|
|
|
|
www.সাবধান.com |
হ্যাকারদের রাজত্বে কম্পিউটারের পাতায় পাতায় মৃত্যু ফাঁদ। বাঁচবেন কী করে? জানাচ্ছেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
অনেক ক্ষণ ফোনে কোনও ফেসবুক নোটিফিকেশন আসেনি। পকেট থেকে তাই মোবাইলটা বের করেছিলেন অয়ন রায় চৌধুরী। পেশায় সফটওয়্যার সিকিওরিটি অ্যানালিস্ট। রিফ্রেশ করতেই দে খলেন আর ‘সিঙ্ক’ করছে না ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। কম্পিউটারে ফেসবুক খোলার চেষ্টা করলেন। না সেখানেও ম্যাচ করছে না ইউজার নেম-পাসওয়ার্ড। রিসেট করলেন পাসওয়ার্ড। চালু হল ফেসবুক।
সে দিনের পর থেকেই লক্ষ করলেন ওয়ালে নানা লেখা জমা হচ্ছে, তাঁর অজান্তেই। এমনকী তাঁর প্রোফাইল থেকে বন্ধুদের বিভিন্ন লিঙ্কও পাঠানো হচ্ছে। বুঝতে পারলেন প্রতিদিন ছ’লাখ ‘হ্যাকড’ হওয়া অ্যাকাউন্টের মধ্যে তাঁর প্রোফাইলও একটি।
গেটে দারোয়ান। দরজায় অ্যালয় প্যাডলক। বাড়ি নিরাপদ।
কিন্তু নেটবাসীদের নিরাপত্তা? সেখানে দিন-রাত পাহারা কে দেবে?
অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার, আলফা-নিউমেরিক্যাল পাসওয়ার্ড বিশ্বজোড়া সাইবার জালে এ সব এখন তালপাতার সেপাই।
শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নাকি সরকারেরও নজর। আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিওরিটি এজেন্সির প্রাক্তন টেকনিক্যাল কন্ট্রাক্টর এডওয়ার্ড স্নোডেনের বক্তব্য তো তেমনটাই। |
|
এ স্বাদ ভাগ কোরো না
অয়নের মতো একই সমস্যায় পড়েছিলেন এম ফিল প্রার্থী দেবস্তুতি দাশগুপ্ত। “একদিন দেখি ফেসবুক খুলতে পারছি না। টুইটারও না। কিন্তু অ্যাকাউন্ট থেকে ফ্রেন্ডদের লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু অ্যাকাউন্ট ডিলিটও করতে পারছি না। গত বছর অ্যাস্টন কুচারের এমন হয়েছিল শুনেছিলাম। আমার অ্যাকাউন্টও যে কেউ হ্যাক করবে ভাবিনি,” বললেন তিনি।
কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের মতে এই ‘ভাবতেই না-পারা’ হ্যাকারদের কাজ আরও সহজ করে দিচ্ছে। কলকাতার এক ওয়েব ডেভেলপার সুকান্ত মিত্র জানালেন, “ফেসবুকের মতো সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট হ্যাক হওয়াটা খুব কমন। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার পিছনে রয়েছে লোকেদের ইগনোর্যান্স। ফেসবুকের মূলধন তো সাধারণ জনগণ। বিজ্ঞাপন থেকেই তো আয় হয় তাদের, তা হলে সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হবে না কেন?”
