখার কাজ করে চলেছেন। অথচ প্রায় ৪৭ বছর চাকরি করার পরেও মাইনে সেই ৩৫ টাকাই। বয়স উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও অবসরেক নির্দেশেও আসেনি তাঁর।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগের বক্তব্য, “এই মুহূর্তে এর কোনও ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। কেন ওই ব্যক্তির বেতন বাড়েনি বা কেন তাঁকে অবসরের কথা বলা হয়নি, জানা নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানালে খোঁজ নিয়ে দেখব।” জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক সুকুমার রায় বলেন, “শুনেছিলাম আগে এ রকম নিয়োগ হত। পরবর্তী কালে তা তুলে দেওয়া হয়।”
৪৭ বছর আগের সেই নিয়োগপত্র।
কালনা শহর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে এই স্কুলটি গড়া হয় ১৯৫২ সালে। এখন সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় ইসবপুর গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রেশ্বরবাবু ১৯৬৬ সালে স্কুলে বাগান তৈরি এবং রাত পাহারার চাকরি পান। সরকারি এই নিয়োগপত্রে ১৯৬৬ সালের ৫ অগস্ট স্বাক্ষর করেন তৎকালীন জেলা স্কুল বোর্ডের সম্পাদক। ওই নিয়োগপত্রের মেমো নম্বর ৩৪৭০/বি/এম৫৪। অগস্টের ২৪ তারিখে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছিল ভদ্রেশ্বরবাবুকে।
নিয়োগপত্রে জানানো হয়েছিল, ভদ্রেশ্বরবাবুর ৩৫ টাকা বেতন পাবেন। নির্দিষ্ট দিনে কাজে যোগ দেন তিনি। এর পরে স্কুলবাড়ি পাকা হয়। বাড়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও। অথচ ভদ্রেশ্বরবাবুর মাইনে বাড়েনি। অবসর নেওয়ার বয়স পেরিয়ে গেলেও তা নেননি তিনি। মাসের নির্দিষ্ট দিনে অন্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গেই বেতন পান তিনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “অন্য শিক্ষকদের মতোই ওঁর এটিএম কার্ড, পাস বই, চেক বই রয়েছে। এ সবই স্কুলে রাখা থাকে। তবে এটিএম কার্ড চালু করা হয়নি। কারণ, বেতন তো পান ৩৫ টাকা। তার উপরে এটিএম ব্যবহারের জন্য যে টাকা কাটা হয় তা দিতে গেলে আর কী থাকবে। তাই মাস পেরোলে চেক বইয়ে সই করে দেন। আমরা বেতন তুলে এনে দিই।” ভদ্রেশ্বরবাবুর জন্য বারবার বেতন বাড়ানোর আবেদন করা হলেও লাভ হয়নি, দাবি প্রধান শিক্ষকের।
বরাদ্দ কাজ ছাড়াও মাঝে-মধ্যে মিড-ডে মিল রান্নায় হাত লাগান ভদ্রেশ্বরবাবু। স্কুলের দরজার সামনে বসে নজর রাখেন পড়ুয়াদের উপরে। পড়ুয়ারা তাঁকে ডাকে ‘মালি দাদু’ বলে। স্কুল পড়ুয়া পল্লবী পাল, মিঠু হাজরা, সুমন পালদের কথায়, “মালি দাদু সবাইকে ভীষণ ভালবাসে। স্কুল ছেড়ে কখনও কোথাও যায় না।”
স্কুল চত্বরে বসে ভদ্রেশ্বরবাবুর।
দিনে খাওয়ার বন্দোবস্ত হয় পঞ্চায়েতের সহায়ক প্রকল্পে। রাতের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে। স্কুলের ভিতরে একটি ঘরেই থাকেন ভদ্রেশ্বরবাবু। অনটনের জন্যই পাচা হয়নি সংসার, দাবি তাঁর। জানালেন, দুর্দশার কথা জানিয়ে শিক্ষা দফতরে বারবার চিঠি পাঠিয়েছিলেন। শেষ চিঠি পাঠান ২০০৭ সালে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে। তাতে লিখেছিলেন, ‘সারা জীবন নিষ্ঠা সহকারে কাজ করে গেলাম। অথচ বেতন বাড়ল না এক পয়সাও। শেষ জীবনে আর যাতে কষ্ট না পাই দয়া করে দেখুন।’ কোনও উত্তর মেলেনি। ভদ্রেশ্বরবাবুর কথায়, “এই স্কুলেই কেটে গিয়েছে এতগুলো বছর। সারা জীবন আশায় রইলাম। বেতন আর বাড়ল না। জীবনের আর ক’টা দিন হয়তো এ ভাবেই কেটে যাবে।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.