আর ইউ রিল্যাক্সিং? নো, আই অ্যাম মিলখা সিং
ভাগ ফারহান ভাগ

আপনাকে নিয়ে একটা জোক অন্তত চল্লিশ বছর চালু আছে, ‘আর ইউ রিল্যাক্সিং? নো, আই অ্যাম মিলখা সিংহ।’ এখন এতদিন পর সেটা শুনলে কেমন লাগে?
আসলে এই জোকসগুলো তো মানুষই বানায়। চালুও করে। সেটাই বাজারে ঘোরে মুখে মুখে। আমাকে নিয়ে এরকম একটা জোকস তৈরি হয়েছিল বলে আমি গর্বিত। রাষ্ট্রপতি জৈল সিংহকে নিয়েও তো কত জোকস তৈরি হয়েছে। এখন অবশ্য ওই জোকসটা শুনলে খুব মজা হয়। হাসিও পায়।


এখন ‘ফ্লাইং শিখ’
পর্দার ‘মিলখা’ ফারহান আখতারকে আসল মিলখা লন্ডনের সিনেমা হলে বসে দেখেছেন! অনুভূতিটা কেমন?
অসাধারণ। এই অনুভূতিটা ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। নিজের ছোটবেলা, লড়াই করে উঠে আসা...দেশ ভাগের পর দুঃখের স্মৃতি নিয়ে রাতারাতি ভারতে পালিয়ে আসা...রোম অলিম্পিকে পদক হাতছাড়া হওয়ার দৃশ্য...দেখতে দেখতে চোখে জল এসে গিয়েছিল। ফারহান আমাকে কাঁদিয়ে দিয়েছে। ওকে মনে হচ্ছিল আমার ডুপ্লিকেট।

অভিনেতা মিলখা তা হলে আসল মিলখাকে মুগ্ধতায় মুড়ে ফেলেছে বলছেন?
শুনছি ওকে তো বলিউডে এখন সবাই ফারহান আখতারের বদলে মিলখা সিংহ বলেই ডাকছে। ফারহান বহুত আচ্ছা কিয়া। কামাল কর দিয়া। ছোটবেলায় অ্যাথলিট ছিল। আমার কাছে নিয়মিত টিপস নিতে আসত। দিল্লির নেহরু স্টেডিয়ামে গিয়ে ওর দৌড়ের ছন্দ ঠিক করেছি। বালির উপর ট্রেনিং করা থেকে ফিতে ছোঁয়ার আগের মুহূর্তে আমার শরীরটা কী রকম মুভ করত, আমার অনুশীলনের নানা কৌশল সব ওকে শিখিয়েছি।

আপনি দিল্লিতে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ প্রথম দেখেছিলেন। লন্ডনে সেটা আবার দেখলেন। শেষ মূহূর্তে কিছু বদলালেন না কি গল্পে?
দিল্লিতে অসম্পূর্ণ ছবিটা দেখেছিলাম। আসলে সিনেমাটা নিয়ে আমি খুব খুঁতখুঁতে ছিলাম। বারবার ওদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কিছু বিকৃত করা হচ্ছে না তো? সেটা হলে কিন্তু আমি ছবি প্রকাশ করতে দেব না। দিল্লিতে সে জন্যই আমাকে কাঁচা ছবিটা দেখানো হয়েছিল। লন্ডনে পুরো ছবিটা দেখার পর বলতে পারি, আমি তৃপ্ত, মুগ্ধ। পঁচানব্বই শতাংশ আমার জীবনের সঙ্গে হুবহু মিল।

ছবির প্রচারে লন্ডন গেলেন। কিন্তু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে পাকিস্তান তো আপনার ছবি ব্যান করে দিয়েছে? সেখানকার ফয়সলাবাদেই তো আপনার জন্ম? আপনি কিছু শুনেছেন?
কেউ বলছেন ব্যানড্ আছে। কেউ বলছেন উঠে গিয়েছে। পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে ধোঁয়াশা। আমার ছেলে সব ব্যাপার জানে। ছবিতে আমার ছোটবেলার জীবন যন্ত্রণা এমন ভাবে দেখানো হয়েছে যে, মনে হচ্ছে সঠিক জায়গায় ব্যাপারটা পৌঁছেছে। দেশভাগের সময় বাবা-মা-সহ পরিবারের অনেককে হারিয়েছিলাম পাকিস্তানে। কিন্তু এই যে আমাকে লোকে ‘ফ্লাইং শিখ’ বলে ডাকে, সেটা তো পাকিস্তান থেকেই পাওয়া। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানে আমার দৌড় দেখে ওদের তখনকার রাষ্ট্রপতি জেনারেল আয়ুব খান আমাকে প্রথম ‘ফ্লাইং শিখ’ নামে ভূষিত করেন।

