শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ভোট ঘোষণা হতেই মাঠে নেমে পড়েছে পুলিশ-প্রশাসন।
তাই পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর থেকে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া এলাকায় পুলিশের ওসি অরূপ রায় নিজেই নানা জায়গায় গিয়ে সভা করছেন। সেই সভাতেই কথা প্রসঙ্গে অনেক সমস্যার সমাধানও হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ নিয়মিত গ্রামে আসায়, সরাসরি পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন সব পক্ষই। এলাকার বাসিন্দা পেশায় গৃহশিক্ষক আলম হুসেন বলেন, “গ্রামে অনেক সময়ে তুচ্ছ ঘটনা থেকে বড় বিবাদ তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু কেউই আগ বাড়িয়ে পুলিশকে প্রথমে কিছু বলতে চান না। এ বার পুলিশ নিজেই এগিয়ে আসায় অনেকেই মন খুলে কথা বলায় অনেক সমস্যা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
হরিহরপাড়া থানার ধরমপুর ও রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাথারঘাটা, খামারমাটি, শঙ্করপুর, রামকৃষ্ণপুর, সলুয়া, সদানন্দপুরের মতো এলাকাগুলিতে এক সময় সমাজবিরোধীদের আধিপত্য ছিল। তার প্রভাব পড়ত নির্বাচনেও। পুলিশ নির্বাচনের আগে ধরপাকড় আর অস্ত্র উদ্ধারে জোর দেয়। কিন্তু তাতেই এলাকা সব সময় শান্ত হয় না। সে কারণেই গ্রামের লোকজনকে হিংসার ভয়াবহতা সম্পর্কে বোঝানোর উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন বলে জানান অরূপবাবু। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিত্ চক্রবর্তী বলেন, “ওই এলাকায় আগে বহু বার হিংসার অভিযোগ উঠেছে। একদম নির্বাচনের মুখে এক জন পুলিশকর্মী যে সরাসরি সেই এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, তা খুবই ভাল দিক। এর ফলে এলাকার মানুষ অনেক আশ্বস্ত হচ্ছেন।” |
গত সাত দিন ধরে এলাকার মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে খান কুড়ি সভা হয়ে গিয়েছে। ওসি-র ডাকা সভাগুলিতে ভিড়ও হচ্ছে যথেষ্ট। মঙ্গলবার সভা হয়েছে স্বরূপপুর মোড় ও নশিপুরে। দু’জায়গাতেই হাজার খানেক লোকের ভিড় হয়েছে।
সারা দিনের ক্লান্তি সেরে গ্রামের প্রান্তিক লোকজন বিকেলে তুমুল উত্সাহ নিয়ে নশিপুরের স্কুল মাঠে ভিড় করেছেন অরূপহবাবু ডাকা সভায়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ওই সভাগুলিতে হাজির থাকছেন বিভিন্ন দলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীরাও। সিপিএম প্রার্থী জমির উদ্দিন, কংগ্রেসের চাঁদসিতারা বিবি ও তৃণমূলের সরিফ শেখদের দেখা গিয়েছে এই বৈঠকের মনোযোগী শ্রোতা হিসেবে।
তার মধ্যেই ঘণ্টা খানেকের বক্তৃতা শেষে সাঁঝবেলায় গ্রামের মেঠো পথে ধুলো উড়িয়ে ওসির গাড়ি ছুটল স্বরূপগঞ্জে। পরবর্তী সভা সেখানেই। এলাকার একটা ছোট বাজারের উপর সভা। আগেভাগে হাজির প্রায় ৬০০ লোক। আমজনতার সঙ্গে ওই বৈঠকে হাজির কংগ্রেসের যুবনেতা উত্পল কুন্ডু, পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান এসইউসি-র গোলাম মুস্তাফা, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা মমিন শেখ ও সিপিএম নেতা দাউদ শেখ। সকলের সামনেই অরূপবাবু বলছেন, “কোনও চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ভোট দেবেন না। কোনও রাজনৈতিক চাপে হিংসায় জড়িয়ে পড়বেন না। কেউ ভয় দেখালে আমাকে জানাবেন বিনা দ্বিধায়।” এ কথা বলেই ওসি বলে দিলেন তার মোবাইল নম্বর। তারপর ওই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা আর একজন পুলিশ অফিসারের মোবাইল ফোনেরও নম্বর দিলেন তিনি।
ওসি-র এই ভূমিকায় এলাকার মূল তিন রাজনৈতিক শক্তিই সন্তুষ্ট। কংগ্রেসের হরিহরপাড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মির আলমগীর বলেন, “গত দু’টি নির্বাচনে ধরমপুর ও রায়পুরে হিংসার বলি হন ৮ জন। এ বার পুলিশের ভূমিকায় এলাকা শান্ত।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জয়নাল আবেদিনের বক্তব্য, “মানুষ পুলিশের ভূমিকায় খুশি। তাঁরা শপথ নিয়েছেন, আর সংঘর্ষ নয়।” হরিহরপাড়ার বিধায়ক সিপিএমের ইনসার আলি বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “পুলিশের ভূমিকায় আমরা খুশি। তবে পুলিশ পুরোপুরি নিরপেক্ষ হলে আগামীতে হিংসা এলাকাকে স্পর্শ করতে পারবে না।”
আপাতত রায়পুর, ধরমপুরের মানুষ শান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। এলাকায় বাতাস থেকে অশান্তি উবে গেছে। নেই বোমা-গুলির কান ফাটানো আওয়াজ। |