...রবে নীরবে
অনলাইন গোপনীয়তার ক্ষেত্রে আরেক বাধা জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম। জিপিএসের সুবিধা অনেক। কাছাকাছি কোন রেস্তোরাঁয় সেরা অফার আছে, কাছের কোন নাইটক্লাবে প্রিয় ব্যান্ড আসবে এগুলো জানার জন্য চাই শুধু একটা জিপিএস-ওয়ালা স্মার্টফোন। ফোনে তোলা ছবির স্থান-কাল-পাত্র জিও-ট্যাগড করে রেখে দেবে ছবিতে। কিন্তু এখানেই সর্ষের মধ্যে ভূত দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, আপনি যেমন নিজের অবস্থান বা কাছের মেট্রো স্টেশন খুঁজে নিতে পারছেন, তেমনই জিপিএস দিয়ে আপনার ওপরেও তো কেউ নজরদারি চালাতে পারে। ঠিক যেমন দেখানো হয়েছিল ‘ন্যাশনাল সিকিওরিটি’ বা ‘ট্রু লাইজ’ ছবিতে। “অবশ্যই পারে,” বলছিলেন সপ্তর্ষি সেনগুপ্ত, পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র। যোগ করলেন, “কিন্তু লোকের ওপর নজরদারি চালাতে আর জিপিএস বা জিও-ট্যাগের কী দরকার? আমরাই তো সব সময় সারা লোককে সেটা জানিয়ে বেড়াচ্ছি স্টেটাস আপডেট দিয়ে। গোয়া বেড়াতে গিয়ে হোটেলের জানালা দিয়ে তোলা ছবি যদি টুইট করো, তবে জিও ট্যাগের আর কী দরকার। এ তো ডেবিট কার্ড, পিন নম্বর-সহ কারওর হাতে দিয়ে দেওয়া। তাতে যেমন টাকার কোনও সিকিওরিটি থাকে না, টুইটারের ছবির ক্ষেত্রেও তেমন প্রাইভেসির আশা করা হাস্যকর।”
গুগল-প্রুফ
ওয়েব সিকিওরিটির এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে একটা কথা উঠেছে। গুগল-প্রুফ। অর্থাৎ ডবলিউ ডবলিউ ডবলিউ-এর দুনিয়া থেকে নিজের অস্তিত্বটাই লোপাট করে দেওয়া। কাজটা সহজ নয়। কারণ আমাদের অধিকাংশ কাজই তো অনলাইন। ট্যাক্স ফাইল করা থেকে শুরু করে সিনেমার টিকিট সবের জন্যই নেট ভরসা।
অনেকের কাছেই তাই ‘গুগল প্রুফ’ হওয়া, চোরের ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার শামিল। তবু অনেকেই সেটা করেছেন। অভিনেতা সমদর্শী দত্ত জানালেন, “আমার কোনও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। টুইটারে ছিলাম, কিন্তু সেটাও ডিলিট করে দিয়েছি। তবু তো বন্ধুদের কাছে শুনি, আমি নাকি ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ অ্যাকসেপ্ট করিনি!” তবে সবার ক্ষেত্রে কি এমনটা করা সম্ভব? যতই নেট-পৃথিবীতে আপনার প্রতিটি কি-স্ট্রোক মনিটর করা হোক। যতই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হোক আপনার সার্চ হিস্ট্রি। তবু ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবকে ত্যাগ করা মুশকিল। যত দিন না বিকল্প কোনও ব্যবস্থা আসে, প্রতিষেধকের ওপর ভরসা করা ছাড়া কোনও গতি নেই।
|
বাঁচতে |
অচেনা লিঙ্কে ক্লিক নয়
একান্তই লিঙ্কটা দেখতে চাইলে, লিঙ্কের অ্যাড্রেস কপি করে অন্য ব্রাউজারে খুলুন |
এক পাসওয়ার্ড দু’বার নয়
ই মেলের পাসওয়ার্ড কখনওই ফেসবুকের পাসওয়ার্ড করবেন না। তাতে ফেসবুক হ্যাকড হলেও ই মেল বেঁচে যাবে। না হলে দু’টোই একসঙ্গে যাবে |
অবশ্যই অ্যান্টি ম্যালওয়ার
অ্যান্টি ভাইরাস শুধু ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে। কি-লগার বা স্পাইওয়ারের জন্য অ্যান্টি ম্যালওয়ার চাই-ই-চাই |
‘ওয়াইপ ইয়োর ফোন’ চালু করুন
ফাইন্ড মাই আই ফোন, অ্যান্ড্রয়েড লস্ট বা ব্লাকবেরি প্রোটেক্ট-এর মতো সার্ভিস অন করে রাখবেন। ফোন হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলেও আপনার ব্যক্তিগত তথ্য মুছে দিতে পারবেন |
পাবলিক ওয়াই-ফাই-য়ে সাবধান
পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে হলে নিজস্ব এনক্রিপশন সফটওয়ার ব্যবহার করুন
|
ব্যাঙ্কের তথ্য ফোনে নয়
ফোন যতই স্মার্ট হোক না কেন, ফোন থেকে নেট ব্যাঙ্কিং নয়। চুরি গেলে আপনার স্মার্টনেসের ফানুশ কিন্তু ফেঁসে যাবে |
ফেসবুকে শেয়ার নয়
ইন্সটাগ্রাম বা বিটস্ট্রিপের মতো কয়েকটা ফেসবুক অ্যাপস ছাড়া রিকোয়েস্ট না নেওয়াই ভাল |
|
|
|
|
|
|
|