|
|
|
|
বৌদি সিপিএম প্রার্থী হওয়ায় কাজ বন্ধ হল বাসকর্মীর |
সুশান্ত বণিক • আসানসোল |
সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন বৌদি। তাই কাজ বন্ধ দেওরের।
আসানসোলে বাসের খালাসি ধীরেন ঘোষকে কাজে আসতে বারণ করে দিয়েছেন আইএনটিটিইউসি নেতা। ধীরেনবাবুর ‘অপরাধ’, তিনি বৌদিকে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত করতে পারেননি। তাই তিন সপ্তাহ ধরে ধীরেনবাবুর সংসারে হাঁড়ি না চড়ার পরিস্থিতি। করুণ দশা দেখে অন্য একটি বাসে তাঁর কাজের ব্যবস্থা করেছিল আইএনটিইউসি। অভিযোগ, সেখান থেকেও জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
বারাবনির চিঁচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ধীরেনবাবু বেশ কয়েক বছর ধরে আসানসোল-দোমহানি একটি মিনিবাসে খালাসির কাজ করছেন। তিনি নিজে আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সদস্য। এ বার তাঁর বৌদি মঙ্গলা ঘোষ চিঁচুড়িয়া পঞ্চায়েতে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন। ধীরেনবাবু অভিযোগ করেন, গত ১৮ জুন কাজে গেলে ওই ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে হাজির হন। ধীরেনবাবুর কথায়, “বাস থেকে নামিয়ে রাজুদা বললেন, ‘তোর বৌদি সিপিএমের হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুই যা সিপিএম কর। কাজ করতে হবে না।’ হাতে-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি।” |
রাজু অহলুওয়ালিয়া |
ধীরেন ঘোষ |
মঙ্গলা ঘোষ |
|
কাজ হারিয়ে স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন ধীরেনবাবু। তাঁর স্ত্রী কবিতাদেবী বলেন, “দু’বেলা খাবার জোটাতে নাকাল হচ্ছি। কোলের শিশু দুধটুকুও পাচ্ছে না।” ধীরেনবাবুর বৌদি মঙ্গলাদেবীর প্রশ্ন, “আমরা এক পরিবারে থাকি না। তবু দেওরের সঙ্গে এই অন্যায় আচরণ কেন করা হবে?”
আইএনটিটিইউসি নেতা রাজুবাবু অবশ্য এর মধ্যে ‘অন্যায়’ দেখছেন না। তাঁর সাফ কথা, “আমাদের সংগঠনের সদস্য হয়েও বৌদিকে সিপিএম করা থেকে বিরত করতে পারেননি ওই কর্মী। একই পরিবারের দু’জন ভিন্ন রাজনীতিতে থেকে সুবিধা নিতে পারবে না। ওঁকে আগেই বলেছিলাম, তুমি বাড়ির লোকের মত বদলাও। না হলে নিজে সিপিএমে যাও। তার আগে কাজে যোগ দিতে দেব না।” এর পরেই তাঁর দাবি, “আমরা তো ওঁকে কর্মহীন করিনি। বলেছি, সুবিধাবাদ ছেড়ে যে কোনও একটি মত ধরে রাখুন।”
ধীরেনবাবু জানান, শেষে যে বাসের খালাসি ছিলেন তার মালিক বাদল চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন তিনি। বাদলবাবু বলেন, “আমি মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তাকে রাজুবাবুর সঙ্গে কথা বলে ধীরেনকে কাজে ফেরাতে বলেছি। কিন্তু ওঁরা না চাইলে আমার কিছু করার নেই।” মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, এ সব তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। আসানসোলে আইএনটিইউসি-র পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতা সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা ধীরেনের কাজের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু সেখান থেকেও তাড়িয়েছে তৃণমূল।”
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, “ভাতের হাঁড়িতে আঘাত আমরা পছন্দ করি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
|
—নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|