নেহাতই প্রহসন!
মাটির বাড়ির এক চিলতে দাওয়ায় বসে বলছিলেন অশীতিপর প্রমীলা দাস। বাড়িতে বিদ্যুতের তার এসেছে অনেক দিন হয়ে গেল। আলো এখনও জ্বলেনি। “প্রহসন ছাড়া আর কী?”, ক্ষোভ কাটোয়ার গাঁফুলিয়া গ্রামের প্রমীলাদেবীর।
শুধু প্রমীলাদেবীর বাড়ি নয়, গাঁফুলিয়া গ্রামের দাসপাড়ায় বিপিএল তালিকাভুক্ত ৯৮টি পরিবারে একই পরিস্থিতি। আর তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা ভোট চাইতে গেলেই ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রায় আড়াই বছর আগে রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ যোজনার মাধ্যমে থেকে ওই পাড়ায় বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা, তার লাগানো হয়। এর বেশ কয়েক সপ্তাহ পরে ওই এলাকায় ২৫ কেভি-র ট্রান্সফর্মার বসানো হয়। বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলির বাড়িতে তারের সংযোগ ও মিটার বসানোর কাজও সারা হয়। গ্রামের বাসিন্দা হারাধন দাস, বাবু দাসেরা বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সরকার পরিবর্তন হল, এ বার হয়তো আমরা আলোয় আসব। কিন্তু কোথায় কী? আমাদের কোনও পরিবর্তন হল না!” |
গ্রামের সেচখালের পাশে বাড়ি প্রমীলাদেবী। দু’বছর আগে বসা ট্রান্সফর্মারটি রয়েছে তাঁর বাড়ির সামনেই। সে দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ দেব বলেই বাবুরা ভোট নিয়ে চলে যান। গত বার (বিধানসভা) ভোটের আগে তার পড়েছিল। ভোটের পরে ওই যন্ত্রটা (ট্রান্সফর্মার) বসল। তবু আলো এল না। আবার একটা ভোট এসে গেল।” তাঁর ক্ষোভ, “আমাদের মতো গরিব মানুষদের নিয়ে প্রহসন করছেন বাবুরা।”
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাটোয়ার সহকারী বাস্তুকারের কাছে চিঠি দিয়ে গ্রামবাসীরা বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন। তা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ আসেনি কেন? রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের আরই প্রজেক্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ৮ নভেম্বর প্রজেক্ট ম্যানেজার চিঠি দিয়ে কাটোয়া গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইকে হস্তান্তর করে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ারও জন্য অনুরোধ জানায়। এই চিঠি পাওয়ার পরেও কেন বিদ্যুৎ দেওয়া গেল না, সে প্রশ্নে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাটোয়া শাখার সহকারী বাস্তুকার লাল্টু মণ্ডল বলেন, “চিঠি দিলেই তো আর হস্তান্তর হয় না। আমরা বিদ্যুতের খুঁটি, তার, ট্রান্সফর্মার কী অবস্থায় আছে তা পরিদর্শন করব বলে চিঠি দিয়েছিল। পরিদর্শন যত তাড়াতাড়ি হবে, বিদ্যুৎ সংযোগও তত তাড়াতাড়ি যাবে।”
ওই এলাকার কংগ্রেস নেতা চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পরিবারগুলি যাতে বিদ্যুৎ সংযোগ পান, তার জন্য বারবার বিদ্যুৎ দফতরে গিয়েছি। দফতরের চিঠি চালাচালিতেই দু’বছর পেরিয়ে গেল।” সিপিএম নেতা সুকুমার মণ্ডলও মনে করেন, “বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিতেই ওই পরিবারগুলি সংযোগ পাচ্ছেন না।”
দোষারোপের খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীর অন্ধকার কবে কাটবে, সে উত্তর অবশ্য কারও কাছে নেই। |