আপনার আত্মজীবনী এক টাকায় বিক্রি করেছেন? কিন্তু আপনার কাছে কোটি টাকারও তো প্রস্তাব ছিল এক প্রযোজকের?
কাকে আমার আত্মজীবনী দেবে সেই ব্যাপারটা আমার ছেলে জীব মিলখা দেখেছে। আমি তো ১৯৬০ সালের পর সিনেমা হলেই যাইনি। সিনেমাও দেখিনি। শুনেছি অনেক পরিচালকই এসেছিল। বহু টাকার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু টাকার জন্য তো এই ছবিটা করতে দিইনি। লক্ষ্য অন্য। যাই হোক রাকেশ মেহরার ‘রং দে বসন্তী’ ছবিটা দেখার পর আমার ছেলে সিদ্ধান্ত নিল ওকেই ছবিটা করতে দেবে এবং এক টাকার বিনিময়ে। ওরা আমাকে ১৯৫৮ সালে ছাপা একটা এক টাকার নোট দিয়েছে। নোটটা আমি বড় করে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখেছি বাড়িতে।

হঠাৎ ১৯৫৮-র নোট কেন?
আরে ওই বছরই তো আমি প্রথম কমনওয়েলথ গেমসের সোনাটা পেয়েছিলাম। ভারতের হয়ে অ্যাথলেটিক্সে ওটাই কমনওয়েলথের সোনা। এক টাকায় ছবি বিক্রি করলেও একটা শর্ত দেওয়া আছে ওদের। তা হল, ছবির বিক্রি থেকে পাওয়া লভ্যাংশের দশ বা পনেরো শতাংশ আমার ফাউন্ডেশনে দিতে হবে। ওখানে আমার ছেলেও টাকা দেয়। গরিব মেয়েদের বিয়ে, গরিব ছেলেদের পড়াশুনার জন্য, গরিব অ্যাথলিটদের জন্য কাজ করে আমার ফাউন্ডেশন। আমার সমসাময়িক অ্যাথলিট যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই কষ্টে আছেন। ওঁদের সাহায্য করি।

আপনার বয়স এখন ৭৭। আপনি অ্যাথলিটদের আইকন। পদ্মশ্রী। তবুও ব্যক্তিগত প্রশ্নটা করছি।
আরে করুন, করুন। মিলখা সিংহ সব সময় পজিটিভ।

১৯৬৪: মিলখা সিংহ
১.৮৩ মিটার
দেশভাগের ফলে শৈশব কাটে সামরিক শিবিরে
অনেক রোগা
সামরিক প্রশিক্ষকের কাছে, যিনি বিজ্ঞানসম্মত কোনও পদ্ধতিই জানতেন না
২০১৩: ফারহান ‘সিং’
১.৭৫ মিটার
মুম্বইতে। দিদি জোয়া আখতারের সঙ্গে
অনেক পেশিবহুল
চার সদস্যের দল ১৮ মাস ধরে তাঁকে মিলখা গড়ার প্রশিক্ষণ দেন
শুনছি তখনকার প্রেমিকা পরে স্ত্রী নির্মল কউরকে এড়িয়ে আপনি যে অস্ট্রেলীয় বান্ধবীর সঙ্গে প্রেম করতেন, তা-ও আছে ছবিতে। রয়েছে অনেক উত্তেজক দৃশ্যও। এটা এখন অস্বস্তিতে ফেলছে না?
আমার বৌ ভলিবলে দেশের অধিনায়িকা ছিল। ও খেলার মাঠের সব জানত। ও অবশ্য এখনও ছবিটা দেখেনি। কোমরের হাড় ভেঙেছে বলে হাঁটতে পারছে না। তবে সব মেয়েই চায় তাঁর বর সেলিব্রিটি হোক। সফল ক্রিকেটার, ফুটবলার, অ্যাথলিটদের পিছনে মেয়েরা ঘুরঘুর করে। প্রেম করতে চায়। আমার জীবনেও সেটা এসেছিল। কিন্তু তা যে ‘গলত’ ছিল সেটাই দেখানো হয়েছে ছবিতে। ছবিটা তো ভবিষ্যতের ক্রীড়াবিদদের কথা ভেবে বানানো। যাতে তারা বিচ্যুত না হয় সেটা দেখাতেই ঘটনাটা আনা। (তার পর হেসে) আর ছবির প্রয়োজনে আরও কিছু হয়তো রাখতে হয়েছে।

ছবির মিলখার প্রেমিকার সঙ্গে আপনার যৌবনের প্রেমিকার মিল পাচ্ছিলেন?

(হেসে) কিছু কিছু মিল তো আছেই। তবে ছবিতে ফারহানের প্রেমিকা হিসাবে যে অস্ট্রেলিয়ান মেয়েটি (রেবেকা ব্রিডস) অভিনয় করেছে, সে ভালই করেছে।

আর কাকে কাকে ভাল লাগল? কোনও বিশেষ চরিত্র নিয়ে বলবেন?
সবাই ভাল করেছে। তবে দু’টো চরিত্র খুব টেনেছে আমাকে। জহওরলাল নেহরুর চরিত্রে কাশ্মীরের একজন অভিনেতা, নাম মনে হয় মিঃ পায়েল, দারুণ অভিনয় করেছে। আর আমার কোচ গুরদেব সিংহের চরিত্রে যোগরাজ সিংহ বলে যে কাজ করেছে সে-ও আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি যখন ছোট বেলায় দৌড়তে শুরু করি তখন তো কিছুই জানতাম না। গাঁও কা লড়কা। ক্রস কান্ট্রি, ম্যারাথন, চারশো, আটশোকিছুই জানতাম না। গুরদেব স্যারই আমাকে সব শিখিয়েছেন। আজকের এই যে আমি মিলখা সেটা ওঁর জন্যই। সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন। খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ। দারুণ উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন। ছবিতে ব্যাপারটা দারুণ ফুটিয়ে তুলেছে যোগরাজ সিংহ।

আপনি কি জানেন এই যোগরাজ সিংহ হল ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহের বাবা।
তাই না কি! জানতাম না তো।

খেলোয়াড়দের নিয়ে ছবি কমই হয়। কোনি হয়েছিল বাংলায়। মীররঞ্জন নেগি-কে সামনে রেখে ‘চক দে ইন্ডিয়া’ করেছিলেন শাহরুখ খান। দু’টোই বক্স অফিস হিট। সেই অর্থে ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ খেলার মাঠে প্রথম আত্মজীবনী অবলম্বনে ছবি। লোকে এখন ব্যাকডেটেড মিলখাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাবে?
কী বলছেন? লন্ডনে যা আগ্রহ দেখে এলাম! এখানেও তো যেখানেই যাচ্ছি লোকে জানতে চাইছে কবে ছবিটা রিলিজ করবে। ফোনে পাগল করে দিচ্ছে। আর একটা কথা বলছি। ছবি হিট হল কি না সে তো সময় বলবে। আসলে আমি দু’টো কথা ভেবে ছবিটা করতে বলেছি। এক) পুরানো দিনের ক্রীড়াবিদদের সাফল্যকে নিয়ে কেউ কিছু করে না। সেটা মনে করিয়ে দেওয়া। দুই) ভবিষ্যতে যারা অ্যাথলিট হবে তাদের দেখানো, মিলখা হতে গেলে কী রকম পরিশ্রম করতে হয়।

ভাগ মিলখা ভাগ শব্দ তিনটি আপনার বাবার আপনাকে বলে যাওয়া শেষ লাইন। ছবিটা কি বাবা-মাকেই উৎসর্গ করছেন?
রোম অলিম্পিকের অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হওয়ার চেয়েও বাবা-মার মৃত্যুর স্মৃতি আমাকে বেশি যন্ত্রণা দেয়। উৎসর্গ তো আপেক্ষিক ব্যাপার।

১৯৬০-র রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটারে অল্পের জন্য ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হয়েছিল আপনার। ৫২ বছর পরও কি সেই অপ্রাপ্তির যন্ত্রণাটা রয়েছে।
বেটা, ওই যন্ত্রণা কি কখনও ভোলা যায়। সিনেমায় ওই দৌড়টা দেখার সময় কেঁদে ফেলেছিলাম। আমার জীবদ্দশায় দেখে যেতে চাই যে, আমার না পাওয়ার যন্ত্রণা ভারতীয় কোনও অ্যাথলিট মুছে দিয়েছে পদক জিতে!

‘ভাগ মিলখা ভাগ’: সোনম ও ফারহান

নতুন মিলখা
• ফারহান আখতারের মিলখা-যাত্রা শুরু বান্দ্রার স্কুল মাঠে। প্রশিক্ষণ দেন তাঁর ব্যক্তিগত ট্রেনার এবং স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট সমীর জউরি। স্প্রিন্ট কোচ মেলউইন ক্রাস্টো
• প্রথমে শুরু হয় স্প্রিন্ট ট্রেনিং। যাতে তাঁর দৌড়োনোর পদ্ধতি ‘বায়োমেকানিক্যালি’ সঠিক হয়
• তার পরে আসে প্লায়োমেট্রিক সেশন অর্থাৎ ক্রমাগত একটা বাক্সের ওপর লাফিয়ে ওঠা আর সেখান থেকে নামা। ক্রসফিট আর সার্কিট ট্রেনিংও (যেখানে অনেকগুলো ব্যায়াম বিরামবিহীন করা হয়) শুরু হয়
• ফারহানের ক্ষিপ্রতা ও ধৈর্যশক্তি বাড়ানোর জন্য বক্সিংও শেখানো হয়
• কম বায়ুচাপ, কম অক্সিজেনের পরিবেশে প্রশিক্ষণ করানো হয়
• চারশো মিটার স্প্রিন্টের পরিস্থিতিরও মুখোমুখি হতে হয়েছিল ফারহানকে। ঠিক যেমন দৌড়োনোর শুরুতে গতি বাড়ানো, তার পর সেই গতি ধরে রাখা, তার পর আবার গতি বাড়ানো আর একদম ফিনিশিং পয়েন্টে নিজেকে তিরের গতিতে ছুটিয়ে নিয়ে যাওয়া



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.